ফকির দুদ্দু শাহ্ এর মাজার দর্শন
- ফকির লালন শাইঁজীর ভক্ত ফকির দুদ্দু শাহ্ এর মাজার দর্শন
- অবস্থান: বেলতলা, হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ
ব্রিটিশ আমলের টাইটেল পাস মাওলানা দুদ্দু শাহ্ ফকির লালন সাইঁজীর সাথে ২২ দিন বাহাস করেছেন, বাহাস শেষে ফকির লালন সাইঁজীর কাছে মুরিদ হন। মহাগুরু ফকির লালন সাঁইজীর সরাসরি ভাবশিষ্য বাউল ফকির দুদ্দু সাঁই। সুফি, বাউল, বৈষ্ণব ও আধ্যাত্তধর্ম দর্শনের গুরু শিষ্যের মধ্যে শিষ্য গুরুর জয় কীর্তন করেছেন বিভিন্ন ভাবে। ফকির দুদ্দু সাঁইও তেমনি তাঁর গীতিকায় তিনি মহাগুরু ফকির লালন সাঁই এর সৃষ্ট সঙ্গীত বা বানী গুলোর মর্মার্থ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাউল ফকির দুদ্দু শাহ্ এর এক উক্তি “বাহাস করিতে এসে বয়াত হইনু, আমি অতি অভাজন লালন সাঁই বিনু”। বাউল ফকির দুদ্দু শাহ্ বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুণ্ড উপজেলার বেলতলা গ্রামে ১৮৪১ সালে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম জিন্দার আলী। পিতা-মাতার চার পুত্র সন্তানের মধ্যে বাউল ফকির দুদ্দু সাঁই ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। পাঠশালার অধ্যায়ন শেষে দুদ্দু সাঁই স্থানীয় মৌলবির নিকট আরবি, ফারসি ও সাহিত্য শিক্ষা লাভ করেন।
জানা যায় তিনি হরিপুর নিবাসী ‘মদন দাসের’ নিকট সংস্কৃত ভাষা উত্তম রুপে আয়ত্ত করেছিলেন। বাউল ফকির দুদ্দু সাঁই প্রথম জীবনে মসনবি শরীফ, চৈতন্য ও চরিতামৃত সহ বহু কাব্য গ্রন্থ মুখস্ত করেছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম ছাড়াও বহু ধর্মীয় মত ও পথ আয়ত্ত করেছিলেন যার ফলে সমগ্র ঝিনাইদহ ও তার আশে- পাশে দুদ্দু মাওলানা হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরেছিল।
ফকির লালন সাঁই জীবিত থাকা অবস্থায় ফকির দুদ্দু সাঁইকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ফকিরি ও বাউল পদ প্রচার করার নির্দেশ দেন। বাউল ফকির দুদ্দু সাঁই বহু গান ও পদ রচনা করেছেন তবে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানা যায় নি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ২ শতাদিক গানের সন্ধান পাওয়া যায়।
বাউল সাধকদের জন্য ফকির দুদ্দু সাঁই বাউল তত্ত্বের বিভিন্ন জটিল সমস্যার উপলব্দি করে সমাধান ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। বাউল ফকির দুদ্দু সাঁই ১৯১৯ সালে তাঁর নিজ গ্রামে দেহত্যাগ করেন এবং বেলতলা গ্রামেই তাকে সমাহিত করা হয়। এখানে তার মাজার শরীফ
ফকির দুদ্দু শাহ্’র গান
বাউল বৈষ্ণব ধর্ম এক নহে তো ভাই,
বাউল ধর্মের সঙ্গে বৈথাবের যোগ নাই॥
বিশেষ সম্প্রদায় বৈঞ্চব
পঞ্চতত্বে করে জপতপ
তুনসিমালা অনুষ্ঠান সদাই॥
বাউল মানুষ ভজে
যেখানে নিজ বিরাজে
বস্তর অমৃত মজে নারী সঙ্গ তাই॥
নিত্যামন্দের দুই পুরুষ হয়
বীরভদ্র বীরড়ামনি কয়
দুই জনে দুই মতের গোঁসাই শুনতে পাই॥
দরবেশি বাউলের ক্রিয়া
বীরভদ্র জানে সেই ধারা
ফকির লালন সাঁইর কথায় দুদ্দু জানে তাই॥
– মাজার দর্শন