হোমপেজ জীবনী ও পরিচিতি হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) সম্পর্কে

হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) সম্পর্কে

874
হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ, আনোয়ারা, চট্রগ্রাম।
হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ, আনোয়ারা, চট্রগ্রাম।
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.)।
বিপদে সংকটে ভক্ত জনতার মহান দিশারী
ছৈয়দ মাওলানা মুহাম্মদ আছহাব উদ্দিন।

আল্লাহতায়ালার মনোনীত দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসারে
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.)’র নির্দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম
করে ইসলামের বিজয়কেতন উড়িয়েছেন এবং এদেশে
মজলুম মানবগোষ্ঠীকে ইসলামের শান্তির ছায়াতলে স্থান
দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুলের প্রেমের সুধা পান
করিয়াছেন তৎমধ্যে বার আউলিয়ার অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী
তাজেদারে হাকিকত শাহেন শাহ বেলায়ত মছিহে মিল্লাত
হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) অন্যতম।

বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের এক সময় সহজপথ ছিল সমুদ্র
পথ। এই পথেই সহজে বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে
পড়েছিলেন পীরে-দরবেশ, অলী বজুর্গগণ। তাই সমুদ্র
উপকূলীয় এলাকায় অনেককাল আগে থেকেই ইসলামের
দাওয়াত পৌঁছেছে। এদিক থেকে চট্টগ্রাম এর গুরুত্ব অনেক
আগে থেকে। চট্টগ্রামকে ইসলামের প্রবেশদ্বার ও
ওলী বুজুর্গদের শহর বলা হয়। আরব বিশ্বের সাথে
চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রাক ইসলামিক যুগ থেকে।

এ সম্পর্কের সুবাদে আরব বণিকদের সাথে এদেশে আগমন
ঘটেছে আরব, ইরান, ইরাক, ইয়ামেন, আফগানিস্তান, তুরস্ক
ইত্যাদি দেশ থেকে অনেক পীর আউলিয়া তাঁরাই মূলত
এদেশে ইসলাম প্রচারের মূল মাধ্যম। বাংলাদেশ পৃথিবীর
বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়ার পিছনে একমাত্র অলি
দরবেশগণেরই অবদান অনস্বীকার্য।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

কথিত আছে হযরত বাবা বদর আউলিয়া ও বাবা হযরত শাহ
মোহছেন আউলিয়া (রহ.) একসাথে চট্টগ্রামে আগমন
করেছিলেন। আধ্যাত্মিক রূহানিয়াতের মধ্যে মামা ভাগিনার এক
গভীর সম্পর্ক রয়েছে। রুহানিয়তের সফরে মামা ভাগিনার
সফর সেই আদিকাল থেকে প্রচলিত। হযরত মুসা (আ.) হযরত
খিজির (আ.) এর নিকট তরিকতের সফরে যাওয়ার সময় তার ভাগ্নে
হযরত ইউসা ইবনে নুহ (আ.) ছিলেন। এভাবে রুহানিয়তের ধারা
প্রচলিত রয়েছে।

হযরত বাবা মোহছেন আউলিয়া (রহ.) তাঁর মামা হযরত বদর
আউলিয়া (রহ.)’র পিছনে সাগর পথে রওয়ানা দিয়াছেন। সেই
নদী ও সাগর পথে তাদের বহনকারী কিস্তি বা জাহাজ আর কিছু
নয় বরং তাদের ব্যবহৃত পাথর ছিল যা বর্তমানে তাদের মাজার
শরীফে বিদ্যমান আছে।

মাহাবুবে রব্বানী গাউছে ছমদানি হযরত শাহসূফি ছৈয়দ বাবা
মোহছেন আউলিয়া (রহ.) ৮৮৬ হিজরী ৭২ বাংলা ১৪৬৬ সনে
১২ রবিউল আউয়াল জন্ম গ্রহণ করেন।

চট্টগ্রামে আগমনঃ বাবাজান কেবলা হযরত শাহ মোহছেন
আউলিয়া (রহ.) কখন এবং কিভাবে বাংলাদেশে আগমন করেন তার
ইতিবৃত্ত জানা যায়নি। কিংবদন্তিতে প্রকাশ পায় শত বৎসর পূর্বে
তার শ্রদ্ধেয় মামা হযরত বদর আউলিয়া (রহ.)সহ প্রথম দিল্লিতে
পদার্পণ করেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা
উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরী
গ্রামের শংখ নদীর তীরে আস্তানা স্থাপন করেন।

কোন একদিন এই নিঝুম নির্জন গ্রামের মাঠে এক বোবা
ছেলে গরু ছাগল ছড়াচ্ছিল। বাবাজান কেবলা ঐ ছেলেকে
নিজের হাতে ডাকলেন তার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে
পারে ছেলেটি বোবা। এ অবস্থায় বাবাজান কেবলা ঐ বোবা
ছেলের মুখে তার পবিত্র হাত মোবারক রাখলেন তখন
সাথে সাথে ছেলেটি কথা বলতে আরম্ভ করল। বাজাজান
কেবলা ছেলেটিকে বলল যাও তোমার মাতাপিতাকে ডেকে
নিয়ে আস।

সে তার বাড়িতে গিয়ে সমস্ত ঘটনা তার মাতা-পিতাকে বললে
তখন মাতা-পিতা ও পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই বাবাজান কেবলার
কাছে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং দোয়া প্রার্থনা
করেন। বাবাজান কেবলা ঐস্থানে অবস্থান করার ইচ্ছা প্রকাশ
করলে তখন তারা একখানা ঘর তৈরি করিয়া দেন।

বাবাজান কেবলা দীর্ঘদিন ধরে এবাদত রেয়াজতে মগ্ন ছিলেন এভাবে
ইবাদত করতে করতে অন্তিম সময় ঘনিয়ে এলে ৯৮৫
হিজরী ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সনে তিনি আল্লাহতায়ালার
সান্নিধ্যে স্থায়ীভাবে জান্নাতবাসী হন। ইন্না….রাজেউন।

তিনি যে ঘরে অবস্থান করতেন ঐ হুজরা শরীফে শংখ
নদীর পাড়ে তাকে দাফন করা হয়। এভাবে কয়েক বৎসর
অতিবাহিত হওয়ার পর শংখ নদীর ভাঙনে বাবাজান কেবলার পবিত্র
মাজার শরীফ ভাঙন দেখা দিলে একদিন পটিয়া উপজেলা বড় উঠান
গ্রামের তৎকালীন এক মুসলিম জমিদারকে স্বপ্নে নির্দেশ
দিয়ে বললেন আমার মাজার শংখ নদীর ভাঙনে ভেঙে তুমি
আমার কফিনখানি বটতলী গ্রামে দাফন কর। এ প্রভাবশালী
ব্যক্তি বাবাজানের স্বপ্নের নির্দেশকে গুরুত্ব না দেয়ায়
ক্রমান্বয়ে তার জমিদারীর অবণতি ঘটতে থাকে।

তৎসময়ে বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলা বটতলী গ্রামের
তৎকালীন জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তিকে বাবাজান কেবলা (রহ.)
স্বপ্নে একই নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, তোমরা ঝিওরী
গ্রামের শংখ নদীর পাড়ে আমার কবর ভাঙ্গা অবস্থায়
দেখবে, তার পার্শ্বে একটি পাথরও দেখবে। তোমরা
আমার কফিন ও পাথরখানা নিয়ে বটতলী গ্রামের যেখানে
সুবিশাল একটি বটগাছ এবং উলুবন সমৃদ্ধ জায়গা আছে সে স্থানে
দাফন করবে।

তৎকালীন ঐ জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তি ও গণ্যমান্য
ব্যক্তিরা স্বপ্নের উক্ত আদেশ পেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে
ঝিওরী গ্রামের শংখ নদীর তীরে গিয়ে বাবাজান কেবলার
পবিত্র কফিন মোবারক স-সম্মানে এনে দাফন করেন এবং
তাঁহার ব্যবহৃত পাথরখানা বর্তমান মাজারের বারান্দায় সংরক্ষণ করে
ন। বাবা হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) নিজ জন্মভূমি ত্যাগ
করে আসার সময় একমাত্র কন্যা শাহজাদী নুর জাহান অর্থাৎ
বাবাজান কেবলার ভ্রাতুষ্পুত্র শাহ সেকান্দর (রহ.)কে
ভারতবর্ষের দিল্লির পানি পথে তাঁদেরকে বিবাহ সম্পন্ন করে
সেখানে রেখে বাবাজান কেবলা ভারত থেকে
বাংলাদেশের অভিমুখে রওনা হলেন।

দীর্ঘদিন যাবত বাবাজান কেবলার কোন খবরাখবর না পাওয়ায় আধ্যাত্মিক
যোগাযোগের একমাত্র উপায় কাশফের মাধ্যমে জানতে
পেরে দিল্লি হতে তাঁরা সরাসরি বাংলার ভিমুখে রওনা হয়ে
আনোয়ারা উপজেলার বটতলী গ্রামে এসে বাবাজান
কেবলার পার্শ্বেই তাঁরা বসতি স্থাপন করেন। দরবার
শরীফের সাজ্জাদানসীন হিসেবে সবকিছু দেখাশোনাও
করতে লাগলেন।

এরই মধ্যে তাঁদের ঔরষে তিনজন শাহাজাদা
যথাক্রমে-হযরত শাহ সুফী ছৈয়দ মনছুর (রহ.), হযরত শাহ
সুফী ছৈয়দ কুতব (রহ.) ও হযরত শাহ সুফী ছৈয়দ ইব্রাহিম (রহ.)
জন্মলাভ করেন। বাবাজান কেবলার এই তিন আওলাদের
দৌহিত্রের নামে ১০৭৭ হিজরী সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলায়
গভর্নর বুজুর্গ নবাব ওমেদ খাঁ ১০ দ্রোন জমি দান করে একটি
সনদ প্রদান করেন। যা ঐতিহাসিক নবাবী সনদ নামে পরিচিত।
বর্তমানে ঐ নবাবী সনদখানা দরগাহ পালা কমিটির নিকট সযত্নে
রক্ষিত আছে।

চাটির ঘটনা ঃ চট্টগ্রামের ইতিহাসের সাথে চাটির তৈল দ্বারা
জ্বালানো (প্রদীপ) নানাভাবে জড়িত। চট্টগ্রাম তথা চাটগাঁও
নামটির সাথে চাটির নাম জড়িত। বাবাজান কেবলার দরবার শরীফে
দুটি চাটি প্রজ্জ্বলিত আছে। কথিত আছে যে, বাবাজান কেবলা
দিল্লি হতে তাঁর মামা হযরত বদর আউলিয়া (রহ.)’র সাথে প্রথমে
চট্টগ্রামে আগমন করেন। তখন চট্টগ্রাম জ্বিনপরীদের
আস্তানা ছিল। হযরত বদর শাহ (রহ) ও বাবাজান কেবলা জ্বিন
পরীদের তাড়ানোর লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে
তাঁরা তৈল দ্বারা চাটি জ্বালালো এবং আল্লাহ এই মহান ওলীদের
জ্বালানো চাটির প্রভাবে জ্বিন পরীরা সেস্থান ত্যাগ করতে
বাধ্য হল। তারপর থেকে চট্টগ্রাম আবাদ হতে থাকে।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান চেরাগী পাহাড় নামে যে সুদৃশ্য
স্থাপনা আছে তাহা চেরাগী পাহাড় নামে কালের সাক্ষী
হয়ে আছে।

বাবাজান কেবলার স্মৃতি বিজড়িত ঐ চারটি অদ্যাবধি তাঁর
রওজা শরীফের উত্তর পার্শ্বে জ্বালানো হয়। প্রাচীন
নিয়ম অনুসারে প্রতিদিন সকালে কর্তব্যরত খাদেম সাহেব
উক্ত চাটিগুলো ধৌত করে আধা পোয়া সরিষার তৈল দিয়া রাখেন
এবং মাগরিবের আযানের পূর্বক্ষণে চাটিগুলো জ্বালিয়ে
দেন। সারারাত চাটিগুলি জ্বালানোর পর যৎসামান্য অবশিষ্ট তৈল
থাকে তাহা কর্তব্যরত খাদেমগণ সংগ্রহ করে ভক্তদের
মাঝে দিয়ে থাকেন। ভক্তগণ এই তৈল ব্যবহার করে বিভিন্ন
জটিল ও কঠিন রোগ বালা থেকে আরোগ্য পাওয়ার প্রমাণ
মিলে।

ইসলামী শরীয়তের অনুসরণে মোহছেন আউলিয়া
(রহ.)’র দরবার শরীফের ভূমিকাঃ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে,
বাবা হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) দরবার শরীফে
যাবতীয় কার্যক্রম ইসলামী শরীয়তকে যথাযথ অনুসরণ ও
শ্রদ্ধার মাধ্যমে বর্তমান সময়কালে মানব জবিনের কঠিন
পর্যায়ে ইসলামী শরীয়তকে উপেক্ষা ও অবহেলার দৃষ্টি
দেখা হয়। অথচ আজ থেকে প্রায় পনেরশত বছর পূর্বে
আল্লাহর প্রিয় মাহবুবু (দ.) মানবজাতির সর্বাঙ্গীন উন্নতি
অগ্রগতি কল্যাণ ও শান্তির জন্য ইসলামী শরীয়তের ব্যবস্থা
করেছেন।

সরকারে দোআলম (দ.)’র অনুসরণে ইসলামী
শরীয়তের যে বা যারা যথাযথ অনুসরণ করেছে তারা ইহ ও
পরজগতে মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। এক্ষেত্রে হযরত
শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) এর ওয়ারিশগণ সবসময় সচেতন
থাকেন। যাতে দরবার শরীফে সার্বিক কার্যক্রম
শরীয়তের পরিপন্থী না ঘটে। বাবাজান কেবলার দরবার
শরীফের মূল ফটক দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় বন্ধ
করে দেওয়া হয়। যাতে করে নামাজের মত সর্বোৎকৃষ্ট
ইবাদত নামাজ আদায় করতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

দরবার শরীফে আগত মহিলা ভক্তদের ব্যাপারে পরিচালনা কমিটির
(দরগাহ পালা কমিটির) ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি।
প্রথমে দরগাহ পালা কমিটি সাইনবোর্ড দিয়ে মহিলা
জেয়ারতকারীদের শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী দরবার
শরীফে সাড়ম্বর উপস্থিতি নিরুৎসাহিত করেছেন। এরপরও
আগত মহিলাদের যথাযথ পর্দার ভিতর জেয়রত করার ব্যবস্থা
করেছেন। অনেকে অতি আগ্রহ নিয়ে রওজা শরীফের
সামনে এলেও তাদেরকে বারংবার সতর্ক করা হয়।

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম ঃ

বোবা মেয়ের জবান লাভ ঃ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা
থানার থাইনং গ্রামের জনাব ছারু মিয়ার ৮ বছর বয়সী জুলেখা
নামে একটি জন্ম বোবা মেয়ে ছিল।

অনেক চিকিৎসার পরও কোন প্রকার ফল না পাওয়ায়
অবশেষে তিনি গত ৮ জুন ২০০০ ইং
তারিখে মেয়েকে নিয়ে হযরত শাহ্ ছুফী মোহছেন
আউলিয়া (রহঃ) এর দরবারে আসেন এবং বাবাজানের কাছে
মেয়ের আরোগ্যের জন্য অনেক কান্নাকাটি করে ফরিয়াদ
জানান। বাড়ি যাওয়ার সময় দরবার শরীফের পাথর ধোয়া পানি, চাটির
তৈল ও মাজারের তাবিজ নিয়ে যান ও মান্নত করেন যে, তার
মেয়ে আল্লাহর মহমতে ও বাবাজানের দোয়ায় কথা বলতে
পারলে পরবর্তীতে একটি মুরগী নিয়ে আসবেন।

বাড়িতে যাওয়ার পর মেয়েটিকে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে
দরবারের তাবিজ, পানি ও চাটির তৈল ব্যবহার করতে থাকলে দেখা
যায় মেয়েটি ক্রমান্বয়ে কথা বলতে শুরু করে। গত ২৫ জুন
২০০১ ইং তারিখে মান্নত করা মুরগী ও মেয়েটিসহ জনাব ছারু মিয়া
দরবার শরীফে এসে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন।

বঙ্গোপসাগরে ৭ মাঝিমাল্লাকে কুপিয়ে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা প্রকাশ ঃ
দৈনিক আজাদী পত্রিকায় গত ০৪/০৯/২০০৬ তারিখে
প্রকাশিত বঙ্গোপসাগরে কক্সাবাজার উপকূলের প্রায় ৩০
কিলোমিটার দূরে সাগরের ফাতোয়া নামক স্থানে বাঁশখালীর
একটি ফিশিং বোটের ৭ জন মাঝিমাল্লা সহকর্মীদের হাতে
খুন হবার এক চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। তাদের সহকর্মী
উদ্ধারপ্রাপ্ত জুনু মাঝি এ মর্মান্তিক খবর দিয়েছে। সাতকানিয়ার
মনির মাঝি তার নিজস্ব ৩৯ অশ্বশক্তির ফিশিং বোট “এফবি আল্লাহ
আমার দয়ার সাগর” নিয়ে আরো ১৩ জন মাঝিমাল্লাসহ
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল।

সঙ্গীয় মাঝিমাল্লাদের মাঝে ৬ জন ছিল বরিশাল এলাকার। দীর্ঘ ১ সপ্তাহ
সাগরে মাছ ধরে তাদের কক্সবাজার ফিরে আসার কথা ছিল।
কাঙিক্ষত পরিমাণ অর্থাৎ আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার মাছও ধরেছিল
তারা। কিন্তু পালা অনুসারে বোটের সামনের দিকে ৪ জন
জেলে জাল বুনছিল, ৪ জন ঘুমন্ত এবং ৬ জন জাল ফেলা ও
অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকার সময় হঠাৎ করে বরিশাল এলাকার রবিন,
চানী, রাজ্জাকসহ ৬ জন মাঝি অন্যদের ওপর চড়াও হয়। তারা
বোটের দা ও ধারালো সব জিনিস নিয়ে অন্যদেরকে
কুপিয়ে সাগরে ফেলে দেয়।

সাগরে পড়ার পর যখন বাঁচার
জন্য আকুতি জানাচ্ছিল তখন একে একে সবাইকে তুলে
বোটের বরফ কুটরীতে প্রবেশ করায়। পরে একজন
একজন করে বের করে তাদেরকে আরেক দফা কুপিয়ে হাত
বেঁধে একটু একটু পানি খায়ে আবার সাগরে নিক্ষেপ করে।
এভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকলকে অকূল সাগরে ভাসিয়ে
দিয়ে দুর্বৃত্তরা ফিশিংবোট নিয়ে রওয়ানা হয়ে যায়।

বোটটি সরকারি ঋণে সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল।
বোটের মালিক মনির মাঝি ছাড়াও অন্য যেসব মাঝিকে সাগরে
নিক্ষেপ করা হয়েছে তারা হলো হাবিব, কালাম, একে
ভাণ্ডারী, ফরিদ, ইবনে মিয়া। অপরজনের নাম তার মনে
নেই। তাদের মধ্যে হাবিব ও কালামের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়
এবং ইবনে মিয়া, একে ভাণ্ডারীর বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী
উপজেলায় ও ফরিদের বাড়ি মহেশখালী উপজেলায়।
সাগরে নিক্ষেপিত জেলে মোহাম্মদ নুরুন্নবী ওরফে
জুনু মাঝির বাড়ি বাঁশখালীর খাটখালী এলাকায়।

সে যখন হাত বাঁধা অবস্থায় ডুবে যাচ্ছিল তখন তার মনে পড়ে যায়
তার এলাকার মোহছেন আউলিয়া(রহঃ)’র কথা। সে মান্নত করে যদি হাতে
বাঁধন খুলে বেঁচে যেতে পারে একটি ছাগল নিয়ে সে
মোহছেন আউলিয়া (রহঃ)’র মাজারে গিয়ে শিরনি দেবে। ঠিক
ওই সময় প্রচণ্ড জোরে টান দিলে হাতের বাঁধন খুলে যায়।
এবার সে দু’হাতে ধীরে ধীরে চেষ্টা করে পানিতে
ভেসে থাকতে। এভাবে হাতে, মাথায় ও ঘাড়ে দায়ের
কোপ খেয়েও দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা পানিতে ভেসে বেড়ায়।
পরে কক্সবাজারের একটি ফিশিংবোট তাকে উদ্ধার করে
ফিশারী ঘাটে নিয়ে আসে। জুনু মাঝি জানায় দুর্বৃত্তরা যে
বোট নিয়ে গেছে সে বোটে জ্বালানি তেল আছে াত্র আধা ড্রাম।

ওই পরিমাণ তেল দিয়ে তারা কক্সবাজার,
টেকনাফ কিংবা সেন্টমার্টিন পৌঁছতে পারবে। যেহেতু
কক্সবাজার আসলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে সে জন্য
টেকনাফ উপকূলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান
চালালে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে কক্সবাজার সদর
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। ডাক্তার তাকে আশংকামুক্ত বলে
জানিয়েছে।

বোবার মুখে বুলি ঃ গত ১৯ আগস্ট ২০১০ তারিখে দৈনিক বীর
চট্টগ্রাম মঞ্চে প্রকাশিত বোবার মুখে বুলি ফুটানোর সংবাদ
প্রকাশ পায়। এ শুধু আউলিয়া কেরামের মেহেরবানি ছাড়া কোন
চিকিৎসকের সাধ্য নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তেমনি
এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে আনোয়ারা উপজেলার বটতলী
গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত আধ্যাত্মিক মহান সাধক হযরত শাহ
মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) মাজারে। বাঁশখালী থেকে আগত
এক কিশোরী বোবা জেয়ারতে আসলে তবরুক খাবার পর
আল্লাহু আকবর বলে মুখে বুলি ফুটে সৃষ্টিকর্তার এ অলৌকিক
ঘটনাটি ঘটে। এ সংবাদ পেয়ে মেয়েটিকে এক নজরে
দেখতে দরবারে দূর-দূরান্ত থেকে আগত ও স্থানীয় হাজার
হাজার নারী-পুরুষ ভক্ত আশেকানের ভিড় পরিলক্ষিত হয়।

বিরূপ আচরণের পরিণাম ও ক্ষমা প্রার্থনা ঃ হযরত শাহ মোহছেন
আউলিয়া (রহঃ) এর অধঃস্তন একজন আওলাদের জন্য (অর্থাৎ
বর্তমান ওয়ারিশদের একজন পূর্বপুরুষের জন্য) আনোয়ারা
উপজেলার অন্তর্গত ২নং বারশত ইউনিয়নের পারকি গ্রামের এক
ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তারা
দরবার শরীফের খেদমতে নিয়োজিত ওয়ারিশানদেরকে
তিরস্কার করে বললেন “ঝাড়ণ্ডদারের ছেলেকে তাদের
মেয়ে দেবে না”। এমন অপমানজনক উক্তি করে
প্রস্তাবকারীকে বিদায় করেছে উক্ত ঘটনার ২/১ দিন পর
প্রস্তাবিত মেয়েটি এক রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে
বাইরে বের হলে হঠাৎ একটি বাঘ এসে ঐ মেয়েটিকে
পিঠের উপর তুলে নিয়ে এসে মাজারের বাড়িতে অবস্থিত
প্রস্তাবিত পাত্রটির ঘরের পেছনে ফেলে যায়।

সকালে ঐ বাড়ির লোকেরা দরজা খুলে দেখতে পায় একটি মেয়ে
দরজার সামনে বসা আছে এবং (তারা দেখে বুঝতে পারল যে
মেয়েটির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল সেই মেয়েটি
তাদের ঘরের কাছে। মেয়েটি তারপর ঘটনা খুলে বলল,
এদিকে মেয়েটির পরিবার সবাই তার খুঁজে বের হয়ে
দেখতে পায় যে ছেলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল
মেয়েটি সে ছেলের ঘরেই অবস্থান করছে। তারা
মেয়েটির এখানে (মাজার বাড়িতে) আসার সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে
অবাক হয়ে বাবাজানের দরবারে ক্ষমা চাইলেন এবং সসম্মানে
প্রস্তাবিত ছেলেটির সাথে বিবাহ দিলেন।

উল্লেখ্য যে, বাবাজানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তারা মেয়েটির স্বামীর
পরিবারকে অনেক ধনসম্পদ দান করেন। এমনকি মেয়ের
ব্যবহারের জন্য ২ (দুই) টি পুকুরও খনন করে দিয়েছিলেন, যা
এখনো বিদ্যমান। আল্লাহর অলিদের তিরস্কারকারীদের জন্য
এটি একটি বিরাট শিক্ষাও বটে।

দরবার শরীফের বর্তমান কার্যক্রম ঃ হযরত শাহ মোহছেন
আউলিয়া (রহঃ) দরবার শরীফের যাবতীয় কার্যক্রম বাবাজান
কেবলার মেয়ে সৈয়দা নূর জাহান (রহঃ) এর তিন পুত্র যথাক্রমে
ছৈয়দ শাহ মনছুর, ছৈয়দ কুতুব, ছৈয়দ শাহ ইব্রাহিম (রহঃ)’র
ওয়ারিশগণের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় শুরু থেকে এখনো
চলে আসছে। বাবাজানের ঐ তিনজন দৌহিত্রের প্রচলিত তিনটি
গোত্র হতে তিন জন মতোয়াল্লী নির্বাচিত হয়ে আসেন।

মূলত মতোয়াল্লী সাহেবানরাই দরবার শরীফের
প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ধারাবাহিক সূত্রে
বর্তমানেও তা প্রচলিত আছে। তিন মতোয়াল্লীর
নেতৃত্বে পরিচালিত উক্ত প্রতিষ্ঠানে একজন নির্বাচিত
সেক্রেটারি বা সম্পাদক এবং একজন কোষাধ্যক্ষ আছেন।

ঐতিহ্যবাহী ২২ পালা হতে মতোয়াল্লীগণ কর্তৃক
অনুমোদিত ২২ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে হযরত শাহ
মোহছেন (রহঃ) দরগাহ্ পালা কমিটি গঠিত এবং এই কমিটিই দরবারের
সার্বিক কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।

মোগল আমলে ১০৭৭ হিজরী সালে তৎকালীন চট্টগ্রামের গভর্নর বুজুর্গ
ওমেদখাঁ বাবাজানের ঐ তিনজন ওয়ারিশ শাহ মনছুর, শাহ কুতুব ও
শাহ ইব্রাহিম (রহঃ) এর নামে ১০ দ্রোন জমি দান করে একটি সনদ
প্রদান করেন যা ঐতিহাসিক ‘নবাবী সনদ’ নামে পরিচিত এবং এই
নবাবী সনদটি বর্তমান দরগাহ পালা কমিটির নিকট সযত্নে সংরক্ষিত আছে।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে উক্ত ১০ দ্রোন জমি
বাবাজানের ওয়ারিশগণের অধীনে নাই। আল্লাহ পাক এ মহান
অলির উসিলায় সবার জীবন ধন্য ও সমৃদ্ধ করুন। আমিন!

লেখক: হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (র.) দরবার শরীফের খাদেম।
সূত্র: শাহ্ִ জালালের বাংলাদেশ পীর আউলিয়ার বাংলাদেশ