আধ্যাত্মিক গুরু স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দ একজন মহান দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন, যিনি মানবতার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন। তার এই উক্তিটি মানবতা, ধর্ম এবং মূল্যবোধের ওপর গভীর দৃষ্টি দেয়। উক্তিটি আসলে ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মানবতা ও সামাজিক শান্তির পক্ষে তার ভূমিকা সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।
“মানুষকে হত্যা করে ধর্মকে রক্ষা করার চাইতে, ধর্মকে হত্যা করে মানুষকে রক্ষা করা বেশি পুণ্যের কাজ।” -এই উক্তির মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দ বলতে চেয়েছেন যে, ধর্ম কখনোই মানবতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য হতে পারে না। যদি কোনো ধর্মের নামে অন্যকে হত্যা বা অত্যাচার করা হয়, তাহলে সে ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে সরে আসা হচ্ছে। এর বিপরীতে, মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে যদি ধর্মের কোনো রীতি বা বিশ্বাসে পরিবর্তন আনা হয়, তবে সেটাই প্রকৃত ধর্মনিষ্ঠা।
ধর্মের উদ্দেশ্য মানবকল্যাণ:
স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন যে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য মানবতার সেবা এবং মানুষের আত্মিক উন্নতি। ধর্ম কখনোই সহিংসতা, ঘৃণা বা বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য হওয়া উচিত নয়। ধর্মের মূলনীতি হওয়া উচিত শান্তি, সহানুভূতি, দয়ার প্রকাশ এবং মানবকল্যাণ।
মানব জীবন অপরিহার্য:
এখানে স্বামী বিবেকানন্দ মানব জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। মানুষ জীবিত থাকলে সে ধর্মের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, আর যদি তাকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেই ধর্মের কোনও উদ্দেশ্য থাকে না। ধর্মের নামেই যদি মানুষ মারা হয়, তবে সেটা ধর্মের সঠিক পথে এগোনো নয়, বরং সেটা একটি বিপথগামিতা।
ধর্মের পরিবর্তন ও সামগ্রিক উন্নতি:
উক্তির মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো, সমাজে যা কিছু ভুল বা অপ্রযোজ্য, তা পরিবর্তন করা উচিত। মানবতার পক্ষে যে কোন কাজ করা উচিত, এমনকি সেটা যদি ধর্মীয় রীতির পরিবর্তনও হয়। ধর্মের প্রতি আসল দায়বদ্ধতা হচ্ছে মানুষের কল্যাণ, এবং যদি কোনো ধর্মের মাধ্যমে মানুষের শান্তি, আনন্দ, ও নিরাপত্তা না আসে, তবে সেই ধর্মের মূল্য বা গুরুত্ব শূন্য হয়ে যায়।
ধর্মের আদর্শ এবং সহনশীলতা:
স্বামী বিবেকানন্দের এই দর্শন সহনশীলতা এবং ধর্মীয় আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। ধর্মের নাম ধরে যদি অন্যদের উপরে জবরদস্তি করা হয় বা তাদের উপর অত্যাচার করা হয়, তবে সেটা ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপরীত। বরং, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হল সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা, মানবিকতা বৃদ্ধি করা, এবং সবার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
শেষ কথা:
স্বামী বিবেকানন্দের এই উক্তি আমাদের শেখায় যে, ধর্মের চেয়ে মানবতার গুরুত্ব বেশি। মানুষের জীবন রক্ষা করা, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং সকল মানুষের জন্য কল্যাণকামী হওয়া, এগুলোই আসল ধর্মের পথে চলার পথ। তাই যদি কোনো ধর্ম বা বিশ্বাসের কারণে মানুষের ক্ষতি হয়, তবে সেই ধর্মের মূলনীতি পরিবর্তন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানবকল্যাণ এবং শান্তিই ধর্মের আসল উদ্দেশ্য, এবং তা পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা উচিত।
-ফরহাদ ইবনে রেহান
১৫/০১/২০২৫