হোমপেজ জীবনী ও পরিচিতি ইমাম মালিক ইবনে আনাসের জীবনী।

ইমাম মালিক ইবনে আনাসের জীবনী।

ইমাম মালিক ইবনে আনাসের জীবনী।

কে ছিলেন ইমাম মালিক?

আন্দালুসের বিখ্যাত ইমাম, কাযি ইয়ায, তার তারতিবুল মাদারিক গ্রন্থে আমাদেরকে সংক্ষেপে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ইসলামের প্রাচীন ফিকহি মাযহাব, মদিনাবাসীর মাযহাবের মুখপাত্র, ইমাম মালিক সম্পর্কে। কাযি ইয়ায যা লিখেছেন তার ভাবানুবাদ নিচে দেয়া হল:-

ইমাম মালিকের পিতার নাম আনাস। তার দাদার নাম মালিক। তার দাদার বাবা হলেন আবু আমের আল আসবাহি। তিনি ছিলেন সম্মানিত আনসারি সাহাবি, যিনি রাসুলের সাথে বদরের পর সকল যুদ্ধে শরিক ছিলেন।
ইমাম মালিকের দাদা মালিক ছিলেন উচ্চ পর্যায়ের তাবেয়ীদের একজন। তিনি হযরত ওমর, তালহা, আয়েশা, আবু হুরায়রা, হাসান বিন সাবেতের সাহচর্য পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি এবং আলেমদের একজন। হযরত ওসমান বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হলে রাতের অন্ধকারে তার লাশ যে চারজন কবরে নিয়ে যান, তাদের একজন ছিলেন ইমাম মালিকের দাদা মালিক বিন আবু আমের। তিনি হযরত ওসমানের গোসল ও দাফন-কাফনের আঞ্জাম দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি হযরত তালহার ঘনিষ্ট সহচরদের একজন। হযরত ওসমানের জীবদ্দশায় তিনি তাকে আফ্রিকায় সেনাপতি করে পাঠিয়েছিলেন।

হযরত ওসমানের যুগে মুসহাফ একত্রিত করার কাজে তিনি শরিক ছিলেন। হযরত ওমর বিন আব্দুল আযিযের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্যও ছিলেন ইমাম মালিকের দাদা মালিক বিন আবু আমের। ১১২ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

বিখ্যাত তাবেয়ী মালিক বিন আবু আমেরের চারজন পুত্র ছিল। ইমাম মালিকের পিতা আনাস তাদের একজন। ইমাম মালিক তার পিতার কাছ থেকে বহু হাদিস শিখেছিলেন। হযরত ওমর থেকে গোসল ও পোশাকের হাদিস তিনি তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও তার চাচা আবু সুহাইল ছিলেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস। বুখারিতে ইমাম মালিকের দাদা ও চাচার সূত্রে বহু হাদিস বর্ণিত আছে। এছাড়াও ইমাম মালিকের অপর দুই চাচা হলেন উয়াইস ও রবী। এই চার পুত্রের সবাই তাদের পিতা মালিক বিন আবু আমের থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
ইমাম মালিকের বড় ভাইয়ের নাম ছিল নযর। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত তাবেঈ ইবনে শিহাবের সমবয়স্ক। জ্ঞান গরিমায় তার এতই খ্যাতি ছিল যে, ইমাম মালিককে মানুষ প্রথম দিকে নযরের ভাই বলেই চিনত। ইমাম মালিক ছোটবেলায় কবুতর উড়াতে পছন্দ করতেন, কবুতর নিয়ে খেলায় অনেক সময় দিতেন। একদিন তার পিতা আনাস তাকে ও তার ভাই নযরকে ডেকে আনেন এবং একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করেন। ইমাম মালিক সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও তার ভাই সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিলেন। এতে তার বাবা তাকে বললেন, কবুতর তোমাকে অমনোযোগী বানিয়ে ফেলেছে! এমনই তরবিয়ত ও ইলমি পরিবারে ইমাম মালিকের পরিচর্যা হয়েছিল অল্প বয়স থেকেই।

ইমাম মালিকের দুই পুত্র ছিল ইয়াহিয়া ও মুহাম্মদ। তার এক মেয়ে ছিল – ফাতিমা। তার এই কন্যা ছিলেন তার জ্ঞানের সংরক্ষক। মুয়াত্তা গ্রন্থের হাদিস ও ফিকহ তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি ইমাম মালিকের পাঠদান-কক্ষের পাশে কাজ করতেন। কেউ যদি পাঠে ভুল করত, তিনি দরজায় কড়া নাড়তেন। এতে ইমাম মালিক সচেতন হয়ে যেতেন এবং ভুল ধরিয়ে দিতেন। ইমাম মালিকের ছেলে মুহাম্মদ কিছুটা উচ্ছৃংখল ছিলেন। ইমাম মালিক হাদিস বর্ণনার সময় একবার ছেলে এক হাতে বাজপাখি, জুতা ও এলোমেলো কাপড় নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন। ইমাম মালিক তার ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আদব তো আল্লাহর জন্য। এই দেখো আমার ছেলের অবস্থা। আর এই দেখো আমার মেয়ের।

ইমাম মালিকের মদিনা ও নবিপ্রেম

ইমাম মালিক নবিপ্রেমে এতটাই উন্নত পর্যায়ে ছিলেন যে, তিনি নবির প্রতি ভালোবাসার কারণে মদিনার রাস্তায় জুতা পড়ে হাঁটতেন না। বাহনে চড়তেন না। তিনি বলতেন, কীভাবে আমি সেই মাটির ওপর বাহনে চড়ব, যে মাটিতে নবির দেহ শায়িত আছে? একবার হজের সফর বাদে তিনি নবির শহর মদিনা ছেড়ে কোনদিন বাইরে যান নি। খোদ রাজা-বাদশারা তার সাথে দেখা করার জন্য মদিনায় আসত। হারুনুর রশিদ যখন মদিনায় এলেন, নবির কবর যিয়ারত করার পর ইমাম মালিকের দরবারে আসলেন তার কাছ থেকে মুয়াত্তা শুনতে। হারুনুর রশিদের সাথে সেই মজলিশে উপস্থিত ছিলে ইরাক, শাম, হিজাযের ফুকাহাগণ। হারুনুর রশিদের আগে মদিনায় ইমাম মালিকের যিয়ারতে এসেছিলেন হারুনের দাদা আব্বাসি খলিফা মানসুর। তিনি ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, রওযাতে গিয়ে দোয়া করার সময় আমি কি কাবার দিকে মুখ রাখব নাকি নবির দিকে? ইমাম মালিক উত্তরে বললেন, তুমি কি তোমার নবির দিক থেকে মুখ সরিয়ে নিতে চাও, যিনি রোজ কেয়ামতে তোমার ও তোমার পিতা আদমের ওয়াসিলা হবেন? ইমাম মালিক বলতেন, মদিনা মক্কার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, কারণ মক্কায় কাবা থাকলেও মদিনাতে আছেন হুজুরে আকরাম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম।

ইমাম মালিক ও মদিনার মাযহাব

ড. মুহাম্মদ আল রুকী তার “মালিকি মাযহাব কেন?” বইয়ে বলেন, “ইমাম মালিক তার মাযহাব গ্রহণ করেছেন আহলে মদিনার ফিকহ ও ইলম থেকে যা তারা হাত থেকে হাতে উত্তরাধিকার সুত্রে নবিজি সা. এর কাছ থেকে লাভ করেছেন। তার এই মাযহাব কোন একক ব্যক্তির মাযহাব নয়, কোন একক চিন্তার কাঠামো নয়, কোন একক ধ্যানধারণাগত নয়। বরং এটা গোটা এক অঞ্চলের মাযহাব, যা বহু প্রজন্মের ফসল, বহু জ্ঞানের আসরের ফলাফল, যাতে আসন গ্রহণ করেছিলেন বহু ইমাম, মজবুত ও বিচক্ষণ মনীষীগণ – যাদের মাঝে আছেন রাসুলের শহরে বাসিন্দা সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণ। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এদের সবার ইলম এসে ইমাম মালিকের কাছে ঠাই পেয়েছে। তার মাযহাব মূলত তাদেরই মাযহাব। আর এই কারনেই আবু ইসহাক আল জুবনায়ানি বলেছেন, “এই মাযহাব হল আহলে মদিনার মাযহাব, মালিকের মাযহাব।” এছাড়াও আলী বিন আল মাদীনীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাহাবি যায়দ বিন সাবেতের কাছ থেকে একুশ জন তাবেয়ী ইলম গ্রহণ করেন যারা সকল ক্ষেত্রে তার মত অনুযায়ী বলতেন ও চলতেন। যাদের মাঝে ছিলেন, কাবিসা, খারেজা বিন যায়দ, উবাদুল্লাহ বিন আব্দিল্লাহ বিন উতবা বিন মাসউদ, উরওয়া বিন যুবায়র বিন আওয়াম, আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন আওফ, কাসেম বিন মুহাম্মদ বিন আবু বকর, আবু বকর বিন আব্দুর রহমান, সালেম, সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব, আবান বিন উসমান বিন আফফান, সুলায়মান বিন ইয়াসার। অতঃপর তাদের সবার জ্ঞান গিয়ে তিন ব্যক্তির কাছে পৌঁছে – ইবনে শিহাব, বুকায়র বিন আব্দুল্লাহ বিন আশাজ, আবুয যিয়াদ। আর তাদের সবার ইলম গিয়ে পৌঁছায় মালিক বিন আনাসের কাছে।”
ইমাম যাহাবি সিয়ারু আলামিন নুবালা’তে বলেন, “সর্বাবস্থায়, মালিকই হলেন ফিকহের শেষ গন্তব্য। তার প্রায় সব মতই শক্তিশালী। যদি হিলা-বাহানা বন্ধ করা ও শরিয়তের মাকাসেদ রক্ষা করা ব্যতীত তার অন্য কোন বৈশিষ্ট্য না থাকত, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট হত।”

বিখ্যাত ফকিহ ড. সাঈদ আল কামালীকে জিজ্ঞেস করা হয় ইমাম মালিকের শিক্ষদের সম্পর্কে। তিনি বলেন,
“ইমাম মালিকের বিখ্যাত শায়খদের অন্যতম হলেন ইবনে শিহাব আয যুহরি, ইয়াহিয়া বিন সাইদ আল আনসারি, সফওয়ান বিন সুলাইম এবং রবি’য়াতুর রায়। ইমাম মালিক মূলত মদিনার “সাত ফকিহ” এর ইলমের উত্তরসূরী। এই সাত ফকিহ হচ্ছেন (১) সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব, (২) খলিফা আবু বকরের দৌহিত্র কাসিম বিন মুহাম্মদ, (৩) সাহাবি যায়েদ বিন সাবেতের পুত্র খারিজা, (৪) সাহাবি যুবায়ের বিন আওয়ামের পুত্র উরওয়াহ, (৫) সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন ওমরের পুত্র সালেম, (৬) সাহাবি আব্দুর রহমান বিন আওফের পুত্র আবু সালামা, (৭) সুলায়মান বিন ইয়াসার। আমরা যদিও বলি ইমাম মালিকের মাযহাব, কিন্তু এটা তো তার ব্যাক্তিগত মাযহাব না। মালিকের মাযহাব হল মদিনাবাসীর মাযহাব। এটা হল ফিকহের ক্ষেত্রে মদিনাবাসীর ধারা। এজন্য এক লোক এসে যখন তাকে জিজ্ঞেস করে একটা মাসআলা নিয়ে, আর ইমাম মালিক তাকে উত্তর দেন, সে জিজ্ঞেস করে ওঠে, “আপনাকে এটা কে শিখিয়েছে?” মালিক জবাবে শুধু বললেন, “সারাজীবনে আমি কোন নির্বোধের সাথে কখনো বসি নি।” ইমাম আহমদ ইমাম মালিকের “নির্বোধদের সাথে কখনো বসি নি” উক্তির ব্যাপারে মন্তব্য করেন “এই কথা তিনি ছাড়া আর কারো ব্যাপারে প্রযোজ্য হয় না।” কারণ এটা তো নবীর শহর মদিনা। এখানে নির্বোধ লোকদের জ্ঞানের আসর কীভাবে হবে? ইমাম মালিক একবার এক লোককে বললেন, যখন সে ইমাম মালিকের একটি কথা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল এবং ইমাম মালিকের কাছে তার কথার পক্ষে দলিল তলব করেছিল। মালিক বললেন, “আমি এটা তোমাকে নাফে থেকে বর্ণনা করছি, তিনি এটা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেছেন। তোমার জন্য এখন কেবল আরো উপরে উঠে খোদ আল্লাহর রাসুলকে দেখা বাকি আছে।” ইমাম মালিক এক মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।”

আমলে আহলে মদিনা

মালিকি মাযহাবের ভিত্তি হচ্ছে মদিনাবাসীর ধারাবাহিক আমল যা তারা নবির যুগ থেকে নিয়ে, সাহাবি ও তাবেঈদের যুগ পর্যন্ত করে এসেছেন। কোরআনের পরই মালিকি মাযহাবে মদিনাবাসীর আমলের স্থান। কারণ আল্লাহ হেদায়াত রেখেছেন কোরআন ও সুন্নাতে। আর সুন্নাতকে জানার সবচেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা আমল। মালিকি মাযহাবে মদিনার আমল যেকোন ওয়াহেদ হাদিস থেকে শক্তিশালী। তিনি বলতেন, “হাজার থেকে হাজারে যেই আমল এসেছে, তা আমার কাছ এক থেকে একে আসা হাদিসের চেয়ে প্রিয়।” ইমাম মালিক তার মুয়াত্তা গ্রন্থে অভূতপূর্ব কাজ করেছেন। তিনি বহু একক সূত্রে বর্ণিত খবরে ওয়াহেদ উল্লেখ করতেন, যা মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহিহ। তারপর বলতেন, এই হাদিসের ওপর মদিনাবাসীর আমল নাই। কারণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা আমল হল মুতাওয়াতির পর্যায়ের শক্তিশালী। ওদিকে ওয়াহেদ হাদিস জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে অনেক দূর্বল। সকল উসুলে হাদিসবিদ একমত যে, সহিহ সনদে বর্ণিত হাদিস যদি মুতাওয়াতির না হয়, তবে সেটা অকাট্য দলিল হয় না। কারণ এতে বর্ণনাকারীর ভুল হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অন্যদিকে আমলের মাঝে এই ভুলত্রুটির সম্ভাবনা নেই। কারণ হাদিস হল তত্ত্ব বা থিওরি। আমল হল বাস্তব প্রয়োগ। যার কাছে সরাসরি বাস্তব প্রয়োগের দৃষ্টান্ত আছে, তিনি কেন আমল ছেড়ে হাদিস ধরবেন? ইমাম মালিক ছাড়া আর কোন মাযহাবে এই আমলে আহলে মদিনার সমশ্রেণীর উসুল নেই। কারণ ইমাম মালিকই ছিলেন একমাত্র ইমাম যার জন্ম সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈর পরিবারে। যিনি বেড়ে উঠেছেন সাহাবিদের দৌহিত্রদের আমল দেখে। বিশুদ্ধ ও নির্মল এই জ্ঞানের পরিবেশ আর ইসলামের ইতিহাসে আর কোথাও ছিল না। আর এই কারণেই ইমাম মালিক মদিনা ছেড়ে আর কারো কাছে ইলম শিখতে যান নি। বরং অন্যরাই মদিনাতে ইমাম মালিকের কাছে জ্ঞান শিখতে আসতেন।

ইমাম মালিক ছিলেন আল্লাহর রাসুলের করে যাওয়া এক ভবিষ্যদ্বানীর বাস্তব প্রতিফলন, যা বর্ণনা করেছেন সাহাবি আবু মুসা আশআরি, আবু হুরায়রা, জাবের বিন আব্দুল্লাহ। নবিজি বলেছেন, “শীঘ্রই মানুষ উটের পিঠে চড়ে জ্ঞানের সন্ধানে বের হবে, তারা সে সময় এমন মদিনার আলেম থেকে অধিক জ্ঞানী কাউকে খুঁজে পাবে না।” নবিজির এই বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বানী নিয়ে সবার মাঝেই জল্পনা কল্পনা ছিল, কে এই আলেম? কে এই ব্যাক্তি যার সুসংবাদ নবি দিয়ে গিয়েছেন। বিখ্যাত তাবে তাবেঈ সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, আমি প্রথমে ভাবতাম এটা হলেন সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব, কিন্তু দেখলাম তার যুগে সালেম এবং সুলায়মানের মত ব্যাক্তিরাও আছেন। এখন আমি বলি, এই হাদিসের উদ্দীষ্ট আলেম হলেন মালিক বিন আনাস। তিনি দীর্ঘদিন (৬০ বছরের অধিক সময়) মদিনায় ইলম বিতরণ করেছেন, কিন্তু তার সমকক্ষ আর কেউ তৈরি হয় নি। সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ থেকে এই উক্তি তার বিখ্যাত সকল ছাত্র উদ্ধৃত করেছেন — ইবনুল মাহদি, আলী বিন মাদিনি, যুবায়ের বিন বাক্কার, ইসহাক বিন আবি ইসরাইল, ইয়াহিয়া বিন মাঈন প্রমুখ।

মালিকি মাযহাবের মর্যাদা

ইবনে তায়মিয়্যাহ তার ‘মদিনার মাযহাবের বিশুদ্ধতা’ নামক রিসালাতে বলেন:- “আহলে মদিনার মাযহাব হল সেই শহরের মাযহাব যা ছিল সুন্নাতের আবাস, হিজরত ঠিকানা, নুসরতের ভূমি। এই শহরে আল্লাহ ও তার রাসুল ইসলামের বিধান জারি করেছিলেন। এখানেই মুহাজিরগণ আল্লাহ ও রাসুলের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন। এখানেই ছিলেন আনসারগণ যারা ঈমান ও ইসলামের বসতী নির্মাণ করেছে। সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের যুগে মদিনাবাসীর মাযহাব ইসলামের পূর্ব পশ্চিমের অন্য যেকোন শহরের মাযহাবের চেয়ে বিশুদ্ধ – উসুল বা মূলনীতির দিকে থেকেও, ফুরু বা বিধানের দিক থেকেও। আর এই সেই তিন প্রজন্ম যাদের ব্যাপারে নবিজি সহিহ হাদিসে বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। তারপর শ্রেষ্ঠ তারপরের যুগ। তারপর শ্রেষ্ঠ তারপরের যুগ।” এই হাদিসে রাসুল যেই তিন প্রজন্মের প্রশংসা করেছেন সেই যুগে মদিনাবাসীর মাযহাবই ছিল অন্য যেকোন অঞ্চলের মাযহাবের চেয়ে বিশুদ্ধ।

কারণ তারা রাসুলের রেখে যাওয়া চিহ্ন ও নিদর্শন অনুকরণে অন্য যেকোন শহরের মানুষের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। অন্য সকল শহরের মানষ ছিল নবির সুন্নাতের ব্যাপারে ইলমের চেয়ে তাদের নিম্নস্তরের। অন্যান্য শহরের লোকদের মত তারা শাসকদের জারি করা নীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। আর এই কারণেই মুসলিম আলেমদের কেউই মদিনা বাদে অন্য কোন শহরের বাসিন্দাদের ব্যাপারে বলেন নি যে, অমুক শহরের বাসিন্দাদের ঐকমত্য হুজ্জাত। এটা কেবল মদিনাবাসীর ইজমার ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে। মক্কাবাসীর ইজমার ক্ষেত্রে না, শামের ক্ষেত্রে না, ইরাক কিংবা অন্য কোন শহরের অধিবাসীদের ক্ষেত্রেও না।”

ইবনে তায়মিয়্যাহ তার রিসালাতে আরো লিখেছেন:- “মানুষ সবাই ইমাম মালিক ও আহলে মদিনার সঙ্গে আছে – হোক সহমত পোষণকারী কিংবা তার দ্বিমতকারী। যদি সহমত পোষণকারী হয়, তবে সে মালিক ও মদিনার মাযহাবের সমর্থক ও সাহায্যকারী। আর যদি ভিন্নমত পোষণকারী হয়, তবে সেও মালিক ও মদিনাবাসীর প্রতি সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শনকারী, তাদের মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক অবগত। ইলমের ইমামদের মাঝে তুমি কাউকে পাবে না যে মদিনাবাসীর বক্তব্য ও মাযহাবকে খাটো করে দেখে। কারণ তারা প্রত্যেকেই জানেন যে, ইমাম মালিক মদিনাবাসীর মাযহাবের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। আর আম-খাস সকলের কাছেই মদিনাবাসীর মত ও পথ অন্য সকল শহরের ওপর অগ্রগণ্য।”