আধ্যাত্মিক পথে সূফী সাধকদের বাহ্যিকতা
সূফী সাধকরা মনে করেন, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান হলো আধ্যাত্মিক পথের প্রাথমিক ধাপ। এর মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি নিবেদনের সূচনা হয়। কিন্তু আসল লক্ষ্য হলো অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে আল্লাহর সঙ্গে একাত্ম হওয়া। যেমন লালন সাঁই বলেন,
“বাড়ির কাছে আরশিনগর,
সেথা এক পড়শী বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।”
এখানে ‘আরশিনগর’ হলো অন্তরের প্রতীক, আর ‘পড়শী’ হলেন আল্লাহ। লালন সাঁই বোঝাতে চেয়েছেন, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়, বরং অন্তরের গভীরে প্রবেশ করেই আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব।
সূফী দর্শনে আনুগত্যের সেজদা হলো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক। যখন কোনো ব্যক্তি জাগতিক লোভ-লালসা ও অহংকার থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে, তখনই সে আসল সেজদা দেয়। যেমন জালাল উদ্দিন রুমি বলেন,
“তোমার প্রেমে আমি বিলীন হয়েছি,
যেন এক ফোঁটা জল সাগরে মিশে গেছে।”
এখানে ‘প্রেম’ হলো আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রতীক, আর ‘সাগর’ হলো আল্লাহর অনন্ত সত্তা। রুমি বোঝাতে চেয়েছেন, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে একাত্ম হওয়া সম্ভব।
সূফী দর্শনে চিরন্তন সেজদা হলো আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। যখন কোনো ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত থাকে, তখনই সে চিরন্তন সেজদার অধিকারী হয়। যেমন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম বলেন,
“মন মজালে ওরে বাউলা গান,
অন্তরে তোর প্রেম জাগিলে,
পাইবি রে সেই নিরঞ্জন।”
এখানে ‘বাউলা গান’ হলো আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রতীক, আর ‘নিরঞ্জন’ হলেন আল্লাহ। শাহ আব্দুল করিম বোঝাতে চেয়েছেন, অন্তরের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুললেই তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব।
বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়, বরং অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার মাধ্যমেই সত্যিকারের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব। ওলী-আউলিয়া ও সূফী-ফকিরগণ সকলেই অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁদের মতে, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়, বরং অন্তরের গভীরে প্রবেশ করেই আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব।
-ইলমে মারেফত