কবিতা : পাপ
বলতে পার, কে পৃথিবীতে পাপী নয়?
শতভাগ কার জীবন পূণ্যময়?
ভাবো উত্তর, এই ফাঁকে বলি আমি
একটি গল্প— স্বর্ণের চেয়ে দামী।
গল্পটা হল যীশুখ্রিষ্টের, তবে
সব ধর্মের সমান শিক্ষা হবে।
মহামানবের ধর্ম হয় না কোনো—
ভেদাভেদ ভুলে তাঁদের কথাটি শোনো।
তাঁরা বাঁধা নন ধর্মের গণ্ডিতে,
সারা বিশ্বকে এসেছেন মন দিতে।
ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে
এসেছেন তাঁরা সকলের উদ্দেশে।
কিন্তু আমরা সংকীর্ণতা বলে
তাঁদেরকে ভাগ করেছি হাজার দলে।
এভাবে আমরা করেছি নিজের ক্ষতি,
উচ্চে তো নয়, নিম্নে মোদের গতি।
কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু ও মুহাম্মাদ—
সকলের পথ ছিল মানবতাবাদ।
আজকে আমরা সেই পথ হতে সরে
স্বর্গে যাচ্ছি রক্তারক্তি করে॥
একদিন যীশু উপাসনালয়ে আর
ভক্তবৃন্দ ছিল তাঁর চারিধার—
ভক্তদেরকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন,
নানা বিষয়ের দীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পুণ্যাত্মার শিক্ষা আলোর মতো,
অন্ধকারেও জ্বলে যায় অবিরত।
যেখানেই পাবে এই শিক্ষার আলো,
কালবিলম্ব না-করে হৃদয়ে জ্বালো॥
এমন সময় আলেম-সমাজ এল,
উপাসনালয়ে যীশুর দেখাটি পেল,
সঙ্গে এনেছে তারা একজন নারী;
বলল, ”হে যিশু, এই নারী ব্যভিচারী।
ব্যভিচারে ধরা পড়েছে মোদের হাতে,
তাই তো এনেছি এখানে আমরা সাথে।”
ব্যভিচার শুধু লজ্জার হেতু নহে,
এ যেন আগুন, সকলেই এতে দহে।
পুণ্যাত্মারা বলেছেন বার বার,
”সমাজে যখন বেড়ে যায় ব্যভিচার,
তখন ছড়িয়ে যায় দ্রুত মহামারী।
মহামারী মানে এ সমাজ ব্যভিচারী।”
নারীদের দিকে কুদৃষ্টি নিয়ে চায়,
সে-ও দুরাচার, ব্যভিচারী হয়ে যায়।
দূরে থাকো এই জঘন্য পাপ থেকে,
পবিত্র থাকো এই অভিশাপ থেকে॥
আলেম-সমাজ যীশুকে লক্ষ করে
বলল তখন শরিয়ত ধরে ধরে,
”শরিয়ত বলে পাথর ছুঁড়তে, তবু
আপনার কোনো অভিমত আছে, প্রভু?”
মিষ্টি মিষ্টি কথা ছিল শুধু মুখে,
কূটবুদ্ধির ইচ্ছা তাদের বুকে।
ভেবে এসেছিল যিশুকে যেকোনোভাবে
অপমান করে পুনরায় ফিরে যাবে।
সাবধান! যারা পুণ্যাত্মার শানে
প্রচেষ্ট হয় হীনতর অপমানে,
নিজেরাই শেষে অপমান পায় ফিরে,
লজ্জিত হয়ে তারা চলে যায় ফিরে।
গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে হয়,
কখনো প্রকাশ করবে না অবিনয়।
একদিন তুমি গুরুজন হবে আর
সে দিন মিলবে তোমার পুরস্কার॥
মাথা নিচু করে অঙ্গুলি দ্বারা মসী
মাটিতে আঁকতে শুরু করলেন বসি।
একই ব্যাপারে আলেম-সমাজ তাঁকে
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে।
একই প্রশ্ন একাধিকবার করা
প্রকাশ নিজের জ্ঞানহীনতার করা।
মাথা তুলে যীশু সকলকে বললেন,
”তিনিই কেবল প্রস্তর মারবেন,
যিনি কোনো পাপ কখনো করেন নাই—
আমি শুধু এই কথাটি বলতে চাই।”
এই কথা বলে মাথাটি নামিয়ে ফের
লেখালেখি তিনি শুরু করলেন ঢের।
সর্বক্ষণ নতমস্তক থাকো,
নিজেকে সবার চেয়ে তুমি নিচু রাখো।
তাহলে সবার চেয়ে তুমি উঁচু হবে,
সকলের মন অধিকার করে রবে।
কিন্তু যখন কর কথোপকথন,
চোখে চোখ রেখে বলবে কথা তখন॥
যীশু থামলেন তাঁর সেই কথা বলে।
রইল না কেউ, সকলেই গেল চলে
ধর্মনেতারা উপাসনালয় ছাড়ি,
থাকলেন যীশু আর শুধু সেই নারী।
এরপর যীশু চাইলেন চারপাশে,
ধর্মনেতারা কেউ নেই তাঁর পাশে!
সে নারীকে তিনি প্রশ্ন করেন হেসে,
”কোথায় গেলেন ধর্মনেতারা শেষে?
তোমাকে কি তারা শাস্তির উপযুক্ত
মনে না-করেই করে দিল অবমুক্ত?”
নারী বললেন, ”কেহই করেন নাই।”
যিশু বললেন, ”আমিও বলব তাই।
তোমাকে চাই না শাস্তি করতে দান;
যাও, চলে যাও, ছেড়ে যাও এ স্থান,
পাপের মধ্যে কাটিয়ো না এ জীবন।
মঙ্গল তব করুন প্রভু, হে বোন।”
ক্ষমার মতন উত্তম কিছু নেই,
সুন্দর আর উজ্জ্বল ক্ষমাতেই।
ক্ষমার মধ্যে ঐশ্বর্যের ছোঁয়া,
প্রতিহিংসায় নরকের কালো ধোঁয়া।
ক্ষমার মধ্যে জীবনের নির্যাস,
প্রতিহিংসায় থেমে যায় নিঃশ্বাস।
সৌহার্দ্যের পরশ লাগত যদি
বইত না এই ধরায় রক্তনদী।
যার মাঝে পাপ শিরায় শিরায় থাকে,
ধর্মগুরুর মর্যাদা নয় তাকে।
ধর্মগুরুর সম্মান পাবে সেই,
অন্তরে যাঁর পাপের কলুষ নেই॥
লেখাঃ আরাফাত ইমরান।