হোমপেজ আধ্যাত্মিক প্রশ্ন ও উত্তর সাধকের সাধনার স্তর কয়টি ও কি কি?

সাধকের সাধনার স্তর কয়টি ও কি কি?

709

সাধকের সাধনার স্তর কয়টি ও কি কি?

অমৃত জিজ্ঞাসা (পর্ব-০১)

প্রশ্নঃ সাধকের সাধনার স্তর কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ

সাধনার মূল লক্ষ হলো স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির বিলিন হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কর্ম বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানুষ যে বার বার আসা-যাওয়া করতেছে (জন্ম-মৃত্যু) এই আসা যাওয়ার পালা শেষ করে জন্ম-মৃত্যু বারণের মাধ্যনে নির্বান লাভ করে স্রষ্টার সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার জন্যেই সৃষ্টিকে সাধনা করতে হয়। তবে সাধনা করার সুযোগ দেওয়া হয়ছে শুধু মানব ও জ্বীন কূলকে। যেমন আল্লাহ বলেন ‘আমি মানুষ এবং জ্বীনকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’। তাই মানুষকে সাধনা করতে হয়। যে একাগ্র চিত্তে সাধনা করেন তাকেই সাধরন অর্থে সাধক বলা হয়। তবে সাধনায় সিদ্ধি লাভের আগে কেউই প্রকৃত সাধক নয়। সাধকের এই সাধনার সর্ব নিন্ম স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তরের মাঝে চারটি স্তর রয়েছে।

সাধকের সাধনার স্তর চারটি। তা হলঃ

  • ১.ফানা ফিশ শাইখ,
  • ২.ফানা ফির রাসূল,
  • ৩.ফানা ফিল্লাহ্,
  • ৪.বাকা বিল্লাহ্।

সনাতন শাস্ত্রে এই চার স্তর এর নামকরন করা হয়েছে- (১) স্থূল, (২) প্রবর্ত, (৩) সাধক, (৪) সিদ্ধ।

১. ফানা ফিশ শাইখঃ
‘ফানা ফিশ শাইখ’ এর অর্থ হল পীরের মাঝে ফানা বা বিলন হওয়া। অর্থাৎ পীরের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। পীরের ইচ্ছায় ফানা, পীরের হুকুমে ফানা, পীরের জন্য ফানা, পীরের মাঝে ফানা হওয়াকেই ফানা ফিশ শাইখ বলে। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছাকে কুরবানী দেওয়া পীরের জন্য। এটাই সাধনার প্রথম স্তর।

২. ফানা ফির রাসূলঃ
ইহার অর্থা রাসূলের মাঝে ফানা হওয়া। যখন ফানা ফিশ শাইখ এর স্তর পারি দিবে, তখন আপন পীরের ছুরতে রাসূলের নূরানী মূর্তি দেখতে পাবে। যে চেহারা এতো সুন্দর ও নূরময় হবে যে, মনে হবে লক্ষ কোটি নক্ষত্রের আলো তার পীরের মাঝ হতে বিচ্ছুরিত করতেছে সমস্ত দুনিয়াকে আলোকিত করে দিয়ে। ঐ নূরের আলোতে তখন ভক্তের দেহের সমস্ত মোকাম ও মঞ্জিল রাসূলের নূরে নূরাম্বীত হয়ে যাবে।

যে রূপের বর্নণা দিতে গিয়েই বিশ্ব জালাল কবি বলেছেন-

“দেখলে ছবি পাগল হবি
ঘরে রইতে পারবি না
এই চৌদ্দ ভুবনে আমার
মুর্শিদ মাওলানা
সেদিন আরশ কুরসি সাগর পাহার
কিছু দেখার বাকি থাকবে না।”

এই স্তরে আসার পরই সাধক ওলীর দরজায় পৌঁছে যাবে। তখন সে ভাবে বিভুর হয়ে মুখ দিয়ে যদি কিছু বলে, তবে তা হয়ে যাবে, কিন্তু সর্ববস্থায় হবে না। তবে তখন থেকেই তাকে ওলী হিসেবে গণ্য করা হয়।

৩. ফানা ফিল্লাহ্ঃ
ইহার অর্থ আল্লাহর মাঝে বিলিন বা ফানা হওয়া, আল্লাহতে মিশে যাওয়া। ফানা ফির রাসূল এর স্তর পার হওয়ার পরই সাধক এই স্তরে উপনিত হন। তখন তিনি কামেল ওলী হয়ে যান। তবে পূর্ন কামেলে মোকাম্মেল হন না। তাই তাদের আবারও জন্ম নিতে হয় পূর্ণতা লাভের জন্য। আর এসমস্ত ওলীগনই পরবর্তী জন্মে জন্মগত ভাবে মাদারজাত ওলী হয়ে জন্মগ্রহন করেন। তারা যখন কিছু বলে, তখন তা হয়ে যায়। এই স্তরেই সাধক পীরের রূপে আল্লাহকে দেখতে পায়।

তাই লালন সাঁইজি বলেছেন-

“যে মুর্শিদ সেই ত রাসূল
ইহাতে নাই কোনো ভূল
খোদাও সে হয়,
লালন বলে না একথা
কোরআনে কয়।”

৪. বাকা বিল্লাহ্ঃ
ইহার অর্থ আল্লাহতে স্থায়ী ভাবে মিশে যাওয়া। এই স্তরেই সাধকের জন্ম-মৃত্যু বাড়ণ হয় এবং সে নির্বাণ লাভ করে। এই স্তরের ওলীদেরই কামেলে মোকাম্মেল বলা হয়। অর্থাৎ তারা স্থায়ী ভাবেই আল্লাহর সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। তখন তারা মুখে যখন যে অবস্থায় যা বলে, তাই হয়ে যায়। তখন তাদের মুখ আল্লাহর মুখ হয়ে যায়। তারা আল্লাহময় হয়ে যায়। এসমস্ত ওলীগনকেই গাউস কুতুব বলা হয়। ইনারা জন্মগত ভাবেই মাদার জাত ওলী হয়ে থাকেন। এই স্তরে গিয়েই মনসুর হেল্লাজ (রাঃ) বলেছিলেন “আনা আল হক্ব (আমিই সত্য বা আমিই খোদা)”, বায়জীদ বোস্তামী (রাঃ) বলেছিলেন ‘বিশ্বের সমস্ত গৌরব আমারই”।

তবে আমাদের কারো জন্যেই উচিত হবে না ওলীদের মাঝে পার্থক্য করা। অর্থাৎ আমাদের বলা উচিত হবে না যে অমুকের চেয়ে অমুক বড় ওলী, অমুকের চেয়ে অমুক নিম্ন স্তরের ওলী ইত্যাদি। কারন ওলীদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত নই।

বিঃদ্রঃ “অমৃত জিজ্ঞাসা” পর্ব চলতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন আমার নিকট আমার আশেকান ভাই-বোনদের মনে সত্য জানার আগ্রহ থেকে মনে প্রশ্ন জাগবে। প্রতি পর্বেই আপনারা নতুন নতুন প্রশ্ন করতে পারবেন। তবে অবশ্যই ভাল প্রশ্ন করবেন আত্মজ্ঞান লাভের জন্য ও আত্মশুদ্ধির জন্য, আপনার প্রশ্নগুলো যেন পালা গানের বয়াতীদের মত না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রাখবেন।

এই পর্বের প্রশ্নটি করেছিলেন শ্রদ্ধীয় Fakir Jahangir Shah ভাই। এই আশেকান ভাইয়ের প্রশ্ন দিয়েই আমার ‘অমৃত জিজ্ঞাসা’ পর্বের আরম্ভ করলাম দয়াল স্মরণে। সবাই দুয়া করবেন যেন আমি অলসতা ত্যাগ করে সবার জানার আগ্রহকে মিটাতে পারি ও দয়ালের পথে অগ্রসর হতে সবাইকে সাহায্য করতে পারি ও সবার আশীর্বাদে আমিও যেন অগ্রসর হতে পারি সাধন পথে।

লেখাঃ DM Rahat

» অমৃত জিজ্ঞাসা (সবগুলো পর্ব)