খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) প্রেম বা ইশক সম্পর্কে ঘোষণা করেন, “আল্লাহর জন্যে বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্যে প্রেম কর। আল্লাহর প্রতি প্রেম ও আল্লাহর মারেফাত হাসিল হলে লোক সমাজে জীবনযাপন করতে হৃদয় সংকুচিত হয়ে থাকে, অর্থাৎ অন্তরে পরহেজগারি পয়দা হয়।
সুফিবাদের সার হচ্ছে প্রেম বা এশক। প্রেমই ঈমানের ভিত্তি। এই প্রেমের পরম উপলব্ধি এবং আবির্ভাবের মাধ্যমেই এলমে লাদুন্নীর জৌতির উদয় হয়।
ঈমানের এই জৌতি যাঁদের অন্তরে নেই তাঁরা আল্লাহ সম্বন্ধে গাফেল এবং ধর্ম সম্বন্ধে অন্ধ।
এই প্রেমিক কে খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) লাভ করেছিলেন তাঁর আপন মুর্শিদের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসার মাধ্যমে। কারণ, তাঁর মুর্শিদের প্রেমই একসময় তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
রাসূল (সাঃ) ও আল্লাহর প্রেমের মহা আনন্দময়
সীমাহীন রাজ্যে। তাই সাধকগণ বলেন, তাসাউফ শিক্ষার মূলকথা হচ্ছে প্রেম। এই প্রেমের মাধ্যমেই তাসাউফকে জানতে হয়, বুঝতে হয় ও অপরকে বুঝাতে হয়।
শাহসুফি খাজা এনায়েতপুরীর (রঃ) তাসাউফ শিক্ষার মূল লক্ষ ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দীদার লাভ করা। তাঁর সর্বাগ্রে প্রয়োজন নবী-প্রেমকে সাধকের হৃদয়ে চূড়ান্তভাবে ধারণ করা।
তিনি তাঁর মুরিদের অন্তরে যেপ্রেমকে জারী করে দিয়ে গেছেন তা হলো মূলতঃ
খোদা-প্রেমের একটি বিশেষ অধ্যায়, যা মুর্শিদ-প্রেম
বলে চিহ্নিত। এই মুর্শিদ প্রেমই ধীরে ধীরে একজন
আশেককে/সালেককে রাসূল-প্রেম ও খোদা-প্রেমের
অতল সমুদ্রে প্রবেশ করিয়ে তাঁকে প্রেম রাজ্যের
বাদশায় রূপান্তরিত করে।
আশেক-মাশুকের সম্পর্কটি যে কত গভীর এবং
তাৎপর্যমন্ডিত তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। এই
অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের গভীরে রয়েছে নিঃশর্ত এক খাঁটি প্রেম, যে প্রেম হচ্ছে এই জগত সৃষ্টির মূল কারণ।
আল্লাহপাক তাঁর সৃষ্টিকুলকে টিকিয়ে রেখেছেন এই
প্রেমের বন্ধনেই। আর সৃষ্টিকুল আল্লাহপাকের
সেই মহাপবিত্র বেমেছাল প্রেমকে হৃদয়ে ধারণ করে
আছে আমাদের প্রিয় নবী হুজুর (সাঃ) এর প্রতি
ঈমানকে মজবুতভাবে প্রেমের রঙ্গে রঞ্জিত করে
নিঃশর্ত ভালোবাসার বিনিময়ে।
আর এই নবী প্রেমকে হাসিলের জন্যে জ্বীন ইনসানেরা ওলী/মুর্শিদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। তাই খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) ফরমান, “রাসূল (সাঃ)-এর মহব্বত মুমিন ও পুরা মুসলমানদের ঈমান।
যাঁর দেলে যত রাসূল (সাঃ)-র মহব্বত আছে, তাঁর ততটুকু ঈমান আছে, সে খোদাপাককে ততটুকু বিশ্বাস করে।”
খোদাকে পেতে হলে রাসূল (সাঃ) কে পেতে হবে, আর রাসূলকে পেতে হলে মুর্শিদকে পেতে হবে। এ এক অটুট প্রেমের বন্ধন। আল্লাহ মানুষকে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন।
পিতামাতা তাদেরকে যত না ভালোবাসে তার চেয়েও বেশি আল্লাহপাক মানুষদেরকে ভালোবাসেন। তাই মানুষের কর্তব্য হলো এই নিঃস্বার্থ প্রেমের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহপাককে ভালোবাসা।
ঠিক একইভাবে মানুষের অন্তরে নবী প্রেমকে জাগ্রত
রাখা। এই প্রেমের পরিধি সম্পর্কে হযরত আনাস হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ” লা ইউমিনু আহাদুকুম হাত্তা আকুনা আহাব্বা ইলাইহি মিন অয়ালিদিহি ওয়ান্নাসে আজমাইন।”
অর্থাৎঃ তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন নয় যতক্ষণ পর্যন্ত আমি রাসুল (সাঃ) তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি তথা সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। আল্লাহকে পেতে হলে রাসূল (সাঃ) কে অধিক মহব্বত করতে হবে। এর নাম সুলুক।
সূএঃ “বাংলাদেশে সুফিবাদ” গ্রন্থ পৃষ্ঠা নং- (১৮০-১৮১/১৮২)।