সুফি সংগীতের গুরুত্ব

সুফি সংগীতের গুরুত্ব

আল্লাহপাক শিল্পী, তিনি শিল্পীদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ স্বয়ং কবি, তাই কবিগণ আল্লাহর শিষ্য, যে অন্তর সংগীত শ্রবণ করে না, সে অন্তর মৃত, সংগীত হল অন্তরের মাধুর্য, মানব আত্মার খোরাক হল সংগীত। দেহের খোরাক যেমন খাবার, তেমনি অন্তরের খোরাক হল সংগীত। সামা – কাওয়ালী সংগীত মানুষের অন্তরের সৌন্দর্যকে উৎফুল্ল করে তুলে, সংগীতের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াকে ভুলে থাকে। মানুষের মূহুর্তের মধ্যে হাল পরিবর্তন করতে পারে সংগীত।

দুনিয়া থেকে পৃথক থাকার সহজলভ্য মাধ্যম হলো সংগীত চর্চার। দরবারি সংগীত হলো ইসলামি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের একটি রেওয়াজ। সুফি, সাধক – পাগল – মস্তানগণ তারা তাদের আরাধ্যকে সংগীতের মাধ্যমে আহ্বান করেন। প্রভুর নৈকট্য অর্জনের সহজতম মাধ্যম হলো সংগীত। এই সংগীত মানব মনে তীর্যকতা সৃষ্টি করে, অনুরাগ ও অনুকম্পা জাগিয়ে তুলে। আবহমান কাল থেকে নবি, রসুল, অবতার ও আউলিয়াগণ তাঁরা সংগীতের মাধ্যমে মাস্তির হালে থাকতেন এবং সংগীতের তালে তালে প্রভুর জিকির করতেন।

রাগের মাধুরীতে মৃন্ময়ী ভাব ধরে, তন্ময় হালে থাকতেন। মুর্শিদি গান, মারফতি গান, গজল, নাতে রসুল, হামদ, কাওয়ালী, রাগ-রাগনী ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আল্লাহ, রাসুল ও সুফি দরবেশের জীবন দর্শন শোনে মাস্তির হালে নৃত্য করে থাকেন। আল্লাহকে লাভ করার সহজতম উপায় হলো সংগীত। সাধক যখন সংগীতের হালে নৃত্য করে তখন আল্লাহর জালুয়া ও নূর বিকশিত হয়। আশেক মাশুক ধ্যানে গালবাতের হালে নৃত্য করে, সাধক সংগীতের তাল, লয় ও যন্ত্রের ঐক্যতানে মহা আনন্দযোগে মাশুকের প্রেমে নিমজ্জিত থাকে। উধারা, মুদারা, দুতারা এসব তালে আশেক তাঁর প্রেয়সীর ধ্যানে দুলে। পবিত্র অন্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে সংগীত ও শিল্পকলা। এই সংগীত মানব সত্তার অন্তর ভূমিকে নানান অনুরাগে সিক্ত করে, আধ্যাত্মিক আকর্ষণ সৃষ্টি করে, ঐশ্বী অনুভূতিতে জজবার হাল সৃষ্টি হয়। তাই সাধকগণ সংগীতকে ইবাদতের অংশ হিসাবে আদর করেন।

আল কোরান সংগীত সম্পর্কে কিছু বলে নাই। আল কোরান অসার কথা শ্রবণ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু মুর্শিদি কালাম, মারফতি কালাম, সুফিয়ানা কালাম, ইরফানি কালাম, আরিফানা কালাম, আশেকি কালাম ইত্যাদি ভক্তিমূলক গান তথা কালামের বিশেষ অর্থ রয়েছে। এ সকল কালাম কোরান ও হাদিসের নির্যাস, সকল এলমের সর্দার হলো সংগীত শিল্প। পবিত্র অন্তর ব্যতীত সংগীত শ্রবণ করতে পারে না, যারা সংগীত শ্রবণ করে তাঁদের হৃদয় কোমল থাকে, তাঁরা উদারমনা থাকে, তাঁরা মানবিক মূল্যবোধন সম্পন্ন, রুচিশীল, প্রগতি সম্পন্ন ও সংস্কৃতি মনা।

সংগীত প্রেমিকরা স্বভাবত প্রকৃতি প্রেমিক, জীবের প্রতি দয়ালু, সৃজনশীল, অন্তমূখী, নির্জনতা প্রিয়, স্বপ্নচারী ও হাস্যরসিক, যে কোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে তারা পারে।

যে সংগীতের আল্লাহ এবং রসুলের প্রতি প্রেমাকার্ষণ বৃদ্ধি পায়, সেই সংগীত শত ফরজ ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে সুফিরা মনে করে, সুফিরা কাষ্ঠ ধর্মের বিশ্বাসী নয়, সুফি সাধকগণ প্রভুর আরাধনা করেন রসে, বসে ও আনন্দে। ঈশ্বর সত্য, সুন্দর, নির্মল ও পবিত্র। তাই সৌন্দর্যপূজারীরা ঈশ্বরকে আনন্দের সহিত সুর, ছন্দে, রাগ রাগীনীর তালে তাঁর গুণ কীর্তন করে থাকেন। আর যে সংগীত মানুষের জৈবিক কামুক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দেয়, তা না শ্রবণ না করাই শ্রেয়। যা হৃদয়ে প্রশান্তি বৃদ্ধি করে, তা শ্রবণ করা ইবাদত। আত্মার খোরাক হলো সুর এবং সংগীত।

দরবারি লোকেরা সংগীতকে ইবাদতের অংশ হিসাবে মনে প্রানে মনন করেন। তারা তাদের অন্তরের আবেগ অনুভূতি সুর, তাল ও লয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। দরবারি সংগীত রচিত হয় সুপারসেক্স উপলব্ধি করার নিমিত্তে, সংগীত আধ্যাত্মিক তথা অতিইন্দ্রিয় অনুভূতি তৈরি করে।

যেমন: ভান্ডারী গান, লালন সংগীত, মনোমোহনের ময়লা সংগীত, রবিন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, কীর্তন, বাউল গান, জারি – সারি গান মানুষের আনন্দের খোরাক। হৃদয়ের দুলা, চিত্তবিনোদনের মাধ্যম।

সুতরাং দরবারি ভক্ত, আশেকগণ তাঁরা তাদের পরমাত্মাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে সংগীতের মাধ্যমে প্রার্থনা ও জিকির করার বিশেষ প্রচেষ্টা করে থাকেন। সংগীত শ্রবণের মাধ্যমে মনে ময়লা দূর হয়ে যায়, অন্তরের মধ্যে উদয় হয় শম রসের। সংগীতের সুর অন্তর পরিষ্কারের প্রসাধনী। সংগীত শ্রবণের মাধ্যমে অন্তর থেকে মিথ্যা কামনা ভাসনার কাল্পনিক শেরেকের মূ্র্তিগুলো মিটে যায়। কুফরি এবং শেরেকি ময়লা মন থেকে বের হওয়ার মূখ্যম দাওয়াই হিসাবে সংগীত কাজ করে। সংগীতের মাধ্যমে ধ্যানের জগতে সহজে প্রবেশ করা যায়, নিজের দেহ ও মনকে সহজে শীতল করা যায়, রবের বিশেষ দয়া যার প্রতি তাঁর কন্ঠেই তিনি সুর ঢেলে দেন। সুতরাং বাঙালীদের ঐতিহ্য হলো সংগীত শিল্প ও সাহিত্য।

যে সংগীতে বাঙালীরা প্রাণ ফিরে পায়, তাদের ক্লান্তি লাগব হয়, চৈতন্য জাগ্রত হয়। এই সংগীত শিল্পের মাধ্যমে সুফি সাধকগণ মুক্তির বার্তা প্রচার করেন সুরে, ছন্দে, তালে ও গানের মাধ্যমে। সুফি সাধকের উৎসবের প্রাণ হলো সংগীত শিল্প। নানা কবি, শিল্পী, ভাবুক তাঁরা মানুষের জীবন বোধের নানা প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান দিয়ে থাকেন, সংগীত, শিল্পাকলা ও সাহিত্যের মাধ্যমে।

নিবেদক :
আর এফ রাসেল আহমেদ ওয়ার্সী

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel