গাদিরে খুম দিবস আমার উম্মতের সকল ঈদ দিবস হইতে উত্তম।
রাসুলাল্লাহ (সা.) বলিয়াছেন:
গাদিরে খুম দিবস আমার উম্মতের সকল ঈদ দিবস হইতে উত্তম। এবং উহা সেইদিন যেদিন আল্লাহতায়ালা আমাকে তাঁর (সঙ্গে) সংযোগের নির্দেশ দিলেন আমার ভাই আলী ইবনে আবু তালেবের বংশধরের সহিত-যাহাতে (তাহার) আমার পরে জ্ঞান দান করিতেছে পারেন আমার উম্মতের হেদায়েত লাভের জন্য। এবং উহা সেইদিন যেদিন আল্লাহ আদদ্বীনকে পরিপূর্ণ করিলেন। এবং তাহাদের (অর্থাৎ উপস্থিত উম্মতদের) আত্মসমর্পণের দ্বীনের উপায় আল্লাহ রাজি হইলেন।
সূত্র: (সৈয়দ ইবনে হাসান নফজী এর লিখিত- “গাদিরে খুম” নামক উর্দু পুস্তিকা হইতে উদ্ধৃত। ইহা ফারাত ইবনে ইব্রাহীম কুফির তফসির হইতে তিনি গ্রহণ করিয়াছেন)
ব্যাখ্যা:-
এই হাদীসে রাসুলাল্লাহ সা. ঘোষণা করিতেছেন যে, উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য যত রকমের আনন্দ দিবস রহিয়াছে তাহার মধ্যেই সর্বোত্তম আনন্দ দিবস হইল খুম দিবস। এর কারণ খুম দিবস এমন একটি দিবস, যেদিন আল্লাহতায়ালা রাসুলকে (সা.) নির্দেশ দিলেন যেন রাসুলাল্লাহ (সা.) তাঁহার ভাই আলীর (আ.) বংশধরের সঙ্গে আল্লাহর সংযোগ লাগাইয়া দেন। নবী বিদায় গ্রহণ করিতেছেন, তাই নবীর অবর্তমানে উম্মতগণের হেদায়েতের জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁহার নবীকে নূরে মোহাম্মদীর ধারক এবং বাহক প্রতিনিধি তৈরি করিয়া জাহেরে বাতেনে তাহাদিগকে সেই নূরের অধিকারী করিয়া দেওয়ার নির্দেশ দিতেছেন এবং তাহা দ্বারা তাহাদিগকে আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করিয়া দিতে বলিতেছেন।
নবী বর্তমান থাকতে উম্মতকে জ্ঞানদান করিবার অধিকার কাহারও নাই। তাই তাঁহার জাহেরী অবর্তমানে তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি তৈরি করিয়া উম্মতগণকে জ্ঞানদান করিবার অধিকার আলী (আ.) ও তাঁহার বংশধরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে (এই দিনে) অর্পণ করা হইল। কেহ হয়ত বলিবেন আলী (আ.) সঙ্গে তাঁর বংশধরের কাহারও অভিষেক সেদিন হয় নাই। তাহা হইলে এই হাদীসে বংশধরের কথা উল্লেখিত হয় কেমন করিয়া? এই অভিষেক দ্বারা আলীর (আ.) বংশ হইতে একের পর একজন করিয়া নবীর নায়েব নিয়োগ করিবার অধিকার দেওয়া হইল।।
আল্লাহর দড়ি (হাবলুল্লাহ) প্রলম্বিত করিয়া দেওয়া হইল একের পর একজন করিয়া নায়েবে নবী নিয়োগ করিবার অধিকার দানের মাধ্যমে। এইসব নিয়োগ আল্লাহ এবং তাঁহার রাসুলের (আ.) ইচ্ছাক্রমেই একের পর এক হইতে থাকিল। নবী তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে জাহেরীভাবে বিদ্যমান থাকিলেন। কিন্তু বার জনের পর আল্লাহর এই দড়ি মানুষের অবাধ্যতার জন্য ছিন্ন হইয়া গেল।।
খুম দিবসে উম্মতে মোহাম্মদীর দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করিল, কারণ মোহাম্মদী দ্বীন আলোর দ্বার তথা জ্ঞানের দ্বার খুলিয়া দেওয়া হইল। নবীর এন্তেকালের দ্বারা উহার সমাপ্তি ঘটিল না।
ফলত : রাসুলের (আ.) উম্মতের উপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামত পূর্ণতা প্রাপ্ত হইল। আল্লাহতায়ালা খুমে উপস্থিত ব্যক্তিগণের দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হইলেন-যাহারা সত্যিকার আত্মসমর্পণ করিয়াছিল। অর্থাৎ আত্মসমর্পনের দ্বীনকে যাহারা খুম দিবসে আনুগত্যের দ্বারা গ্রহণ করিল তাহাদের উপায় আল্লাহ রাজি হইলেন।
সূত্রঃ “মাওলার অভিষেক ও ইসলামের মতভেদের কারণ।”, (মাওলা সদর উদ্দিন আহ্মদ চিশতী আঃ)