ইমাম জয়নুল আবেদীন আহলে বাইতের মাঝে প্রজ্জ্বলমান।
ইমাম জয়নুল আবেদীন আস-সাজ্জাদ আলাইহিস সালাম আহলে বাইত আলাইহিমুস সালামের মাঝে প্রজ্জ্বলমান। ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের শাহাদাতের পর থেকে উমাইয়া রাজতন্ত্রের পতন ও আব্বাসী রাজতন্ত্রের উত্থানের পূর্ব মুহূর্তে তিনি ৩৫ বছর তাঁর ইমামতের সময়ে বিভিন্ন বিপ্লবী ও প্রতিরোধি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
সেসময় প্রকৃত ইসলাম ছিল সংকটাপন্ন। যে শাষকরা মুসলমানদের উপর চেপে বসেছিল, তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ইসলামকে বিকৃত করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষ যদি প্রকৃত ইসলামকে পেত, তাহলে উমাইয়া ও আব্বাসীরা নিজেদের অবৈধ শাষণের স্বপক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে পেত না। তাই তারা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার জন্য বাধ্য হয়েছিল ইসলামকে বিকৃত করতে।
ইসলাম আদল তথা ন্যায়ের কথা বলেছে আর তারা ছিল জালেম। ইসলাম আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলেছে আর তারা এর বিপরীতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে অন্যকিছু দাঁড় করিয়েছে। ইসলাম মানুষকে সম্মান করতে বলেছে আর তারা মানুষকে অপমান করেছে। ইসলামী সমাজ পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল ইসলামী বিধান অনুযায়ী কিন্তু তারা নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী সমাজ পরিচালনা করেছে। তারা নিজেদের গদী রক্ষায় ইসলামকে বিকৃতি করেছে। আবার এসবকে বৈধতা দেয়ার জন্য আজকের সৌদি মুফতি আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহর মতো তাদের কাছে দরবারী আলেম-মুফতি ছিল। যারা দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রি করেছিল এবং রাজতন্ত্রের পাশে থেকে এই মূল্যহীন দুনিয়াকে বেছে নিয়েছিল।
আহলে বাইত আলাইহিমুস সালামের অন্য ইমামগণ ইসলামী সমাজে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, ইমাম জয়নুল আবেদীন আলাইহিস সালামও সেই ভূমিকা রেখেছেন। তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে তাঁদের কর্মপদ্ধতিও ছিল ভিন্ন। তিনি ইসলামের সঠিক পরিচিতি তুলে ধরে ফিকহ-আহকাম বর্ণনা, ইসলামকে ভ্রান্তি ও অপব্যখ্যা থেকে রক্ষা করা, ইসলামী ও ঐশী সমাজ গঠন এবং আলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহির ক্ষমতায়নে ভূমিকা রেখেছেন।
ইমাম জয়নুল আবেদীন আলাইহিস সালামের আসল নাম “আলী” কিন্তু তিনি অধিক ইবাদতের কারণে যাইনুল আবেদীন বা ইবাদতকারীদের সৌন্দর্য ও সাজ্জাদ বা অধিক সেজদাকারী উপাধিতে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং জনপ্রিয়তার কারণে উমাইয়া শাষক ওলিদ বিন আব্দুল মালিক বিষ প্রয়োগে ৯৫ হিজরীর ২৫ মহররম তাঁকে শহীদ করে। ইমাম জয়নুল আবেদীন আস-সাজ্জাদ আলাইহিস সালামের প্রতি জানাই শত-সহস্র সালাম এবং সবার প্রতি রইলো শোক-সমবেদনা।
– আবু সালেহ