গুলিস্তান থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল-পর্ব:১২
গুলিস্তান থেকে- বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আমার দেখা ৪০-বছর।
-আব্দুল হান্নান
খোদাপ্রাপ্তি প্লাটফর্ম বিশ্ব জাকের মঞ্জিল। আল্লাহ ও রাসূলে পাক (সাঃ) এর ইহা এক মহা দান। বিশ্ব মানবের জন্য আধ্যাত্মিক শিক্ষাকেন্দ্র।
এখানে মানুষ আসে আত্মোপলব্ধির তাড়নায়, আসে নিজেকে চিনবার জন্য। খোদাতায়ালাকে চিনিতে, জানতে বা বুঝতে। আজ শুধু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্র থেকেই লোক আসে। মানুষ আসে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর মহব্বত অর্জনের জন্য, আসে আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সাঃ) এর শাশ্বত প্রেমের শরাব পানের জন্য। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
“যাহারা জাগতিক সমস্যা লইয়া আসে, সেই সমস্যা সমাধানের উপদেশ দানের মাধ্যমেই আমি তাহাদেরকে আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা দেই, খোদাতায়ালার দিকে পথ দেখাই।” – হযরত শাহ্ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ)
এখানে একটু আলোচনা করি:
ইহা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের শিক্ষাকেন্দ্র, খোদাপ্রাপ্তির প্লাটফর্ম। এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার যে, নিজেকে চিনলে খোদাতায়ালা-কে পাওয়া তার জন্যে সহজ হয়ে যায়। আর কথা হলো আমরা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করি বা আমাদের এ শিক্ষাটা দেয়া হয় কখন?
খেয়াল করে দেখুন, বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ঘন্টা বাজানো হয় রাতের ৩ টায় কেন? ইহা তো ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাকেন্দ্র? ঘন্টা বাজে মন্দিরে, গির্জায় বা স্কুলে তবে এখানে কেন? আপনারা হয়তো বলবেন ঘন্টা নিয়ে কথা কেন! দেখেন ইহা-ই খোদাপ্রাপ্তি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতীক। এখানেই আসল রহস্য বা গোপন ভেদ লুকাইত।
এ বিষয় কেহ আলোচনা করে-নাই তাই ইহা একান্ত-ই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারণ আমি অনেক বছর যাবত এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলাম তাই একদিন আমার আধ্যাত্মিক জ্ঞানের শিক্ষক তিনি সাড়া দেন তাই লেখা। আপনারা কে, কি ভাবে নিবেন তা আমি জানিনা। দেখুন আমাদের দেশের প্রাইমারী স্কুল, হাই স্কুলে ক্লাস শুরু হয় ধরে নেই সকাল ৭ টায় বা ১০ টায়। ৭টা হলে ৭ টা ঘন্টা দিয়ে অনেক গুলি ঘন্টা বাজে তার পর ছাত্র-ছাত্রীরা যে যেখানেই থাক দৌড়ে ক্লাস রুমে চলে আসে ক্লাস শুরু।
প্রাইমারী থেকে হাই স্কুল তারপর কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর পিএইচডি ডিগ্রি নেয়। দেখুন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল শিক্ষাকেন্দ্রে প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর মহব্বত অর্জনের জন্যে খোদাপ্রাপ্তি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত। সকল প্রকার শিক্ষার- শিক্ষক একমাত্র একজনই। তিনি হলেন খাজাবাবা শাহ্ সূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব। তাই দেখবেন প্রাইমারী স্কুলে মত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে রাত ৩ টায় প্রথমে ৩ টা ঘন্টা দেয় পরে অনেক গুলি ঘন্টা দেয় এরপর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হয়।
ছাত্র – ছাত্রীর যার যার মত দৌড়ে চলে যায় অজু করতে। অজু শেষে সবাই আসে শিক্ষালয়ের ক্লাসে বা মসজিদে রাত ৩ টায় তালিম শুরু। তাহাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়-শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাত তথা পূর্ণাংগ ইসলাম সম্পর্কে। দিবা-নিশি ২৪ ঘন্টা চলে এই প্রশিক্ষণ কর্ম চলে। এখানে পীর কেবলা’জান বলেছেন বাবা-রা আপনারা রাতে ১১ টা থেকে ৩ টা পযন্ত একটু বিশ্রাম নিবেন।
তখন খাজাবাবা নিজে রহমতের ডাক দিতেন তার মাঝে মাঝে কথার বাণীতে তিনার মুরীদ সন্তানদেরকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করতেন। এখানে ছাত্র-ছাত্রী বা জাকের ভাই-বোনেরা যে যেমন সত্যের ক্লাস করেন বা কেহ ক্লাস ফাঁকি দেন? যে যেমন শিক্ষা গ্রহণ করেন, সে তেমন শিক্ষিত হন ! তাই পীর কেবলাজান বলতেন বাবা সকল বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আল্লাহ ও রাসূলে পাক (সাঃ) এর মহা দান, বিশ্ব মানবের জন্য খোদাপ্রাপ্তির প্লাটফর্ম, আধ্যাত্মিক শিক্ষাকেন্দ্র।
শিক্ষাকেন্দ্র বলেই, একারণে-ই দরবার শরীফে রাত ৩ টার সময় ঘন্টা বা বেল বাজানো হয়। আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মের সকল জাকের ভাই-বোনেরা দরবার শরীফে রহমতের সময়কে হেলায় ফাঁকি দেবেন না, তাহলে নিজের জীবনকেই ফাঁকি দিলেন? ইহাতে দুইটি লাভ লুকাইত আছে একটি দুনিয়াবি সকল সমস্যার সমাধান অপরটি খোদপ্রাপ্তি জ্ঞান অর্জন করা।
খাজাবাবা বলতেন প্রথম এ-ই দরবারে আদব রক্ষা করা। তিনি বলতেন, “বেয়াদব- বা নসিব, আদব – আ নসিব।” দেখুন এখন আমরা নিজেদের মধ্যে কি করি, নিজেদের গায়ে নিজেরাই কাদা ছুড়ে মারি একবারও চিন্তা করি না সাধারণ মানুষ কি বলবে ?
এখানে একটু আলোচনা করি:
দেখুন পীর- কেবলাজান আমাদের জন্যে কি কষ্টটা-ই না করে গেছেন। তিনি বলেন, “আজকের এই শান-শওকতময় ও প্রাণমূখর বিশ্ব জাকের মঞ্জিল একদিনে গড়িয়া উঠে নাই। ইহার পিছনে আছে এই মিসকিনের দীর্ঘ ৪৫ বছরের প্রচার জীবন। আছে বিরোধী ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শক্তির মোকাবেলা। ইহা ব্যতীতও আছে আটরশিতে আসিবার পূর্বে পীরের কদমে প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছরের অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা, অনাহার-অনিদ্রা, সুকঠিন ব্রত, অতিশয় শ্রম, চরম দরিদ্রতা ও কঠোর রেয়াযতের পরীক্ষা উত্তরণ।”
‘সুবহান আল্লাহ’ (এর বাংলা অর্থ আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করি)
আমার দেখা ৪০ বছর! খাজাবাবা ফরিদপুরী ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ‘ নিয়ে লেখতে চাই আপনাদের মতামত জানাবেন আশা রাখি।
চলবে……
পরবর্তী পর্বগুলো পড়তে নিচের লিঙ্কে প্রবেশ করুন: