হোমপেজ আহলে বায়াত (পাকপাঞ্জাতন) মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র:

মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র:

মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র:

গাদীর এ খুম নামক স্থানে বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুমে লক্ষাধিক হজ্ব ফেরৎ হাজি সাহাবাগনের সম্মুখে রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর ওফাত পরবর্তী ইমাম বা খলীফা নিযুক্ত করে গেলেন ।

ইমাম আলী (আঃ) এর এই ইমামত বা খেলাফতের পক্ষে বিপক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস মতে ইমাম আলী (আঃ) কে নির্ভর করে মুমিন সাহাবী ও মুনাফিক সাহাবী এবং কাফেরের পরিচয় পাওয়া যাবে।

ইমাম আলী (আঃ) কে কেন্দ্র করে যেমন মুমিনরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে ইমাম আলী (আঃ) এর বিরোধীরাও এক বিশাল ঐক্য গঠন করেছিল। যা ইতিহাসের পাতায় সহীফা মাল’উনা নামে লিপিবদ্ধ আছে। ইমামীয়াদের বিভিন্ন গ্রন্থে সহীফা মাল’উনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সহীফা কোন লিখিত পৃষ্ঠা, পাতা বা বই পুস্তককে বলা হয়ে থাকে। যেমন বিভিন্ন নবী আউলিয়াদের লিখিত সহীফা ছিল। আর মাল’উনা অর্থ হচ্ছে যার উপর লানত বর্ষিত হয়েছে এমন কোন জিনিষ। তাহলে সহীফা মাল’উনা’র অর্থ হচ্ছে অভিশপ্ত একটি লেখা।

আর এটি হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ জন সাহাবীদের চুক্তিপত্র যা গাদীরের ঘটনার পর তৈরী করা হয়েছিল। এরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল যে, কোন অবস্থাতেই হযরত আলী (আঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর শুন্য পদে ইমাম বা খলীফা হতে দেয়া যাবে না। তাই তারা একটি প্রতিজ্ঞাপত্র বা চুক্তিপত্র লিখে মক্কাতে গোপন করে রাখে। আর এ চুক্তিপত্রটি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমরের খেলাফত কালের শেষ সময়ে ফাঁস হয় এবং আহলে সুন্নতের বিভিন্ন গ্রন্থে তার উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র– সুনানে নেসায়ি , ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ৮৮ / মুসতাদরাক , ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ২২৬ / মু’জামুল আওসাত , ৭ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২১৭ / বিহারুল আনওয়ার , ১০ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২৯৭ ।

অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, রাসুল (সাঃ) নিজের জীবনে ইলমে গাইবের মাধ্যমে কিছু লোকের মনের অভ্যন্তরের কথা অন্যদের জন্য কেন বলে যান নি, যাতে পরবর্তীতে কোন দ্বন্দ্ব দেখা না দেয়?

এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পবিত্র কোরানের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুনাফেক লোকদের জন্য উল্লেখ করেছেন-

“তোমাদের চারপাশে বেদুইনদের মাঝে মুনাফিকরা আছে এবং মদীনার শহরবাসীদের মাঝেও (যারা) মুনাফেকিতে ডুবে আছে। তুমি তাদেরকে জান না, আমরা তাদের জানি এবং আমরা তাদের দুইবার শাস্তি দিব, এরপর তাদের পাঠান হবে এক বিরাট শাস্তির দিকে।” (সুরা – তাওবা/ ১০১)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবশ্যই কোন বিশেষ মাসলেহাত বা কল্যানের কারনে এ সকল লোকদের নাম নবী (সাঃ) এর কাছেও প্রকাশ করেন নি। যাহোক, এই ঘটনার ধরাবাহিকতায় ১২ জন সাহাবী ঠিক করলেন যে, তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পথে মহানবী (সাঃ) কে পাহাড়ের চুড়া থেকে বড় বড় পাথরখন্ড উপর থেকে ফেলে দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করে ফেলবেন। এদের মধ্যে পাঁচজন পাথরখন্ড নিয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থান নিয়েছিলেন।

ঘটনার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন —

মহানবী (সাঃ) তায়েফ নামক একটি স্থানে গমন করার জন্য হুনায়েন প্রান্তরে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের শত্রুরা নবী করিম (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে বসে। এ সময় মহানবী (সাঃ) এর অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) কে যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একাকী ঘোরতর বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে পলায়ন করেন। ওনারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পেছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও ওনারা নবীজী (সাঃ) কে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে গেলেন।

মহানবী (সাঃ) এর চরমতম বিপদের সময় হাতে গোনা দুএকজন সাহবাগনকে নিয়ে একমাত্র হযরত আলী (আঃ) তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে দুশমনদের কবল থেকে মহানবী (সাঃ) কে উদ্বার করেন। খুব সংকটের মধ্যে যুদ্বজয় শেষে রাসুল (সাঃ) উটের পিঠে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে রওয়ানা হলেন। ততক্ষনে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে।

বিশ্বস্ত সংগী হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) উটের রশি ধরে টেনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। বড় একটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবার সময় আল্লাহর ফেরেশতা রাসুল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে, কিছুটা সামনে পাহাড়ের উপর শত্রুরা আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে। সন্ধে তখন আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে। সন্ধার হালকা আলোয় কিছুটা অগ্রসর হলে রাসুল (সাঃ) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) পাহাড়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পেলেন।

এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে। বিদ্যুৎের তীব্র ঝলকানীতে রাসুল (সাঃ) খুব পরিস্কার ভাবে পাঁচজনের ঐ দলটিকে চিনে ফেললেন। ঐ পাঁচজন বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে যে, যখনই রাসুল (সাঃ) তাদের আয়েত্বের মধ্যে চলে আসবে তখনই তারা পাথরখন্ডগুলো গড়িয়ে ফেলে দেবে রাসুল (সাঃ) এর উপরে। বিশাল বড় বড় পাথরখন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

বিদ্যুৎের সুতীব্র আলোর ঝলকানীতে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ঐ পাঁচজনের দলটিকে মুহূর্তেই চিনে ফেললেন এবং চীৎকার করে নবীজী (সাঃ) কে বললেন- হুজুর, আমি সবাইকে চিনে ফেলেছি, ওরা হচ্ছে অমুক, অমু , অমুক! রাসুল (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে থামিয়ে দিয়ে বললেন যে, তুমিও চিনেছ, আমিও চিনেছি। থাক আর বলতে হবে না। হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর উচ্চঃস্বরে চীৎকার চেঁচামেচীতে ঐ পাঁচজন খুব দ্রত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পরের দিন ঐ পাঁচ মুনাফিকদের একজন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) কে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে, আমার নাম ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি? জবাবে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) বললেন, নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন। বিফল হয় তিনি সেদিন চলে গেলেন। কয়েকদিন পরে পুনরায় তিনি একই প্রশ্ন করলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর নিকট যে, আমার নামটি ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি?

দ্বিতীয়বারও একই জবাব দিলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) যে, নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন। কিন্ত নাছোরবান্দা হযরত ওমর আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। অধৈর্য হয়ে বেচারা হযরত ওমর বলেই ফেললেন যে, হে আবু হুযাইফা! তুমি বল আর না বল, আমি বিলক্ষন জানি যে, ঐ তালিকায় আমার নামটি আছে। তৃতীয়বার হযরত ওমর নিজে চলে গেলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর বাড়ীতে। বাড়ীতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।

কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবারে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) হযরত ওমর বললেন, তুমি যখন নিজেই জান যে, ঐ তালিকায় তুমি আছ কি নেই! তাহলে কেন অযথা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে আস?

যাইহোক, হযরত হুযাইফা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) এর খুব কাছের একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু পর্যায়ের মুমিন সাহাবা ছিলেন। তিনি বিলক্ষন জানতেন যে, প্রচুর পরিমানে মুনফিকবৃন্দ রাসুল (সাঃ) এর সাথে চলাফেরা করত।
কিন্ত নবী করিম (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে এ কাজের অনুমতি দেননি।

মহানবী (সাঃ) বলেন, আমি এটা চাইনা যে, প্রচার করা হোক যে, মোহাম্মাাদ তার সাহাবীদের হত্যা করেছে।

দ্রষ্টব্য– আল মোহাল্লা, ১১তম খন্ড, পৃষ্ঠা–২২৪।

এরূপ অনেক ঘটনাই ছিল যা ইসলামকে রক্ষার খাতিরে নবী করিম (সাঃ) মুখ বন্ধ করে ছিলেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হননি।

যাইহোক, এটা প্রমাণিত যে, শীয়া ও সুন্নি হাদীস মতে রাসুল (সাঃ) এর আশপাশে বেশ কিছু ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী মোনাফেক সাহাবী ছিল যারা ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারনে সবসময় চেষ্টা করেছে খেলাফত বা ইমামত যেন কোন প্রকারেই হযরত আলী (আঃ) এর হস্তগত না হয়।

কিন্ত সত্য যতই ফূৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সত্য ততই উদ্ভাসিত হয়ে যে–

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন–
“তারা চায় আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে তাদের মুখগুলো দিয়ে, কিন্ত আল্লাহ সংকল্পবদ্ব তাঁর নূর সম্পূর্ন করার, যদিও কাফেররা তার বিরোধী হতে পারে।” (সুরা– তওবা / ৩২)।

সেই সাথে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র বাণী—
“আলী মা’আল হাক্ব ওয়াল হাক্ব মা’আল আলী”।

অর্থ: আলী সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং হক সর্বদা আলীর অনুগামী

প্রচারে: মোঃ আলী হুসাইন