কাহারা আল্লাহর ফকির (পর্ব-২)
”ফকির” শব্দে চারটি আরবি হরফ বা অক্ষর আছে। তাহলো ফে-ক্বাফ-ইয়া-রে। এই চারটি অক্ষরকে বিচার বিশ্লেষণ করে নাম হয়েছে ফকির। সুফি ওলি আউলিয়া ও গবেষকগণ ফকিরের এই চার হরফের অর্থ্ সম্পর্কে এভাবে বলেছেন।
১.
“ফে” অক্ষরে ফানাফিল্লাহ হয়ে যাওয়া। প্রশ্ন হতে পারে-কিভাবে ফানাফিল্লাহ হয়ে যায়? যিনি নিজের দেহ জগতে ভ্রমণ করে আল্লাহতে নিজের অস্তিত্ব বিলিন করে দেন। অর্থাৎ নিজেকে নি:স্পৃহ করে আল্লাহতে মিশে যান। তারা দুনিয়া ও আখেরাত থেকে মুক্ত থাকেন। ফকিরের প্রকৃত অভ্যাস হচ্ছে নিজের পরিচয়ের মধ্যে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা। ফানা প্রাপ্ত ফকিরদের মধ্যে আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত গুপ্ত সংবাদ এবং তার দেহের অভ্যন্তরে আল্লাহময় অবস্থা সম্পর্কে সমাজের সাধারণ মানুষ অবগত নয়। যদিও তিনি সমাজের অন্যান্য সকল মানুষদের সাথে চলাফেরা করেন। এই রকম আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্ত ফকির কোন কোন সময় সাধারণ মানুষ কর্তৃক মনোকষ্ট এবং বিভিন্ন অসুবিধার সন্মুখিন হয়ে থাকেন। তবে এতে তারা কখনও বিচলিত হন না। কারণ তারা জানেন যে, আল্লাহর ফকিরদের জন্য বাহ্যিকভাবে দু:খ-কষ্ট যুগে যুগে এসেছে এবং আসবে ও আসতেই থাকবে। কিন্তু তাদের সার্ব্ক্ষণিক ভাবেই অন্তদৃষ্টি উন্মোচিত থাকে আল্লাহর দর্শ্ন প্রাপ্তির জন্য।
২.
“ক্বাফ” অক্ষরে কেনা বন্দী। ইহা কেনায়াত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কাম,ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য্ এই ষড় রিপু দমন করা, তার সঙ্গে খারাপ প্রবৃত্তি দমনসহ নি:স্পৃহ হয়ে নিজেকে সম্পুর্ণ্ পরিশুদ্ধ করা। আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় সুখ-দু:খকে মেনে নিয়ে রাজি খুশি থাকা। আল্লাহর ইচ্ছাতে এবং তার সন্তষ্টির জন্য সকল কাজে রাজি থাকা এবং সর্বাবস্থায় তার শোকর আদায় করা। আল্লাহর ফকিরদের হৃদ কমলে সর্বত্র এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর তরফ থেকে নূরের জ্যোতি প্রতিবিম্বিত হয়। ধ্যানের মাধ্যমে আল্লাহর গুণাবলী দর্শ্ন হয় এবং ফকিরের অন্ত দৃষ্টি খুলে যায়। ফকিরের দিব্য চক্ষুর সামনে বিশ্ব জগতের সকল কিছুই উন্মোচিত হয় আর কিছুই দৃষ্টির বাহিরে অবিদিত থাকে না। পার্থিব কামনায় ফকির কখনও বশীভূত হন না। তিনি নিজেকে নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকেন। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। শুধু আল্লাহকে নিয়েই ফকির তার জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন।
৩.
“ইয়া” অক্ষরে ইয়াদ করা অর্থাৎ সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকা। এ অবস্থায় ফকিরের ধ্যান-জ্ঞান আল্লাহর প্রেমে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এ প্রেম জগতে প্রেমিক আর প্রেমাস্পদ বা আশেক-মাশুক ছাড়া অন্য কেউ নেই। এখানে প্রেমিক প্রেমাস্পদে বিলিন হয়ে যায়। তখন শুধু প্রেমাস্পদই বিদ্যমান থাকেন।
৪.
“রে” অক্ষরে রেজা বা সন্তষ্টি লাভ করা। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তষ্টিতেই সন্তষ্ট থাকা। যারা এভাবে আল্লাহতে পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে আল্লাহর জাতের মধ্যে বিলিন হয়ে যায়, প্রকৃতপক্ষে তারাই হচ্ছেন আল্লাহর ফকির বা সুফি সাধক তথা আল্লাহর ওলি বা আউলিয়া। আল্লাহ পাকের রহস্যময় গুপ্ত জ্ঞানের সাথে ফকিররা সব সময় সম্পৃক্ত থাকেন। সেই জন্য ফকিরদেরকে আল্লাহর গুপ্ত জ্ঞানের এবং দিব্য শক্তির অধিকারী বলা হয়।
চলবে…
নিবেদক: সবুজ কাদেরী।
লেখার কাজে সহযোগী গ্রন্থ: “বায়াত ও পীর-মুরিদের বিধান”, শাহসূফি আ: মজিদ আল চিশতী নিজামী।