হোমপেজ ইলমে মারেফত কাহারা আল্লাহর ফকির (পর্ব-৩

কাহারা আল্লাহর ফকির (পর্ব-৩

431
ছবি: মজ্জুব ওলি- হযরত খাজা হায়দার আলী শাহ (রহ:)

কাহারা আল্লাহর ফকির (পর্ব-৩)

রাসুল (সা:) ফকিরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: আমি ফকিরীর গর্ব করি- “ফাখরি ওয়াল ফকির”। এটি আরও পরিস্কার করে বলে রাখা দরকার। রাসুল(সা:) বলেছেন:- “ফকির আমার গৌরবের সম্পদ”। তাই দেখা যায় রাসুল (সা:) এর এই কথার মুল্যায়ন স্বরুপ সকল ওলি আউলিয়ারাই তাদের মাথার তাজ করে নিয়েছেন। যেমন গাউসুল আজম বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (আ:), গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (আ:), হযরত শেখ রেফাই (রহ:) হযরত ইবনুল আরাবী (রহ:), হযরত জোনায়েদ বোগদাদী (রহ:), হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহ:) হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রহ:), হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ:), হযরত শেখ ফরিদ (রহ:), হযরত আবু বক্কর শিবলী (রহ:), হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রহ:), হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ:), হযরত শামস তাব্রীজ (রহ:), হযরত জালাল উদ্দিন রুমী (রহ:), হযরত আল ফেসানী (রহ:), হযরত বাহা উদ্দিন (রহ:), হযরত জুন্নুন মিছরী (রহ), হযরত হাফিজ সিরাজি (রহ:) হযরত বু আলী কলন্দর (রহ:) এবং আরো অন্যান্য মহা মনিষী আউলিয়া কেরামগণ আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে উপনীত হয়ে নিজেদেরকে ফকির বলে ঘোষনা করেছেন।

প্রকৃত পক্ষে বেলায়েত প্রাপ্ত সিদ্ধ সাধকগণই হচ্ছেন আল্লাহর ফকির। আর এই ফকিরগণের কখনও মৃত্যু হয় না তারা লা-মউতের অধিকারী অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয়ের অধিকারী। যিনি আল্লাহর গুপ্ত জ্ঞান এলমে লাদুন্নী লাভ করেছেন এবং যিনি মারেফতের সর্বোচ্চ সাধন স্তরে আরোহণ করে ওয়াহেদানিয়াত জগতের দুর্গম ও গহীন স্থানে প্রবেশ করে আল্লাহর সাথে লীন হয়ে মিশে গেছেন, এ রকম একজন মানুষই হচ্ছেন আল্লাহর ফকির।

আল্লাহ প্রদত্ত গুপ্ত ও নিগুঢ় জ্ঞানের যিনি অধিকারী তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর ফকির। আকাশ-পাতাল এ মহাবিশ্ব অর্থাৎ কূল মাখলুকাতের দৃশ্য ও অদৃশ্যের যাবতীয় জ্ঞান ও গুপ্ত রহস্য যার অধীনে রয়েছে তিনি হচ্ছেন মহাণ আল্লাহপাক। আর সেই জন্যই আল্লাহ স্বয়ং নিজেই ফকির। সৃষ্টি কূলের মধ্যে মহানবী রাসুল  (সা:) সবার চেয়ে বেশি আল্লাহ পাকের রহস্য পূর্ণ্ গুপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। সেই জন্য মহানবী রাসুল (সা:) ও একজন ফকির। এইরুপ ফকিরী পেয়ে মহানবী রাসুল (সা:) এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ”মা রায়ানী ফাকাদ রাইল হক” অর্থা- যে আমাকে দেখলো সে হককেই দেখলো।

মহানবী রাসুল(সা:) আরও বলেছেন- তিনি নিজেই আউয়াল, আখের, জাহের,বাতেন। এ রকম অবস্থায় ও হালতে আল্লাহ প্রাপ্ত ফকির মুখ দিয়ে যা বলেন, তা মূলত আল্লাহই বলে থাকেন। তখন ঐ দিব্য জ্ঞানী ফকিরের হাত, পা, মুখ, চক্ষু, কর্ণ্ ইত্যাদি সমস্ত কিছুই আল্লাহর হয়ে যায় তথা আল্লাহময় হয়ে যায়।

এপর্যায়ের ফকিরের মধ্যে জাত ও সিফাত মিলে মিশে একাকার হয়ে ঐ ফকিরের দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ যাবতীয় যা কিছু আছে সবই তখন আল্লাহর হয়ে যায়। অর্থাৎ ফকির তখন নিজেই আল্লাহময় হয়ে যান। ঐ ফকির তখন বলে ফেলেন- “আমি সেই অথবা সেই আমি।” এই ফকির তখন কাহারো মুখাপেক্ষী হন না। এই পর্যায়ে তিনি কারো আদেশ-নিষেধ মানেন না।

যেমন:হযরত মনসুর হাল্লাজ (রহ:), তিনি কাহারো আদেশ-নিষেধ মানেন নি। কারণ মনসুর হাল্লাজ মনে করেন, পৃথিবীর সমস্ত মানুষই আমরা এক এবং আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মধ্যে আছি। তিনি আরও বলেন- সবার মধ্যেই আমি এবং আমার মধ্যেই সব। এখানে দুই নেই সবই এক।

চলবে…

নিবেদক: সবুজ কাদেরী।
লেখার কাজে সহযোগী গ্রন্থ: “বায়াত ও পীর-মুরিদের বিধান”, শাহসূফি আ: মজিদ আল চিশতী নিজামী।

» কাহারা আল্লাহর ফকির সবগুলো পর্ব