সূফীতত্ত্ব বনাম ভ্রান্ততত্ত্ব (পর্ব-০১)
সূফীতত্ত্ব সত্য ও সুন্দর। সূফীতত্ত্বকে দেহতত্ত্বও বলে। কারন যা আছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভান্ডে। তাই প্রতিটি তত্ত্বই মূলত দেহকে কেন্দ্র করে। আরেকটা কারন হলো সৃষ্টিকর্তার বসবাস এই মানবদেহের মাঝেই।
ভ্রান্ততত্ত্ব বলতে বুঝিয়েছি সেসব ভ্রান্ত নোংরা দেহতত্ত্বকে, যা একদল কামুক ভ্রান্ত লোকেরা আবিষ্কার করে তা স্রষ্টার নামে চালিয়ে দিয়েছে। এরা সঠিক রহস্য না বুঝে নিজেদের মনগড়া মত তত্ত্ব ও সাধন পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছে। আমার লেখালেখির মূল মিশনটা মূলত সেসব ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচন নিয়েই। আশা করি সবাইকে পাশে পাবো। ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য ট্যাগ (Tag) করতে পারলে ভাল হতো, যারা আগ্রহী, তারা জানাবেন ট্যাগ করার ব্যপারে।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। প্রথমেই শুরু করব স্রষ্টার বারামখানা তথা ত্রিবেণীর ঘাট নিয়ে সঠিক ও ভ্রান্ততত্ত্ব দিয়ে..
ভ্রান্ততত্ত্ব:
ভ্রান্তদের মতে ৭২ হাজার নাড়ি এই দেহের মাঝে রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হল তিনটি। যথাঃ ঈড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না। এদেরকে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী নদীও বলে। এই তিন নদীর মিলন স্থলকে ত্রিবেণীর ঘাট বলা হয়। এই ভ্রান্ত সাধকদের মতে এই ত্রীবেণীর ঘাট হল নারীর যৌনাঙ্গ। আর এখানেই স্রষ্টার বারামখানা বা আবাসস্থল। এর কারন হল নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে তিনটি ধারা বা স্রোত প্রবাবাহিত হয়। সেগুলো হলো রজঃ, বীর্য, পেশাব। তারা মনে করেন যে, মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের সময় স্রষ্টা এই পথ দিয়ে নিচে চলে আসে। তাই তারা মাসিকের রক্ত পান করে। কোনো মেয়ের জীবনের প্রথম ঋতুস্রাবের রক্তকে তারা ‘ফুল সুধা’ বলে। তারা মনে করে যে, এই ফুল সুধা পান করলে তাদের দেহ অমর হবে।
সূফীতত্ত্ব:
এবার আসুন জেনেজেনে নেই সূফীবাদ স্রষ্টার অবস্থান সম্পর্কে কি বলে।
ঈড়া হল ধমনী, যার মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয়, পিঙ্গলা হল শিরা, যার মধ্য দিয়ে দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয় পুনরায় রক্তকে শুদ্ধি করণের জন্য এবং সুষুণ্মা হল স্নায়ু তন্ত্র, যার মাধ্যমে আমাদের অনুভূতির উৎপত্তি ঘটায়।
এই তিন নদীর মিলমস্থলকে ‘ত্রিবেণীর ঘাট” বলা হয় এটা আগেই উল্লেখ করেছি। তবে ভ্রান্ত সাধকদের সাথে আমাদের এইখানে পার্থক্য যে, তারা ত্রিবেণীর ঘাট বলতে নারীর যৌনাঙ্গকে বুঝে, আর আমরা বুঝি অন্যকিছুকে।
সূফীতত্ত্ব মতে সুলতান নাসিরা পথে অর্থাৎ বাপ নাসিকায় ঈড়া ও ডান নাসিকায় পিঙ্গলা এবং এই দুইটার মাঝখানে সুষুম্নার নাড়ি। ডানে সূর্য তথা দিন, আর বামে চন্দ্র তথা রাত। এখানেই মতি, মুঙ্গা ও রত্ন প্রবাহিত হয়। আর এই তিনের মিলন হয়েছে আখফার পথ ধরে। এখানেই মূলত দিব্য নয়ন। এটা উর্ধ্ব দিকে গিয়ে মিলিত হয়েছে সহস্রার সহস্রদলে। আর এখানেই ত্রিবেণীর ঘাট। এটাই মূলত ‘হাহুত’ মোকাম বা স্রষ্টার বারামখানা। তাই সূফীবাদের প্রতি দমে দমে জিকির করার কথা বলা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাছ-আনফাস’ এর জিকির। এই ত্রিবেণীর ঘাটের জল দিয়ে কেউ নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে পারলে তার দেহে আর কোনো পাপ থাকে না। সে তখন হয় শুদ্ধপুরুষ। তখন তার মিনের অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এই ত্রিবেণীর ঘাটের প্রভু তাঁর ভাবের বাঁশি বাজাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাকে সনাতন শাস্ত্রে বলে কৃষ্ণের ভাবের বাঁশি। একজন কামেল মুর্শিদ চাইলে মূহূর্তের মধ্যে ভক্তকে সেই বাঁশির সুর শুনিয়ে দিতে পারেন।
তাছাড়া স্রষ্টা তাঁর অবস্থান নিয়ে স্পষ্টই বলেছেন যে ‘আমি আরশে অবস্থান করি, আর মুমিনের হৃদয়ই হল আমার আরশ।” নারীর যৌনাঙ্গে কখনো আল্লাহ্ থাকতে পারেন না। আর সেখানে কোনো ভাবের বাঁশিও বাজায় না আমার প্রভু।
সত্য উপস্থাপন করলাম, সত্যকে বিবেক দ্বারা গ্রহন করার দায়িত্ব আপপনার। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্, আমি ত শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি। যদি কারো পীর এই ভ্রান্ত মতের হয়, তবে তাকে ত্যাগ করে কামেল পীরের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে তওবা করে।
হে প্রভু! আপনি আমাদের সরল সঠিক পথের দিশা দিন, আপনি পথ না দেখালে আমমরা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
» সূফীতত্ত্ব বনাম ভ্রান্ততত্ত্ব (সবগুলো পর্ব)
চলবে…
লেখাঃ DM Rahat