সূফীতত্ত্ব বনাম ভ্রান্ততত্ত্ব (পর্ব-০২)

সূফীতত্ত্ব বনাম ভ্রান্ততত্ত্ব (পর্ব-০২)

সূফীবাদই একমাত্র শান্তির পথ। শুধু পরকাল নয়, ইহকালেও শান্তিতে বসবাস করার জন্য এই সূফীবাদ। নোংরামীর কোনো স্থান এখানে নেই। কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতার নাম সূফীবাদ নয়, যদিও সূফীবাদকে প্রকাশের স্বার্থে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকেন সূফীবাদীরা।

পূর্বের পোস্টে আলোচণা হয়েছিল ‘ত্রিবেণী’ সম্পর্কে। এই পোস্টে আলোচনা করব যৌনতা ও অশ্লীলতা এবং নোংরামী নিয়ে।

ভ্রান্ততত্ত্বঃ

ভ্রান্ত তত্ত্বের অধিকারীরা সবচেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে যৌনতা নিয়ে। এদের কথা অনেকেরই বুঝতে কষ্ট হয়, এদের কিছু কথা শুনলে আপনার মনে হবে যে তারা যৌন মিলন সমর্থণই করে না, আবার কিছু কথা শুনলে মনে হবে যৌনতা ছাড়া এরা কিছুই বুঝে না। বিভান্ত হবেন ঠিক এই বিষয়টাতেই।

এরা বলে যে জন্মদিলে জন্মগ্রহণ করতে হবে। নির্বাণ লাভ করতে গেলে জন্মদেওয়া যাবে না। অনেকে আবার এরকমও বলে বেড়ায় যে, যে ব্যক্তি সন্তান জন্ম দেয় সে কখনো পীর হতে পারে না। তাদের মতে যৌন মিলন করলেও কোনোভাবেই বীর্য ত্যাগ করা যাবে না। তারপরও যদি বীর্য বের হয়ে যায়, তবে তা সাথে সাথে মুখ দিয়ে তুলে নিতে হবে (ভক্ষণ করতে হবে)। কারণ বীর্যকেই তারা ‘আমানত বস্তু’ বা ‘১৬ আনা’ বস্তু মনে করে থাকে। তাই তারা ‘মৈথুণের সুধা’ পান করে।

আবার তারা এটাও বলে থাকে যে, যৌন মিলন ছাড়া ঈশ্বরকে লাভ করা সম্ভব না। তাই সাধনার জন্য নারী-পুরুষ অবশ্যই প্রয়োজন। তারা মনে করেন যোগল সাধনা ছাড়া ঈশ্বরকে লাভ করা সম্ভব নয়। এর অন্যতম একটি কারণ হল তাদের ধারণা নারীর যৌনাঙ্গেই ঈশ্বের বারামখানা। তাই তাদের সাধনার মূল কথাই হলো নারী পুরুষের যৌন মিলন।

সূফীতত্ত্বঃ

যৌনতা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। প্রতিটি মানুষের মাঝে স্রষ্টাই যৌনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাই জৈবিক চাহিদা প্রতিটা প্রাণীর মত মানুষেরও আছে। তবে সূফীবাদ এই যৌনতাকে কিছু বিধানের মধ্যে রেখেছে। তাই প্রতিটা ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল, অবতার পুরুষদেরও মধ্যেই এটা লক্ষনীয়, সেটা হোক তাদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। কারণ তারা সবাই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এটা প্রকৃতির নিয়ম। যদি এরূপ না হতো, তবে এই বিশ্ববাগান এতো সৌন্দর হয়ে উঠত না, শুরুতেই ধ্বংস হয়ে যেত।

বীর্য যেমন ক্ষয় হয়, তা আবার পূরণও হয়। স্রষ্টা এমনই অসাধারণ অযুদ বা দেহ দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আপনি যতই বীর্য ধারন করেন না কেন, নির্দিষ্ট পরিমানের বাইরে কখোনোই তা জমা হবে না আপনার দেহে। তবে কেন এটা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি। বীর্য আপনার দেহে রক্তের মতই। রক্ত দান করলে যেমন তা আবার পূরন হয়ে যায়, বীর্যও তাই। বীর্য বা রক্ত ত্যাগ না করলে এটা আপনার দেহে অতিরিক্ত জমা কখনোই হবে না।

তবে যৌনতাকে সূফীবাদ সাধনা বলে স্বীকৃতি দেয়নি কোনো কালেই। এটা মানুষের একটা চাহিদা ঠিক অন্যান্য মৌলিক চাহিদার মত। যেমন: খাওয়া-দাওয়া। খাওয়া দাওয়ার মধ্যে বিধি-বিধান থাকলেও এর মাঝে কোনো সাধনা নেই। তবে মহামানবরা যেমন দুনিয়াদীর খাবার থেকে বিমুখ ছিলেন, প্রয়োজনের বেশি তাহা আহার করেন নাই, ঠিক তেমনি যৌন মিলনও করেন না প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। যৌনতার প্রতি আকর্ষণ থাকলে সে সাধনা অগ্রসর হতে পারবে না। তাই ওলী আউলিয়ারা নারী বিমুখও ছিলেন। তারা নারী সংসার ত্যাগ করে তাই বন-জঙ্গলে গিয়ে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন।

যদি সাধনার জন্য নারীরই প্রয়োজন হতো, তাহলে মহামানবরা বৈরাগী হতেন না। তারা জঙ্গলে গিয়ে একাকী সাধনা করতেন না। অধিকাংশ ওলী আউলিয়ার জীবনিতেই দেখা যায় যে, তারা তখনই ঈশ্বরকে লাভ করেছেন, যখন নারী সঙ্গ ত্যাগ করে একাকী কোথাও সাধনা করেছেন।

বিধানের আয়তায় যৌনতা যেমন পাপ নয়, তেমনি সাধানাও নয়। এটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। বিধানের বাইরে গিয়ে যৌনতার চর্চা করলেই সেটা নোংরামী ও অশ্লীলতা। যেমন হালাল খাদ্য দ্রব্যও চুরি করে খেলে হারাম হয়ে যায়।

বিবেক থাকলে প্রতিটা মানুষেরই এইসব বুঝে আসার কথা, যদিও হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্‌ তায়ালা।

» সূফীতত্ত্ব বনাম ভ্রান্ততত্ত্ব (সবগুলো পর্ব)

চলবে..

লেখাঃ DM Rahat