হোমপেজ মাওলা আলী (আঃ) প্রসঙ্গ ঈদে গাদীরে খুম নিয়ে কোরানের দিকনির্দেশনা।

ঈদে গাদীরে খুম নিয়ে কোরানের দিকনির্দেশনা।

ঈদে গাদীরে খুম নিয়ে কোরানের দিকনির্দেশনা।

ঈদে গাদীরে খুম নিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফের দিকনির্দেশনা। মহান আল্লাহ তায়ালা দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) কে কি আদেশ করছিলেন?

দশম হিজরীর ১৮ ই জিলহজ্ব, ৬৩২ সাল ইসলামের ইতিহাসের একটি চিরস্মরণীয় দিন। এ দিনেই মহান রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত এবং হযরত মুহাম্মদ (সা:) আনিত মোহাম্মদী ইসলাম ধর্ম পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্ব শেষে মদিনার অভিমুখে যাত্রার সময় দয়াল রাসূল (সাঃ) গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে মহান আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হযরত আলী(আঃ) কে মুমিনগনের নেতা হিসেবে মনোনীত করেন।

প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজ্ব পালন করে মদিনা যাওয়ার সময় গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে পৌঁছালে পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি নাযিল হয়-

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ﴿۶۷﴾

অর্থাৎ- “হে রাসূল! যা (যে আদেশ) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌছে দাও, আর যদি তা না কর। তবে (যেন) তার কোন বার্তাই পৌছাওনি; এবং (তুমি ভয় কর না) আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং ৬৭)

দয়াল রাসূল (সাঃ) দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নবুয়াত ও রেসালতের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে আসছেন। নবুয়াত ও রেসালতের বিভিন্ন নির্দেশ তিনি যথাসময়ে উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। শরীয়তের কোন বিধি বিধান বর্ণনা করাও অবশিষ্ট ছিলনা, কোরআন অবতীর্ণও প্রায় শেষ। বিদায় হজ্বে সবার কাছ থেকে বিদায়ও নেওয়া হয়েছে। তাঁর জীবন সায়াহ্নে কি এমন নির্দেশ, যা তিনি এখনো উম্মতের কাছে পৌঁছাননি?

আবার বলা হচ্ছে “আর যদি তা না কর, তবে (যেন) তার কোন বার্তাই পৌছাওনি”। সত্যিই ভাবনার বিষয়! আল্লাহর পক্ষ হতে এই আয়াত টি নাযিল হবার পর, দয়াল রাসূল (সাঃ) গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে আল্লাহর সেই ঘোষণাটি তার উম্মতকে জানিয়ে দেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং বাহন থেকে নেমে পড়লেন। সবাইকে একত্রিত হতে বললেন। তখন মঞ্চ বানিয়ে মাওলা আলীর হাত উঁচু করে সবার উদ্দেশ্য বলেন:-

  • “আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা। যে আলীকে ভালোবাসে সে মূলত আমাকে ভালোবাসে এবং যে আলীর সাথে শক্রতা করে সে মূলত আমার সাথে শক্রতা করে।”
  • “আলীকে ভালোবাসার নামই ঈমান এবং ইবাদত।”
  • “মুমিন ব্যক্তি কখনো আলীর বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং মোনাফেক কখনো আলীকে ভালোবাসবে না।”
  • “আলী আমার একমাত্র ওয়াসী এবং খলিফা। তোমরা আহলে বায়াত এবং পবিত্র কুরআন আঁকড়ে ধরে রাখবে, তাহলে মুসলিম জাতি কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।”

আরো অসংখ্য দিকনির্দেশনা মূলক ভাষণ প্রদান করেন সোয়ালক্ষ সাহাবীদের সামনে এবং সবাইকে ওয়াদা করিয়ে যান দয়াল রাসূল (সাঃ)। এভাবেই দয়াল রাসূল (সাঃ) মহান আল্লাহর নির্দেশে মাওলা আলীকে একাধারে রাষ্টীয় খলিফা এবং মাওলায়াত মনোনয়ন করে যান। কিন্তু দয়াল রাসূল (সাঃ) ওফাত হওয়ার সাথে সাথে সেই ওয়াদা বরখেলাপ হয়ে যায়। যা মুসলিম জাতির জন্য অতিব দুঃখের এবং ব্যদনার। সেই থেকে মুসলিম জাতি পথভ্রষ্টের সূচনা করে যার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ঘটে কারবালার প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইনকে হত্যার মাধ্যমে এবং আজও আমরা পথভোলা মুসলিম জাতিই রয়ে গেছি।

আপনি কি কখনো একবার বিবেকের দ্বার উন্মোচন করে বিষয়টি ভেবে দেখেছেন অথবা ভাববার চিন্তা করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত মাওলা আলীকে পরবর্তী খলিফা এবং মাওলায়াত প্রদান করা হয়নি, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মের কোনকিছুই পৌঁছানো হয়নি এবং মোহাম্মদী ইসলাম ধর্ম পরিপূর্ণতা পায়নি। যখনই হযরত আলী (আঃ) কে মুসলিম জাহানের পরবর্তী খলিফা এবং মাওলা ঘোষণা করা হয়, তখনই আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফের সর্বশেষ আয়াত নাজিল করে ধর্মের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করেন। তারমানে সমস্ত কোরআন শরীফের সারমর্ম মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আলীকে মাওলা ঘোষণার মাধ্যমেই রেখে দিয়েছিলেন। তাই আল্লাহ হযরত আলীকে মাওলা ঘোষণার সাথে সাথে পবিত্র কুরআন শরীফের পরিসমাপ্তি ঘটালেন। এটা শুধু জাগ্রত বিবেকবান মানুষই বুঝতে সক্ষম। বিভিন্ন তাফসীরকারকগন উক্ত আয়াতে মাওলা আলীর নাম সুস্পষ্ট ছিলো বলে উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে মাওলা আলীর নাম রহিত করা হয় বলে মতামত পেশ করেন। তাই ১৮ই জিলহজ্ব তারিখে সকল মুমিন মুসলমানগণ মাওলা আলীর অভিষেক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। ইহা মুমিন মুসলমানদের জন্য মহা আনন্দের ঈদ। মুসলিম ইতিহাসে পবিত্র ঈদে গাদীরে খুম দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্য বহন করে। ইহা মুমিন মুসলমান ছাড়া কেউ অনুধাবন করতে সক্ষম নন।

হে মুসলিম জাতি! আমরা কি আল্লাহ এবং রাসূলের গাদীরে খুমের সেই দিকনির্দেশনা মেনে চলছি নাকি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করছি? আমরা কি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং আহলে বায়াতকে একসাথে আঁকড়ে ধরতে পেরেছি? প্রশ্নগুলো আপনার শুদ্ধ বিবেককে একবার জিজ্ঞেস করে দেখুন, আশা করি সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন। আমরা আহলে বায়াতকে ছেড়ে দিয়ে শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ আঁকড়ে ধরেছি। তার ফলাফল একবার স্বচক্ষে অবলোকন করুন। আমরা মুসলিম জাতি আজ সবজায়গায় মার খাচ্ছি স্বজাতি এবং বিজাতির কাছে। ফিলিস্তিন, নাইজেরিয়া, সুদান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশে আমরা মার খাচ্ছি। কারণ আমরা পবিত্র আহলে বায়াতকে ছেড়ে দিয়েছি। তাই আমাদের ভিতরেই তৈরি হয়েছে জঙ্গি*বাদ, মৌল*বাদ এবং উ*গ্রবাদ। অথচ ইসলাম ছিলো শান্তির সুমহান বার্তা।

বিশ্বাস করুন যতক্ষণ পর্যন্ত আহলে বায়াত এবং পবিত্র কুরআন আঁকড়ে না ধরবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম জাতির মুক্তির কোন পথ খোলা নেই। এটা কিন্তু অধম মোজাম্মেল পাগলার কথা নয় বরং স্বয়ং দয়াল রাসূল (সাঃ) এর কথা। অধম শুধুমাত্র তুলে ধরেছি মাত্র। হে মুসলিম জাতি! সময়ের পরিক্রমায় অনেক পথ পরিভ্রমণ করেছি, আর কতকাল এভাবে চলবে। আপনাদের এখনো কি হুঁশ এবং বিবেকের দ্বার উন্মোচিত হবে না। নাকি অন্ধকারাচ্ছন্ন অতল গহীনেই নিমজ্জিত থাকবেন। যে জাতি নিজেই মুক্তি চায় না, সেই জাতিকে আল্লাহ কেনো মুক্তি দিবে? আফসোস অন্ধকারের কুঠির মস্তিষ্ক থেকে আজও আমরা বের হতে পারলাম না।

মনেপ্রাণে বিশ্বাস করুন, পাক পাঞ্জাতন ছাড়া মুসলিম জাতির মুক্তি নাই নাই নাই। পাক পাঞ্জাতনের প্রেমই একমাত্র মুক্তির পথ এবং বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।

নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।