মৃত মুরীদের জীবন প্রাপ্তিঃ (কারামত-খাজাবাবা ফরিদপুরী)
১৯৬০-৬১ সনের কথা। সে সময়ে মধুখালীর অন্যতম জাকের জিন্দার আলী মোল্লা ভাইয়ের উপস্থিতিতে ঘটে যাওয়া একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। জিন্দার আলী মোল্লা ভাইয়ের ছেলে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মিরাজীর নিকট থেকে শুনা।
সেই পাকিস্থান আমলে ৬০/৬১ সনের উরস শরীফে পাক দরবার শরীফে হয়তো ৪০/৫০ হাজার জাকেরান আশেকানের জমায়েত হতো। দরবার শরীফের জায়গাও তখন বর্তমানের চেয়ে অনেক কম ছিল।
সেই উরস শরীফে শিবচরের তৎকালীন অন্যতম বিশিষ্ট ব্যাক্তি এবং বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রবীণ খাদেম হাসান দাউদ ফকির একটি তেজি ও রাগী গরু নজরানা দিলেন। গরুটি ঐ সময়কার সব গরু থেকে ছিল আকারে বড় ও দৃষ্টিনন্দন। তাই গরুটিকে দেখার জন্য ভীড় জমে গেল।
এদিকে তেজি গরুটি হঠাৎ করে রশিসহ ছুটে গিয়ে লোকজনের মধ্যে এলোমেলো দৌড়ানো শুরু করলো। মাওলানা রফিকুল ইসলাম মিরাজীর নিজ গ্রামের বিশিষ্ট জাকের আব্দুল হাকিম ভাই গরুর রশির সাথে পেঁচিয়ে গেলেন। গরুটি আব্দুল হাকিমকে রশিতে পেঁচানো অবস্থায়ই অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে মাঠের দিকে ছুটে চললো।
অনেক কষ্টে ও নানা কৌশলে অবশেষে মাঠের ভিতর গিয়ে গরুটির গতিরোধ করে আটকানো হলো। কিন্তু আব্দুল হাকিম ইতোমধ্যেই মারাত্মকভাবে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন ও নিস্পন্দ হয়ে গেছেন। কাজেই তাকে গরুর রশি থেকে ছাড়িয়ে দরবার শরীফের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের দেখানো হলো।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আব্দুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করলেন। এতে সমগ্র দরবার শরীফ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এলো। বিশেষ করে মধুখালীর জাকের ভাইগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এবং মাতম করতে লাগলেন যে, কিভাবে তারা আব্দুল হাকিমের লাশ নিয়ে বাড়ীতে যাবেন, তার পরিবারের নিকট কি জবাব দিবেন।
এমন সময় হযরত কেবলাজান হুজুর খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বরইতলা হুজরা শরীফে তশরিফ নিলেন। শোকসন্তপ্ত জাকের ভাইয়েরা আব্দুল হাকিমের লাশ হুজুর পাকের সামনে হাজির করে নির্বাক অশ্রুঝরা চোখের ভাষায় নালিশ পেশ করলেন।
হুজুর পাক সব ঘটনা শুনে দরবার শরীফের অন্যতম প্রবীণ খাদেম ও নামকরা চিকিৎসক মোহসীন উদ্দিন ওরফে মোহন ডাক্তারকে ডেকে বললেন, “বাবা-ডাক্তার সাহেব, আপনি দেখেনতো আব্দুল হাকিম সত্যিই মৃত্যুবরণ করেছে কিনা।”
মোহন ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে বললেন, “হুজুর আব্দুল হাকিম মারা গেছে।” কেবলাজান হুজুর আব্দুল হাকিমের লাশ ঢেকে রাখার হুকুম দিয়ে হুজরা শরীফের দরজা বন্ধ করে দিলেন। বেশকিছু সময় পর হুজরা শরীফের দরজা খুলে ডাক্তার সাহেবকে বললেন, “বাবা-ডাক্তার সাহেব, আপনি আব্দুল হাকিমকে কয়েক ফোঁটা হোমিওপ্যথিক ঔষধ খাওয়াইয়া দেন।”
ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে বললেন, “হুজুর, আব্দুল হাকিম মৃত।” হুজুর পাক কিছুটা জ্বালালী(রাগতঃ) কন্ঠে বললেন, “আমি যা বলছি তাই করেন।”
নির্দেশমতো মোহন ডাক্তার মৃত আব্দুল হাকিমের মুখে কয়েক ফোঁটা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ঢেলে দিলেন। মধুখালীর বিশিষ্ট জাকের ভাই আব্দুল গফুর মোল্লা ওরফে গোপাল মোল্লা বললেন, “হুজুর, ঔষধ যতটুকু মুখের ভিতর দেয়া হয়েছিল সবইতো চোয়াল বেয়ে পড়ে গেলো।”
হুজুর কেবলাজান আবার হুজরা শরীফের ভিতর ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলেন এবং সবাইকে জিকির করার হুকুম দিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে কিছু সময় পরে আব্দুল হাকিম গোংগানি দিয়ে নড়ে চড়ে উঠলেন এবং চোখ মেলে তাকালেন। কেবলাজান হুজুর দরজা খুলে বললেন, “বাবারা, আপনাদের দাদা হুজুরের ওসিলায় আল্লাহ পাকের নিকট থেকে আব্দুল হাকিমের ‘রুহ’ চেয়ে আনা হয়েছে।”
উল্লেখ্য যে, হযরত কেবলাজান হুজুর যে কোন কৃতিত্বপূর্ণ প্রশংসনীয় কাজ, বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ বা অলৌকিক ঘটনার সকল কৃতিত্ব আপন পীরের বলেই প্রকাশ করতেন, কখনও নিজের কথা বলতেন না। এটা ছিল মুর্শিদ কেবলাজানের আপন পীরের প্রতি প্রকৃত মহব্বত ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ।
এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে উপস্থিত সকল জাকেরান আশেকান আনন্দ ও ভাবাবেগের দুর্ণিবার কান্নায় আপন মুর্শিদের চরণে লুটিয়ে পড়লেন। বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা শাহ্সূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) কেবলাজান হুজুরের এ অভূতপূর্ব কারামাতের কথা লোকমুখে শুনতে পেয়ে হাজার হাজার মানুষ আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এসে তরিকা নিলেন, খাজাবাবার মুরীদ হলেন।
সকলেই তদীয় পবিত্র শাহাদাত অঙ্গুলীর অমিয়স্পর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে তাসাউফের এক মনোমুগ্ধকর নতুন জগতে পদার্পন করলেন। (তথ্যসূত্রঃ মাওলানা রফিকুল ইসলাম মিরাজী)
আল্লাহর ওলীর কারামতকে অনেকে কল্প কাহিনী মনে করে। আসলে তা নয়। নবীগণের মোজেজা ও ওলীগনের কারামত সত্য।
কারামত কি?
‘কারামত’ এর আভিধানিক অর্থ সম্মানিত হওয়া, গুণীন হওয়া ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়ঃ নবী হওয়ার দাবিদার নয় এমন কোন গুণী ব্যক্তির থেকে অলৌকিক কোন কিছু সংঘটিত হওয়াকে ‘কারামত’ বলা হয়।”
বস্তুত ওলীগণ থেকে ‘কারামত’ প্রকাশিত হওয়া সত্য। কুরআন মাজীদে বহু কারামতের উল্লেখ রয়েছে। যেমন হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর নিকট অলৌকিক উপায়ে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছা এবং হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর উযীর আসাফ ইব্ন বারখিয়্যা কর্তৃক মুহুর্তের মধ্যে ইয়ামান হতে রাণী বিল্কিসের সিংহাসন নিয়ে আসার ঘটনা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিনিতঃ- আক্তার হোসেইন কাবুল।
বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরীর সকল কারামত গুলো