অন্ধবিশ্বাস ও চেতনার দ্বন্দ্ব
মানুষ চিন্তা করতে শেখার আগেই বিশ্বাস করতে শিখেছে। আর বিশ্বাস যতটা শক্তিশালী, সন্দেহ ততটাই ভয়ংকর হয়ে ওঠে সমাজে। বিশ্বাস যদি বুদ্ধিকে অতিক্রম করে ফেলে, তা হয়ে ওঠে “অন্ধবিশ্বাস”। অন্ধবিশ্বাস মানুষকে চালায়, চেতনা মানুষকে জাগায়। এই দুইয়ের সংঘর্ষেই জন্ম নেয় সত্য ও মিথ্যার প্রভেদ।
অন্ধবিশ্বাস কীভাবে জন্ম নেয়?
১. “শৈশবের শেখানো বিশ্বাস”
আমরা যেভাবে ঈশ্বর, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান শিখি—তা মূলত প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেওয়া। পরিবার, সমাজ, শিক্ষক—সবাই মিলে একটি ‘প্যাকেজ’ ধরিয়ে দেয়: “এটাই সত্য, প্রশ্ন কোরো না।”
২. “ভয় ও পুরস্কারের মিশ্রণ”
জান্নাতের লোভ, দোজখের ভয়, ঈশ্বর রুষ্ট হবেন—এ সবই ভয় দিয়ে বিশ্বাস তৈরি করে। কিন্তু যে বিশ্বাস ভয় থেকে জন্ম নেয়, তা চেতনাজাত নয়, তা দাসত্বের মানসিকতা।
৩. সংখ্যাগরিষ্ঠের মত – “সত্য”
কোটি মানুষ যদি এক কথা বলে, তা সত্য হয় না। কিন্তু অন্ধবিশ্বাস বলে—“সবাই বিশ্বাস করে, মানে এটিই সত্য।”
চেতনা কীভাবে আলাদা?
চেতনা প্রশ্ন করে, অনুসন্ধান করে, বোঝার চেষ্টা করে।
চেতনা বলে—
- আমি বুঝে মানতে চাই,
- আমি নিজে খুঁজে পেতে চাই,
- আমি ভয় নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাস করি।
চেতনার ধর্ম নেই, জাত নেই, গোত্র নেই। চেতনার ভাষা—নীরবতা, উপলব্ধি।
অন্ধবিশ্বাসের বিপদ কী?
- মানুষ হত্যা করে ধর্ম রক্ষার নামে।
- নারীর অধিকার হরণ হয় ‘পবিত্রতা’র অজুহাতে।
- শিশুকে ভয় দেখিয়ে ধর্ম শেখানো হয়—এবং বলা হয় এটাই ‘আদর্শ’।
- বিজ্ঞান, যুক্তি, দর্শন—সব অস্বীকার করা হয় ‘ঈমান চলে যাবে’ ভয় দেখিয়ে।
- অন্ধবিশ্বাস প্রশ্ন ভয় পায়, চেতনা প্রশ্নে আনন্দ খুঁজে পায়।
চেতনার শক্তি কোথায়?
চেতনা মুক্ত করে। চেতনা মানুষকে বলে— তুমি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসো, তাহলে ভয় নয়, ভালোবাসা থেকে জানো। তুমি যদি সত্যের পথে চলো, তাহলে কেউ জোর করে তোমাকে বিশ্বাস করাবে না—তুমি নিজেই খুঁজে পাবে। চেতনার ধর্ম একটাই—সত্য। অন্ধবিশ্বাস অন্ধ করে দেয়, চেতনা চোখ খুলে দেয়।
এই পৃথিবীর মুক্তি তখনই আসবে, যখন মানুষ বিশ্বাসের আগেই “চেতনার আলোয়” হাঁটতে শিখবে।
-ফরহাদ ইবনে রেহান
বই- (আমি আমার চিন্তা)