শব্দাবলী

শব্দাবলী

চোখ মেললেই যেভাবে শব্দাবলী চোখে পড়ে, তেমনি শাস্ত্রের বাণীও চোখে পড়ে সহজেই। একে পড়া, পঠনযোগ্য করা কোনো মহৎ কাজ নয়, বরং তা সবার কাছে সুলভ। গৃহস্থের কোণে বা বাজারের ভিড়ে, অলিতে গলিতে, এমনকি পথের ধুলাতে শাস্ত্রের কিছু শব্দ মিলতে পারে। যেখানে, অনেক সময়, তা অতি সাধারণ, একপলক দৃশ্য, এমনকি অবহেলা করা কিছু বাণীও মনে হয়। কিন্তু, সেগুলো কি সত্যিই হৃদয়ের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে?

পঠনযোগ্যতার অর্থ তো শুধুই একটুকু ভাষার সহজ উপস্থিতি নয়। কত মানুষ তো অতি সহজেই পড়ে ফেলে শব্দের লাইন, কিন্তু সেই শব্দের অন্তর্নিহিত অনুভূতি, তার অন্তরের দিক—সেগুলি কি তারা অনুভব করতে পারে? এ কি তাদের আত্মায় কখনো প্রবাহিত হয়?

প্রকৃত জ্ঞানের দেখা পেতে, শুধুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতা নয়, চাই গভীরতর উপলব্ধি। তেমনি শাস্ত্রের শিক্ষা, যা আসলেই হৃদয়ের মধ্যে বেজে ওঠে, তা শুধু চোখে পড়া শব্দ নয়, বরং তার অন্তর্নিহিত তলব ঘিরে থাকা জীবন দর্শনের অনুভূতি, যা আমাদের প্রতিটি শ্বাসের সাথে মিশে যায়। এ কথা যেমন সত্য, যে একটি বই মলিন হতে হতে মাটির গন্ধ শুঁকতে থাকে, ঠিক তেমনই কোনো শিক্ষা, যা শুধু বাহ্যিকভাবে পঠিত হয়, তা কখনোই তৃপ্তির স্তরে পৌঁছাতে পারে না। যদি আমরা কিছু গভীরতা চাই, তবে তা অন্তরের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হতে হবে, তার অনুভূতিকে ধারণ করতে হবে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি তাঁর লেখায় জীবনকে এত গভীরভাবে অন্বেষণ করেছেন, তাঁর ভাষায়—”শুধু শব্দ নয়, হৃদয়ের সত্য সন্ধানেই তো জীবন খুঁজে পাওয়া যায়।” প্রজ্ঞার পাথেয় কেবল বাহ্যিক শব্দ নয়, বরং তা আমাদের অন্তরের কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান, বাস্তবতাকে চিন্তা ও অনুভূতির মিশ্রণে উপলব্ধি করার অন্তর্নিহিত প্রকরণ। তাই, পঠনযোগ্যতা একটি বাহ্যিক আকার হতে পারে, কিন্তু তা হৃদয়ের প্রবাহিত তেজের পেছনে কোনও গূঢ় সত্যের অনুসন্ধান নয়।

একমাত্র তখনই আমরা সেই শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করতে পারি, যখন সেই শাস্ত্রের মধ্যে আমাদের আত্মার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়, এবং তা পৃথিবী, মানুষ, এবং জীবনকেও নতুন আঙ্গিকে দেখতে শেখায়।

—ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel