বায়াত অর্থ কি এবং কেনো বায়াত হতে হবে?

বায়াত অর্থ কি এবং কেনো বায়াত হতে হবে?

বায়াত অর্থ আত্ন বিক্রয় করা বা অংগীকার করা। অর্থাৎ নিজেকে সমর্পণ করা।

এখন কথা হলো কেন বায়াত হতে হবে? তার কারণ এই যে এলেম দুই প্রকার। যথা হাদীছে আছে:- “মিনহা জাহেরুন ওয়া মিনহা বাতেনুন”। এছাড়া হাদীছ শরীফে আরো আছে- “আল এলমো এলমুল লেছানে ওয়া এলমো কালব”।

জাহের এলম তো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় কিন্ত্তু বাতেন এলম তো আর বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। এটা পেতে হলে যার নিকট বাতেনী এলম আছে তার নিকট বায়াত হতে হবে। যা আহলে বাইয়াতের নিকট হতে সিনায় সিনায় পীরের নিকট হতে চলে আসছে। এই বাতেনী বিদ্যা হাছেল করার জন্যই বায়াতের প্রয়োজন। এখনও যদি বলেন বায়াতের প্রয়োজন নেই। তাহলে আমি বলবো যে, বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র:) ছাহেব মার্তৃ গর্ভে থেকে ১৮ পারা কোআন শরীফে হাফেজ হয়ে দুনিয়াতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। জাহেরী এলেমও শিক্ষা করেছেন।

তিনি কেন হযরত শেখ আবু ছাইদ মাখজুমী (রহ:) নিকট বায়াত হয়েছেন? এছাড়া হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ মঈন উদ্দিন চিশতী (র:) হযরত খাজা ওসমান হারুনী (র:) – এর নিকট হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী (র: হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (র:) নিকট, হযরত খাজা শেখ ফরীদ (র:) হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী (র:) – এর নিকট, হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন চিশতী (র:) হযরত খাজা শেখ ফরীদ (র:) – এর নিকট কেন বায়াত গ্রহণ করেছেন? এছাড়া হযরত খাজা শাহ জালাল (রহ:) হযরত খাজা সৈয়দ আহমদ কবীর সাহেবের নিকট, হযরত খাজা বায়েজীদ বুস্তামী হযরত খাজা আবু আলী সিন্দি (র:) সাহেবের নিকট, হযরত খাজা মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (র:) হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ (র:) নিকট, হযরত খাজা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (র:) হযরত খাজা আমীর সৈয়দ কুনান বুখারীর (র:) নিকট,হযরত ইমাম গাজ্জালী (র:) হযরত শেখ আবু আলী ফারমাবাদী (র:) – এর নিকট এমন কি জগৎ বিখ্যাত মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (র:) – এর নিকট বায়াত গ্রহণ করেছেন? এখনও যদি বলেন যে বায়াতের প্রয়োজন নেই কোরআন হাদীস পড়লেই চলবে আমি বলবো যে, আপনারা কি এইসব অলী আল্লাহদের থেকে ও বড় হয়ে গেলেন ? (নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক)।

পৃথিবীতে এমন কোন অলি আল্লাহ বা পীর নেই যিনি বায়াত গ্রহণ ছাড়া কামেল অলি হয়েছেন। এমন কি শেখ ফরিদ উদ্দিন চিশতী (র:) ৩৬ বৎসর এবাদত বন্দেগী করেও হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী (রহ:) এর নিকট বায়াত গ্রহণ পূর্বক ২৪ বৎসর তার খেদমত করে কামেল অলি হয়েছেন। যদি বায়াত গ্রহণ ছাড়া চলতো তবে তার মতো লোকের তো আর পীর ধরার দরকার ছিল না। কাজেই বায়াত গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য জগত শ্রেষ্ঠ মাওলানা রুমী (রহ:) বলেছেন : – “এক জামানা ছোহবতে বা আউলিয়া বেহেতর ছদসালে তায়াতে বেরিয়া”। অর্থাৎ কিছুকাল কোন অলির সহিত বসা ১০০ বৎসর বেরিয়া এবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনি আরো বলেছেন যে আমি যত বড় পুথিগত বিদ্যা হই না কেন যে পর্যন্ত শামশের তাবরেজী (রহ:) এর কম্বলের নীচে না গিয়েছি সে পর্যন্ত আমি জ্ঞান অর্জন করতে পারি নাই। (কম্বলের নিচে যাওয়া মানে বায়াত গ্রহণ করা)।

“সিয়ারুল আসরার” কিতাবে হযরত বড়পীর (রহ:) সাহেব লিখেছেন- “কলব জিন্দা করার জন্য পীর বা আহলুত তালকীন অন্বেষণ করা ফরয। হযরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি (র:) বলেছেন- “আল ফেকাউ লে ছালাহির জাহেরে আল তাসাউফ লে এছলাছির বাতেনে”। অর্থাৎ ফেকাহ শাস্ত্র মানুষের শরীয়তকে শুদ্ধ করে আর তাসাউফ মানুষের অন্তরকে পরিস্কার করে। মাওলানা রুমী (রহ:) বলেছেন – “কোনবীয়ে ওয়াক্ত খেসাশত আয় মুরিদ তাকে নুরে নবী আমাপদীদ” অর্থাৎ তোমার পীরকে জামানার নবী মনে কর।

তিনি আরো বলেছেন: “খোদ-ব-খোদ কামেল না-শোদ মাওলানায়ে রুম-তা- গোলামে শামসের তাবরেজী না-শোদ” অর্থাৎ আমি কখনো নিজে কামেল হতে পারি নাই যতক্ষণ না আমি শামশের তাবরেজীর গোলাম হয়েছি। হযরত হাফেজ সিরাজী (রহ:) বলেছেন- “বকোয়ে এশক সানেহ বে-দলীল রাহকদম কেমান বখশ নমুদাম ছদ এহতেশাম না-শোদ” অর্থাৎ পথ প্রদর্শক পীর ছাড়া এশকের গলীতে পা রেখো না কারণ আমি শত চেষ্টা করেও কিছুই হইনি। হাফেজ (র:) বহুকাল নিজে নিজে বহু চেষ্টা করেও কিছুই হাছেল করতে পারেননি।

অবশেষে পীরের ওছিলায় দুই বৎসর সাধনায় মারফতের অশেষ দান লাভ করেন। এলমে জাহের ও এলমে বাতেন উভয়ের মধ্যে এরুপ সমন্ধ যেমন একটি দেহ ও অপরটি রুহ। রুহ ছাড়া যেমন দেহ বাচে না তেমনি দেহ ছাড়া রুহ খাকে না।

মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ:) বলেন:- “একভি আগর তরকহো তুজছে হাবীব! তো উঠে শাহেশর মে আমা বে নছীব” অর্থাৎ শরীয়ত এ মারেফত এই দুইটি এলমের একটিও যদি ত্যাগ কর তবে কেয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উঠবে।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel