কারামত: বড়পীর জিলানী ও একজন খৃষ্টান দর্জির ঘটনা।

কারামত: বড়পীর জিলানী ও একজন খৃষ্টান দর্জির ঘটনা।

একজন খৃষ্টান দর্জির ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং বড়পীরের নাম জপ অতঃপর কবর বেহেশতের বাগানে রুপান্তরিত।

আনিছুল কাদরী নামক বিখ্যাত গ্রন্থে বর্ণিত রহিয়াছে, শেখ বাহরুল হক কুদ্দুছ (রহ:) সাহেব বলিয়াছেন: একজন খৃষ্টান দর্জি নিজের জীবিকা অর্জনের জন্য হযরত বড়পীর (আ:) সাহেবের পোশাক পরিচ্ছদ সেলাই করিয়া দিত এবং সদা সর্বদা তাহার দরবারে থাকিয়া ইসলাম ধর্মের গুঢ় তত্ব অবগত হইত। ফলে লোকটি বুঝিতে পারিল যে, আল্লাহতায়ালাই সমুদয় সৃষ্টি জগতের মালিক। তাহার কোন অংশীদার নাই।পুত্র-পরিজন বলিতে তাহার কেহই নাই। তিনি কাহার ও জনক নহেন। আবার কেউ তাহাকে জন্মও দেন নাই। আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের এই মহা সত্য উপলদ্ধি করিতে পারিয়া সে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়িল। খৃষ্টান ধর্ম যাজকগণের মতানুযায়ী হযরত ঈসা (আ:) আল্লাহতায়ালার পুত্র।

এই অলিক উক্তি বুঝিতে তাহার আর বাকী রইল না। তবুও ইসলাম ধর্মের সত্যতা এবং খৃষ্টান ধর্মের কল্পনা প্রসুত উক্তি আরো ভালভাবে অনুধাবন করিবার জন্য উভয় ধর্মের তুলনা মূলক বিচার বিশ্লেষণ করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে সে যথার্থই বুঝিতে পারিল যে, ইসলাম ধর্ম প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা:)ই সত্য ধর্ম প্রচারক। কারণ তাঁহার ব্যপারে ঈসায়ীদের ধর্ম গ্রন্থ ইঞ্জিল কিতাবের বহু স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে ভবিষৎদ্বাণী রহিয়াছে। কিন্তু খৃষ্টানগণ অযথা মিথ্যা রুপে হযরত ঈসা আ: এর সমন্ধে ভবিষৎ দ্বাণী প্রচার করিয়া আসিতেছে। নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করিলে অবশ্য এই কথাই স্বীকার করিতে হইবে যে, খৃষ্টানদের ইঞ্জিল এবং ইহুদীদের তাওরাতে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:)ই শেষ নবী হিসাবে ভবিষৎদ্বাণী দেখিতে পাওয়া যায়।

কেননা হযরত ঈসা (আ:) বলেছেন: আমি যে সময় তোমাদের নিকট ছিলাম সে সময় তোমাদিগকে বলিয়াছি যে, শান্তি কর্তা পবিত্র আত্মাকে তোমার নিকট প্রেরণ করিবেন, যিনি তোমাদিগকে যাবতীয় বিষয় ভালভাবে শিক্ষা দিবেন। পূর্বাদেশগুলি স্বরণ করাইতে এবং পরবর্তী আদেশ আমাদিগকে জ্ঞাত করিবার জন্য শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আগমন। আর তাঁহারই উপর অবতীর্ণ হইয়াছে আল্লাহতায়ালার শেষ কিতাব আল কোরআন। এই আল কোরআনেই ঘোষিত হইয়াছে “দ্বীন ইসলাম সত্য আর কুফরী মিথ্যা”।

আমি সৎপথে না চলিয়া অসৎ পথে চলিয়াছি। নির্বোধের মত ভ্রমে পতিত হইয়া সারাটা জীবন কাটাইয়া দিলাম। ভাল মন্দ বাছিয়া চলিবার ক্ষমতা আমার এখনও হইল না। এই ক্ষণস্থায়ী ক্ষুদ্র জীবনটা শয়তানের প্রতারণায় বেহুদা অসৎ কর্মে শেষ করিয়া দিলাম। কখনও মদ্যপানে কখনও ব্যভিচারে মত্ত হইয়া আল্লাহর সেরা জীব মানব কূলের নামে কলংক লেপন করিলাম, বৈধ-অবৈধ, হালাল হারাম কোনটাই পার্থক্য করিয়া দেখিলাম না। ধিক আমার এই গর্হিত জীবনের উপর শতধীক।

এই নশ্বর পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করিয়া একদিন আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হইতে হইবে। ঐ সময় আল্লাহপাকের নিকট কি জবাব দিব? কিভাবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ প্রদাণ করিব? তথা হইতে মুক্তি লাভের কি পন্থাই বা করিতে পারিব? ইত্যকার চিন্তায় বিভোর হইয়া গেল। সহসা তাহার খেয়াল হইল যে, পরকালে মুক্তির জন্য মাত্র একটিই পথ রহিয়াছে তাহা হইল হযরত বড়পীর (আ:) সাহেবের পদে নিজেকে বিলাইয়া দেওয়া। তাঁহার পদতলে যদি আমার এই ভবিষৎত জীবনটা বিলাইয়া দিতে পারি, তবে আশা করা যায় যে, পরকালে আল্লাহতায়ালা মাফ করিয়া দিতে পারেন। ইহাও আশা করি যে, হযরত বড়পীর (আ:) সাহেব আমার মত একটি গোমরাহকে পথ দেখাইয়া সরল পথে পরিচালিত করিতে একটুও দ্বিধা করিবেন না।

খৃষ্টান দর্জি আর কাল বিলম্ব না করিয়া হযরত বড়পীর (আ:) সাহেবের খেদমতে উপস্থিত হইয়া ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হইয়া ইলমে জাহেরী ও ইলমে বাতেনীতে নিমগ্ন হইল। হযরত বড়পীর (আ:) সাহেবও তাহাকে পুঙ্খানু-পুঙ্খ রুপে ইসলামের বিধি-নিষেধগুলি শিক্ষা দিতে লাগিলেন। নব দীক্ষিত মুসলমান সরল পথের সন্ধান পাইয়া পরকালের চিন্তায় আরও অধিক চিন্তি হইয়া পড়িল। সে মনে মনে ভাবিল পরকালের সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করিয়া বেহেশতে দাখেল হওযা কঠিন ব্যপার। তাহা ভাবিলে অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠে। শরীর রোমাঞ্চিত হয়। কেমন বিপদ সংকুল পথ?

মৃত্যু যন্ত্রনা কত কষ্ট দায়ক। কবরে মুনকির নকিরের ছওয়াল জবাব কত কঠিন। কবরের মাটির পেষণ বর্ণনার অতীত। কিভাবে এই সব বিপদ অতিক্রম করিয়া হাশরের ময়দানে উপনীত হইব। সেইখানেই বা কেমন করিয়া হিসাব-নিকাশ প্রদাণ করিব? এই চিন্তায় অধীর হইয়া সে হযরত বড়পীর (আ:) সাহেবের নিকট কাঁদিয়া কাঁদিয়া আরজ করিল “হুজুর”। কবরের শাস্তি এবং মনকির-নকিরের প্রশ্ন হইতে কিভাবে নিস্তার পাইতে পারি?

হযরত বড়পীর (আ:) সাহেব বলিলেন: তুমি কোন ভয় করিও না। চিন্তার কোন কারণ নাই। তোমাকে সমাহিত করা হইলে যখন মনকির নকির তোমার নিকট আসিবে তুমি কেবল তাঁহাদের নিকট আমার নামটি বলিয়া দিবে। দেখিবে তাঁহারা আমার নাম শুনিয়া তোমাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া চলিয়া যাইবে।সাবধান তাঁহাদের নিকট আমার নাম ব্যতীত আর কোন কিছুই বলিবে না।

কিছু দিন পর উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হইল। মৃতকে দাফন করিয়া লোক জন স্ব-স্বগৃহে ফিরিয়া আসিল। মুনকির-নকির ভয়া বহ মুর্তি ধারন করিয়া হুংকার ছাড়িয়া মৃত ব্যক্তির নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। ফেরেশতাদ্বয় তাঁহাকে জীজ্ঞাসা করিল “তোমার ধর্ম কি”? সে উত্তর করিল, আমার ধর্ম হযরত বড়পীর মুহিউদ্দিন আব্দুলকাদের জিলানী (আ:)। ফেরেশতাদ্বয় এই উত্তর শুনিয়া হতবাক হইয়া গেল।

অত:পর তাহারা বারে ইলাহীকে আরজ করল “হে আসমান জমীনের প্রতিপালক। তুমি প্রকাশ্য ও লুকায়িত সকল কিছুই অবগত আছ। তোমার নিকট কোন কিছুই গোপন নাই। আমরা যে ব্যক্তিকে প্রশ্ন করিলাম সে তোমার প্রিয় বান্দা হযরত বড় পীর মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (আ:) এর নাম ব্যতীত আর কিছুই জবাব দিতেছে না। এখন তাঁহার ব্যপারে আপনার নিকট হইতে যাহা আদেশ হইবে আমরা তাহা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিব।

তখন পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার নিকট হইতে আদেশ হইল:” আমার পরম প্রিয় বান্দা আমার বন্ধুর নামের গুণে আমি তাঁহার কবরের আজাব মাফ করিয়া দিলাম”। (সুবহানাল্লাহ)। এবং ইহাও জানিয়া রাখ যে, আমি তাঁহাকে অতিশয় নিরাপদের সহিত পুল ছিরাত পার করাইয়া হিসাব-নিকাশ হইতে নিস্কৃতি দিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদাণ করিব। প্রতিপালকের আদেশ পাইয়া মুনকির-নকির তথা হইতে চলিয়া গেল। পরক্ষণেই মৃত ব্যক্তির কবর বেহেশতের সুশীতল সমীরণে মুখরিত হইয়া এক মনমুগ্ধ কর স্বর্গোদ্যানে রুপান্তরিত হইয়া গেল।

সুত্র: “হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (আ:) এর জীবনী”
নিবেদক: পোষ্টকারী, সবুজ কাদরী।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel