দায়েমী সালাত বা সর্বক্ষণিক নামাজ:
সর্বক্ষণিক সালাত তথা ধ্যানযোগই হলো আত্মদর্শনের এক মাত্র পথ। আমাদের প্রতিটি চিন্তা ও কর্মে উপর এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করবার বিষয়ে ফকির লালন শাহ্ আত্যধিক গুরুত্ব দেন। আত্মদর্শনের সাধনায় শিরিক অর্থাৎ সাতটি ইন্দ্রিয়ের দরজা দিয়ে আগত বিষয়মোহের কালিমা থেকে মনকে মুক্ত করার জন্য দায়েমী সালাত বা সর্বক্ষণিক ধ্যানযোগের মাধ্যমে অনুদর্শনের আহবান লালন দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আত্মদর্শন ছাড়া মুক্তির কোন পথ নেই।।
কোরানের রূপক ভাষার আড়ালে লুক্কায়িত দায়েমী সালাত রাজশক্তির আরোপিত ওয়াক্তিয়া নামাজের ঢক্কা নিনাদে চাপা পড়ে গেছে। ফকির লালন তাঁর মহাসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কোরানের সর্বক্ষণিক ধ্যানের গুরুত্ব নানাভাবে ব্যক্ত করেন:
আশেক রূপ হৃৎকমলে
দেখো আশেক বাতি জ্বেলে
কিবা সকাল কিবা বৈকাল
দায়েমীর নাই অবধারী।।
পড়রে দায়েমী নামাজ এইদিন হলো আখেরী।।
সালেকের ব্যহ্যপনা
মজ্জুবী আশেক দিওয়ানা
আশেক দেলে করে ফানা
মশুক বৈ আন্যে জানে না
আশার ঝুলি লয়ে সে না
মাশুকের চরণ ভিখারী।।
কেফায়া আইন জিন্নি
একই ফরজ রূপ নিশানী
দায়েমী ফরজ আদায়
যে করে তার নাই জাতের ভয়
জাত এলাহীর ভাবে সদাই
মিশেছে যে জাতে নূরী।।
আইনী অদেখা তরিক
দায়েমী বরজখে নিরিখ
সাঁই সিরাজ হকের বচন
ভেবে বলে ফকির লালন
দায়েমী সালাতী যে জন
শমন তাহার আজ্ঞাকারী।।
সূত্র: লালনসমগ্র
ভূমিকা: আবদেল মাননান-পৃষ্ঠা =৬২