সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ এর বাণী ও কালাম
মরমী সাধক কবি জালাল উদ্দিন খাঁ ব্রিটিশ ভারতের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি গ্রামে ১৮৯৪ সালে ২৫ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এবং ১৯৭২ সনের ৩১ জুলাই বাংলা ১৬ই শ্রাবণ, ১৩৭৯ দেহত্যাগ করেন। নিজ গ্রামের বাড়ীর আঙ্গিনায় তার মাজার অবস্থিত।
“মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এই মন্ত্রণা কে দিয়েছে? মানুষ ভজ কোরান খোঁজ, পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে।”
“ওমন তালাশ কর তারে, যার তরে ভজনা কর থাকিতে এই সংসারে।”
“কেহ করে বেচাকেনা, কেহ কান্দে রাস্তায় পড়ে, ধরবি যদি তারে চলো মুর্শিদের বাজারে।”
“আমি ধন্য বলি তারে/আপন দেশে যে বসে চিনতে পারে আপনারে।”
“অসময়ে ডুবলো তরী, কামিনীর ঐ কাম সাগরে। সব দেশেরই সকল মানুষ, এইখানেতেই ডুবে মরে।”
“মানুষে করিছে কর্ম, কত পাপ কত ধর্ম, বুঝিতে সেই নিগূঢ় মর্ম, মন-মহাজন মধ্যে আছে”
“কি সুরত বানাইলে খোদা রূপ মিশায়ে আপনার। এই ছুরত দোজখ যাবে, যে বলে সে গোনাগার।”
“চোর গেছে চুরি করতে, মালিক পড়ছে ধরা। হাইকোটেতে বিচার করে, হাকিম তিনজন মরা।”
“মুর্শিদের ই নামটি ধরো নিজের ঈমান ওজন করো। বিসমিল্লাহ কে চাপা রাখো হৃৎপিণ্ডের ভিতরে, দুই চোখের পানি দিয়া যায় কি পাওয়া তারে, সাথে থাকলে মন মহাজন কিনা হইতে পারে।”
“এই জগতের বন্দীশালায়, ঘুম দিয়েছো যে যথায়। জালাল বলে এই দেশে আর, থাকতে সাধ্য নাই কাহার,
মন করে নেও খুব পরিস্কার, রোগ ব্যাধি না ধরবে তোরে।”
“খাঁটি হলে সবই খাটি, তা না হলে ছালি মাটি। অনর্থক এ লাঠালাঠি দল সাজাইয়া দুনিয়ায়।”
“কোনখানে করিবে সেজদা জায়গা নাই আর দুনিয়ায়। শয়তান লইয়া করলে সেজদা কবুল হবেনা দরগায়।”
“মিছামিছি মূল্য দিস না বাক্স ভরা কিতাবের, কোরআন পড় তৌহিদ কর চরন ধর মুর্শিদের। কিতাব তোমার কালির লেখা, চোখ ভুজিলে যায় না দেখা, অন্ধ হইয়া রইলি একা মানুষ থুইয়া পিরীতের।”
“মগজেরই ঊর্ধ্বভাগে রাজার হয় বসতি, নাভির নিচে আছে জান প্রজাদের স্থিতি, নাসিকাতে পবণ মন্ত্রী চলাফেরা সদায় করে রে।”
“মরলে পরে মানুষ হবে, আর কি ভাবে, নিজ-ছুরতে দেবে ধরা। নিজ-ছুরতে দেখিবার তরে, ঘরে ঘরে কতই ছবি বাক্সে ভরা। মরিতে কেহই চায় না, পথে যায় না, যে পথে তার তালাশ করা।”
“যেয়ে দেখ যমুনার কূলে, সাঁই নিরঞ্জণ আছে গোপন, মিশিয়ে তার রাঙা জলে।”
“রয় না গৃহ ধর্মনীতি, কামে টানে প্রেম পীরিতি নিভাইয়া জ্ঞানের বাতি, ফেলিয়া যায় আঁধার ঘরে।”
“মানুষ রতন করহে যতন, যারে তোমার প্রাণে চায়। ভক্তি-বিশ্বাস প্রেম, এক-আধারে তিন যাহার কাছেতে বোঝ, থাকবে চির দিন। চ-াল কিবা হউক না মোমিন, চেয়ে থাক চরণ আশায়।”
“আমায় তুমি দোষী বল তুমি কি আর বড় গুণী? তুমি আমায় বেশি চিন, আমিও হয়তো কিছু জানি। বলছো আমরা পাপ করতেছি, কই রাখবে তোর লিপিখানি, ভালো-মন্দ যা করে যাই আমি কই তোমার করনী।”
“পাপ না করলে মাফ করবে কি তক্তে তুমি বসিয়া, মাফ না করলে রহমানি নাম যাবে তোমার মুছিয়া, পুণ্য করে কাজ কি আছে তোর কাছে হাত পাতিবার। পাপীর আছে তোমার কাছে দয়া চাইতে অধিকার।”
“কেহ যদি হজ্ব করিবা, দেখবে আপন ঘরে কাবা। অতিশয় মনোলোভা দিল দরিয়ার পারে; ঘরের ভেতর ছয় মদিনা, কেন যাও মন দূরে। চোখ মুদিয়া চেয়ে দেখ, ফেরেশতায় সেজদা করে। জালাল কয় শুভবাণী আবে হায়াতের পানি দেহের মধ্যে আছে জানি, চিনতে কয়জন পারে।”
“যে পিরিতে দেওয়ান হাফেজ, গাউছুল আজম, শামছ-তবরেজ, শরাতে হয় মুনসুর খারেজ, শুলেতে যার কোরবানি। সেই বাতাস লাগাওহে অঙ্গে, জালাল উদ্দিন তোমার সঙ্গে নাচিয়ে গাইতো প্রেম তরঙ্গে যেখানে পীর জিলানি।”