হোমপেজ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল অধিক কথা বলার কুফল (দলিল সহ)

অধিক কথা বলার কুফল (দলিল সহ)

Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

“সে যেই কথাই উচ্চারন করে, তাহাই গ্রহন করার জন্য তাহার নিকট প্রহরী (ফেরেশতা) সদা প্রস্তুত রহিয়াছে”।
-সূরা ক্বাফ- ১৮

জিহ্বা মানুষের একটি মূল্যবান অংগ।জিহ্বা দ্বারা মানুষ মনের ভাবকে প্রকাশ করে। আল্লাহর নির্দেশিত পথে যদি জিহ্বাকে ব্যবহার করা যায়, তবেই কল্যান, আর যদি জিহ্বাকে সংযত রাখা না যায়, তবে ইহা মানুষের জন্য ধ্বংসের কারন।

বিখ্যাত গ্রন্থ তাবরানি ও বায়হাকি শরিফে এসেছে,
” বনী আদমের অধিকাংশ গোনাহ হইল তাহার জিহ্বার মধ্যে”।

হযরত মোয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন,

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

সবোর্ত্তম আমল কোনটি? তিনি নিজ জিহ্বা মোবারক বাহির করিয়া উহার উপর আঙ্গুল স্থাপন করিলেন, অর্থাৎ নীরব থাকা সর্বোত্তম আমল।

-তাবরানী শরীফ

“যেই ব্যক্তি শান্তি পছন্দ করে, সে যেন নীরবতা অবলম্বন করে”।
( বায়হাকী)

হযরত সাঈদ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) বলেন,

“যখন সকাল হয় তখন মানুষের সকল অঙ্গ জিহ্বাকে বলে, আমাদের বিষয়ে তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তুমি ঠিক থাকিলে আমারও ঠিক থাকিব। আর তুমি বক্র হইলে আমাদের অবস্থাও অনুরূপ হইবে”। ( তিরমিজী)

অধিক মানুষ জাহান্নামে যাওয়া প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“জিহ্বার ফসলই মানুষকে উপুড় করিয়া দোজখে নিক্ষেপ করে”

হযরত ওকবা বিন অমর (রাঃ) বলেন,

একবার আমি নবী (সাঃ)-র খেদমতে আরজ করিলাম, নাজাতের উপায় কি, তিনি এরশাদ করিলেন, ” জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রন রাখো”।

হযরত আব্দুল্লাহ ছাকাফী (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-র খেদমতে আরজ করিলেন,

” হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোন বিষয় বলিয়া দিন যেন সারা জীবন উহার উপর আমল করিতে পারি। তিনি বলিলেন, ” তুমি বল, আল্লাহ আমার প্রতিপালক। অতঃপর উহার উপর কায়েম থাক।

তারপর ছাকাফী (রাঃ) আরজ করিলেন, আপনি আমার সম্পর্কে কোন বিষয়টির অধিক আশংকা করিতেছেন? জবাবে তিঁনি স্বীয় জিহ্বা মোবারক স্পর্শ করিয়া বলিলেন, ইহা সম্পর্কে। ( সুনানে নাসাঈ)

হযরত সাফওয়ান বিন সলীম (রাঃ) হইতে বর্নিত,

একদা রাসূল (সাঃ) এরশাদ করিলেন, ” আমি কি তোমাদিগকে এমন এবাদতের কথা বলিব, যাহা খুবই কল্যানয়ময় এবং শরিরের জন্যও অত্যন্ত সহজ? (সেই এবাদত হইল) চুপ থাকা এবং উত্তম স্বভাব।”
– ইবনে আবিদ্দুনয়া

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্নিত, রাসূলে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেন,

” যেই ব্যক্তি আল্লাহকে এবং পরকালকে বিশ্বাস করে, সে যেন ভাল কথা বলে বা নীরব থাকে”।

এই জন্য বলা হয়ে থাকে,

“নীরব থাকা হইল হেকমত ও প্রজ্ঞা। কিন্তু কম লোকই উহার উপর আমল করে।

একব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ)-এর খেদমতে আরজ করিল,
আমাকে এমন কোন আমল বলিয়া দিন, যাহা দ্বারা আমি বেহেশত লাভ করিতে পারিবো।
হযরত ঈসা (আঃ) বলিলেন, তুমি কখনো কথা বলিও না। লোকটি আরজ করিল, ইহা তো সম্ভব নহে।
হযরত ঈসা (আঃ) বলিলেন, তুমি ভালো কথা ব্যতীত অন্য কিছু বলিও না।

হযরত ঈসা (আঃ) আরো বলেন, ইবাদতের দশটি অংশের মধ্যে নয়টি নীরব থাকার সহিত সংশ্লিষ্ট এবং একটি মানুষের সঙ্গ হইতে পৃথক থাকার সহিত।

হযরত সুলাইমান (আঃ) বলেন,

(মনে কর) কথা বলা যদি রূপা হয়, তবে চুপ থাকা যেন স্বর্ন।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কথা বলা হইতে বিরত থাকার জন্য মুখের ভিতর কংকর পুরিয়া রাখতেন। তিনি নিজের জিহ্বার দিকে ইশারা করিয়া বলিতেন, ইহা আমার অনেক ক্ষতি করিয়াছে।

একবার পারস্য, রোম, হিন্দুস্তান ও চীন এই চার দেশের বাদশাহ একান্তু বৈঠকে মিলিত হলেন। জিহ্বার ব্যবহার বা বেশি কথা বলা নিয়ে চার বাদশাহ নিজের মতামত দিলেন।

প্রথম বাদশাহঃ
আমি কথা বলিলে লজ্জিত হই, আর কথা না বলিলে আমাকে লজ্জিত হইতে হয় না।

২য় বাদশাহঃ
আমি যখন কোন কথা বলিয়া ফেলি, তখন আমি সেই কথার নিয়ন্ত্রনে চলিয়া যাই এবং উহা আর আমার নিয়ন্ত্রনে থাকে না। আর যতক্ষন সেই কথাটা না বলি ততক্ষন উহা আমার নিয়ন্ত্রনে থাকে।

৩য় বাদশাহঃ
আমি এমন বক্তার কথায় বিস্মিত হই যে, সেই কথাটি যদি তাহার প্রতি ফিরাইয়াও দেওয়া হয় তবু ও সে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। আর ফিরাইয়া না দিলেও সে উহা দ্বারা লাভবান হইবে না।

চতুর্থ বাদশাহঃ
যেই কথাটি এখনো বলা হয় নাই, উহা প্রত্যাহার করিতে আমি সক্ষম, কিন্তু একবার মুখ হইতে বাহির হইয়া গেলে উহা আর প্রত্যাহার করা যায় না।

বৈঠকে চার বাদশাহ বেশি কথা বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা মারাত্নক ক্ষতিকর এই ব্যাপারে একমত হলেন এবং চার বাদশাহ ই স্বীকার করলেন, রাজ্য পরিচালনার থেকে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখা আরো বেশি কঠিন।

মুমিনের জিহ্বা অন্তরের পিছনে। সে কথা বলার পূর্বে চিন্তা করিয়া তবে কথা বলে। পক্ষান্তরে মোনাফেকের জিহ্বা অন্তরের আগে থাকে। সে চিন্তা-ভাবনা করিয়া কথা বলে না। যাহা মনে আসে তাহাই বলে।

শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান,

“খোদা প্রাপ্তির পথে অল্প আহার ও অল্প নিদ্রার সাথে সাথে অল্প কথার অভ্যাস করিতে হয়। অধিক কথা বলায় বহুবিধ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। অধিক কথা বলার কুফল নিম্নরূপঃ

(ক) যাহারা অধিক কথা বলে, ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক, তাহারা পরনিন্দা- পরচর্চা বা গীবত করিয়া থাকে।

(গীবত কি? কোন ব্যক্তির অসাক্ষাতে তাহার দোষ-ত্রুটির আলোচনা করাকে গীবত বলে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, ” গীবত জেনা হইতেও কঠিনতম গোনাহ।” সাহাবাগন আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! গীবত জেনা হইতেও কঠিনতর? তিঁনি বলিলেন, ” কোন ব্যক্তি জেনা করিয়া তওবা করিলে আল্লাহতায়ালা তাহার তওবা কবুল করেন এবং তাহাকে মাফ করিয়া দেন, কিন্তু গীবতকারীর জন্য তওবার কোন বিধান নাই, যে পর্যন্ত না যাহার গীবত করা হইয়াছে, সে মাফ করে।)

(২) মিথ্যা কথা বলে।

(মিথ্যা কথা বলাও জঘন্য পাপ। মিথ্যা কথায় দেলে তিল সদৃশ্য কাল দাগ পড়িয়া দেলকে অন্ধকার আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে)

(৩) ওয়াদা ভংগ করে, কারন ওয়াদা দেওয়ার সময় চিন্তা-ভাবনা না করিয়াই ওয়াদা দেয়। পরে আর রক্ষা করিতে পারে না।

(৪) অতিরিক্ত কথা বলার কারনে আসল কথাকে অতিরঞ্জিত করে।

(৫) বেহুদা কথায় লিপ্ত থাকে।

(৬) হাস্য- কৌতুকে সময় কাটান।

ফলে যিনি অধিক কথা বলেন, তাহার দেল মারা যায়।

হযরত শেখ সাদী (রহঃ) বলেন,

” তোমরা কথা আদন (আদন একটি বেহেশতের নাম। নবী রাসূল (আঃ), ওলী- আল্লাহগন ও শহীদগন বেহেশত আদনে অবস্থান করিবেন।) এর চেয়েও যদি মূল্যবান হয়, তথাপিও তুমি যদি বেশি কথা বল, তবে তোমার দেল মারা যাইবে। দেল অন্ধকার আচ্ছন্ন হইবে।”

জিহ্বাকে মূলত আল্লাহর গুনগান করার জন্যই সৃষ্টি করা হইয়াছে। মহা কবি হাফেজ বলেন,

” যে দিল করুনা করি রসনা লোলিত
কেনরে না গাও তার মহিমার গীত”।

আল্লাহপাক আমাদের জিহ্বাকে সংযত করা এবং সেই সাথে মহা দয়াবানের গুন কৃর্তন করার তৌফিক দান করুন।

বিনিত, সুজন শাহজী