মরিয়মের সিন্দুক এবং ইউসুফের প্রতিজ্ঞা।
বহুকাল আগের কথা। এক পবিত্র জনপদে বাস করতেন এক মহীয়সী নারী, যাঁর নাম হযরত মা মরিয়ম (আঃ)। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ আর ধর্মপ্রাণ, কিন্তু তাঁর জীবনে এমন এক অলৌকিক ঘটনা ঘটতে চলেছিল, যা কেউ কল্পনাও করেনি।
বয়স যখন কৈশোরে এলো, তখন তাঁর গর্ভে এক মহামানব শিশুর আগমন। এই গোপন কথা তাঁর মনের সিন্দুকে যত্নে ঢাকা। এই সময়টায় তাঁর বিবাহের প্রস্তাব এলো। পাত্র ছিলেন এক সৎ, ভালো মানুষ— ইউসুফ বিন ইয়াহুদা। মরিয়ম (আঃ) ভাবলেন, “আমি তো এখন গর্ভবতী। ইউসুফ নিশ্চয়ই আমাকে আর বিয়ে করবে না।” তাঁর মন দুঃখে ভরে উঠলো। তিনি ভাবলেন, এই কঠিন সময়ে তিনি একা হয়ে গেলেন।
কিন্তু ইউসুফ বিন ইয়াহুদা ছিলেন ভিন্ন ধাতুতে গড়া। যখন তিনি সব কথা জানতে পারলেন, তখন সমাজের রক্তচক্ষু বা লোকনিন্দার ধার ধারলেন না। তিনি এগিয়ে এলেন, মরিয়ম (আঃ)-কে বুকে টেনে নিলেন। গভীর ভালোবাসায় ও বিশ্বাসে বললেন, “যা-ই ঘটুক না কেন, আমি তোমাকেই বিবাহ করবো। তোমার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।”
তারপর তাঁদের বিয়ে হলো। কিছুকাল পরেই এই পৃথিবীতে এলেন সেই মহিমান্বিত শিশু— ঈসা (আঃ)।
ইউসুফ ও মা মরিয়ম (আঃ) নতুন শিশুটিকে কোলে নিলেন। তাঁরা জানতেন, এ শিশু সাধারণ নয়। তাঁরা তাঁকে আদর করে বললেন, “তুমি একদিন পয়গম্বর হবে, তুমি হবে রূহুল্লাহ্ (আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসা আত্মা)।” এভাবেই, ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা আর অলৌকিক আশ্বাসের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)—একদিকে মা মরিয়মের ত্যাগ, অন্যদিকে ইউসুফের শর্তহীন গ্রহণ।