গুরু যেভাবে শিষ্যকে পাপ মুক্তি দান করেন
একদা গৌতম বৌদ্ধ কোনো এক গোত্রকে সত্যের সন্ধান দেওয়ার জন্য কিছু উপদেশ দিলেন, তখন তারা গৌতম বৌদ্ধকে নানাভাবে গালাগালি করল, কারন তারা পূর্বেই অনেক পাপে জর্জরিত ছিল এবং তারা ভাবতো এই পাপের পথ হতে কেউ তাদের বের করতে পারবে না, কোনো উপায়ও নাই। তখন গৌতম বৌদ্ধ তাদের নিকট হতে ফিরে আসতেছিলেন, আর এমন সময় একটা ঘরে আগুন লাগলো। আর ঐ ঘরে ছিল ছোট একটি ছেলে। ঘরের দরজায় ও তার আশেপাশে আগুন লেগে গিয়েছিল বিধায় দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশের উপায় ছিল না। তখন গৌতম বৌদ্ধ আবার সেখানে গেলেন। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাস করল ঘরের কি আর কোনা দরজা আছে কি না যা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করা যাবে। তখন একজন বলল যে দরজা নেই আর, তবে অন্য পাশে ছোট একটি জানালা আছে, কিন্তু সেটা আয়তনে ছোট হহওয়া সেটা দিয়ে ঘরে প্রবেশ সম্ভব না। তখন গৌতম বৌদ্ধ তাদের বলল যে ‘সেটা দিয়ে আমরা প্রবেশ করতে না পারি, শিশুটি ত বের হতে পারবে কারণ শিশুটির চেয়ে জানালার আয়তন বড়”। তখন গৌতম বৌদ্ধ জানালার পাশে দাড়িয়ে শিশুটিকে ডাকলো তার বাবার কাছে আসার জন্য। শিশুটি জানালার পাশে আসলে শিশুটিকে জালানা দিয়ে বের করে আনা হল। ফলে শিশুটি বেঁচে গেল।
অতঃপর গৌতম বৌদ্ধ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে “প্রতিটি মানুষ এভাবেই পাপের মধ্যে ডুবে আছে, সেখান থেকে তাকে কেউ বের করতে পারে না, কিন্তু ছোট এমন একটু দরজা খোলা থাকে, যা দিয়ে চাইলে সেই পাপী ব্যক্তি পাপ থেকে বের হয়ে সুপথে আসতে পারে। আর সেই মুক্তি ছোট দরজাটি আমি শুধু খুঁজে বের করে সত্যের দিকে সবাইকে ডাকি, যারা আমার ডাকে সাড়া দেয়, তারাই পাপ হতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।”
শিক্ষাঃ
মানুষ নানা ধরনের পাপ করে। পাপ করতে করতে এমন একটি অবস্থা তৈরি হয় যে সেই পাপী ব্যক্তিটি ভাবতে থাকে যে তার এই পাপের কোনো ক্ষমা নেই, প্রভু তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এই পাপের পথ হতে তার সুপথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কেউ কেউ এতোই পাপে নিমজ্জিত হয় যে সুপথে আসার কথা চিন্তাও করেনা। ঠিক সেই সময় একজন মহামানব সেই পাপী ব্যক্তির মনে আশার আলো জ্বালায়, ভিতরের সুপ্ত মনুষত্বকে জাগিয়ে তুলে ধীরে ধীরে। কেউ কাউকে পাপ হতে মুক্তি দিতে পারে না, কিন্তু পাপ হতে ফিরিয়ে আনতে পারে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ে সত্যের প্রদীপ জ্বালিয়ে। কারন প্রতিটি মানুষের মাঝেই মনুষত্ব রয়েছে। কারন বিন্দু পরিমান মনুষত্ব না থাকলে সে মানব কূলে জন্ম গ্রহন করত না। কিন্তু পাপ করতে করতে মনুষত্ব নির্জীব ও শক্তিহীন দুর্বল হয়ে পরে। কিন্তু যখন কোনো মহান ব্যক্তি সেই মনুষত্বকে অনুপ্রেরণা দিয়ে জাগিয়ে তুলে, তখন সেই পাপী ব্যক্তিটিও একজন সোনার মানুষের রূপান্তর হয়।
একজন গুরু তার পাপী ভক্তকে ঠিক এভাবেই কুপথ থেকে ফিরিয়ে সুপথে চালিত করেন। আর এইজন্যেই জীবন চলার পথে একজন সৎগুরু আবশ্যক।
লেখাঃ DM Rahat
YouTube: Sufism BD