আত্মার প্রকৃত পরিচয়

আত্মার প্রকৃত পরিচয়

মানুষ তার পরিধির ভেতরে সবচেয়ে বৃহৎ সত্তা। সত্তা খুঁজে পেতে, তাকে মাপা যায় না। তাই আত্মজ্ঞানী সেই মানুষই, যিনি সত্তার পরিধির বাইরে বেরিয়ে নিজের সীমাকে অতিক্রম করেন। প্রকৃত অর্থে, সীমা শুধুমাত্র কল্পনা, যা মানব মনের সৃষ্টি।

জীবনের উদ্দেশ্য এবং কৌশল

জীবন কেবল একটি কৌশল নয়, বরং এক অনন্ত পরীক্ষার নাম। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হলো নিরন্তর খোঁজ; কখনো উত্তর, কখনো প্রশ্ন। এই খোঁজ ত্যাগের মাধ্যমে একেবারে নতুন এক সত্যকে উদঘাটিত করে। এই খোঁজ শেষ হয় না, কারণ নিজের মধ্যে এক গহীনে পৌঁছানো অসম্ভব নয়, চিরকাল ধারণ করা যায় না। তাই, যে সন্ধানী হয়, সে কখনোই পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না, কারণ তার অনুভবের পরিধি সর্বদাই বিস্তৃত হয়।

শান্তি এবং শক্তি

শান্তি, যা বাহ্যিক শাস্তি বা সাময়িক স্থিতির সাথে যুক্ত, কখনোই প্রকৃত শক্তি নয়। প্রকৃত শক্তি কেবল ভিতরের স্থিরতায় বিদ্যমান, যেখানে বাহ্যিক কিছুই তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। শান্তির বীজ তখনই বেড়ে ওঠে যখন মন তার অস্থিরতাকে হারিয়ে নিজের মধ্যে নিস্তব্ধতা খুঁজে পায়। এটি সেই শক্তি, যা মনের মাঝে অদৃশ্য কিন্তু অপ্রতিরোধ্য; যার কোনো সীমানা নেই, তা সমস্ত সময় এবং স্থানকে একত্রিত করে।

প্রেমের পথ এবং তার মহিমা

প্রেম কোনো প্রকার কৃতিত্ব নয়, এটি এক নিরন্তর প্রবাহ যা নিজস্ব শক্তি দ্বারা সমস্ত অস্তিত্বের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। যখন এক মানুষ অপরের প্রতি গভীর প্রেম অনুভব করে, তখন সে সেই প্রেমের অমৃত পান করে যা তাকে একেবারে একাত্ম করে দেয় সৃষ্টির সাথে। কিন্তু প্রেমের প্রকৃত রূপ বোঝা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। প্রেম হলো এক ঈশ্বরীয় শক্তি, যা না দেখেই একে অন্যকে কাছে নিয়ে আসে। এর আড়ালে কোনো নাম, কোনো পরিচয় থাকে না, শুধু এক অন্তহীন মায়াজাল, যা কখনো ভেঙে পড়বে না।

অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস

অহংকার হচ্ছে সীমাবদ্ধ মনোভাব, যেখানে আত্মবিশ্বাসের বিকৃত রূপ প্রতিভাত হয়। যখন কোনো ব্যক্তির ধারণা থাকে যে সে স্বতন্ত্র, সে তখন নিজেকে অন্য সকলের থেকে পৃথক করে দেয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস তখনই শক্তিশালী যখন তা নিঃস্বার্থভাবে আসে, যেখানে অন্য সকলের সাথেও নিজের পরিচয় একই থাকে। যে অহংকে নিয়ে আসে সে জানে না যে আসলে তার নিজের অস্তিত্বও অন্যের অস্তিত্বের মধ্যে রয়েছে।

আত্মনির্ভরশীলতা এবং নির্ভরশীলতা

যে নিজের উপর নির্ভরশীল সে কখনোই তার সীমা চিহ্নিত করতে পারে না, কারণ নির্ভরশীলতা এক অবস্থা, যা স্বাধীনতার দিকে পথ দেখায়। কিন্তু, সেই নির্ভরশীলতা যদি মনের পরিপূর্ণতা না থেকে আসে, তবে তা এক অসীম দ্বন্দ্বের সূচনা। নির্ভরশীলতা কেবল তখনই প্রকৃত হয়ে ওঠে যখন সে কোনো বাহ্যিক শক্তির উপর থেকে নিজের ভিতরের শক্তির প্রতি ফিরে আসে।

জীবন এবং মৃত্যু

জীবনকে যদি আমরা একটি পরীক্ষার নাম মনে করি, তবে মৃত্যু তার ফলস্বরূপ একটি উত্তীর্ণতার চিহ্ন। কিন্তু মৃত্যু কি আসলেই শেষ? নাকি তা জীবনচক্রের একটি অংশ যেখানে আমরা আমাদের সকল কৃত্রিমতার মাঝে আসল সত্যকে খুঁজে পাই? মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জীবন তার প্রকৃত অর্থ পায়, কারণ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেকে খুঁজে পাই এক নতুন উদ্ভাসিত রূপে।

সৃষ্টির ধর্ম এবং তাৎপর্য

সৃষ্টি কখনোই শুধুমাত্র একটি শারীরিক ঘটনার নাম নয়। এটি একটি আত্মিক পরিবেশ, যেখানে প্রতিটি ছোট বড় কিছু আমাদের উপলব্ধির দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সৃষ্টির মধ্যে যে রহস্য রয়েছে, তা আমাদের মন, আমাদের চেতনাকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। সৃষ্টির মাঝেই আমাদের আধ্যাত্মিক বেড়ে ওঠা ঘটে।

বিশ্বাস এবং মুক্তি

বিশ্বাস কেবল একটি অনুভূতি নয়, এটি আত্মার এক অমোঘ শক্তি। বিশ্বাস যখন দৃঢ় হয়, তখন তা স্রষ্টার হাত ধরে জীবনকে নতুন করে জাগ্রত করে। আর মুক্তি তখনই আসে, যখন আমরা জানি, বিশ্বাসের মূল কোনো বাহ্যিক তত্ত্বে নয়, বরং তা আমাদের নিজের মধ্যে নিহিত রয়েছে।

– ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel