পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম

অজু করার ব্যবহারিক পদ্ধতি

অজু করার নিয়ম কানুন

অজু তিন প্রকার: ফরজ, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব।

(১) ফরজ অজু: নামাজের জন্য আবশ্যক।
(২) ওয়াজিব অজু: কাবা শরিফে তওয়াফ করার জন্য।
(৩) মুস্তাহাব অজু: গোসল বা ঘুমানোর আগে এবং অন্যান্য প্রশংসনীয় কাজে।

  • ১। অজু করার নিয়ত: অজু শুরু করার আগে “বিসমিল্লাহ” বলে নিয়ত করুন, যাতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে শুদ্ধতা অর্জন করতে পারেন।
  • ২। হাত ধোয়া: প্রথমে ডান হাতের ওপর তিনবার এবং তারপর বাম হাতের ওপর তিনবার পানি ঢেলে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। (এসময় আঙুলের ফাঁক, এমনকি আংটির মাঝেও পানি প্রবাহিত করতে হবে)।
  • ৩। মুখের মধ্যে পরিস্কার করা: হাতের তালুতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়ার সাথে কুলি করতে হবে, যেন পুরো মুখ পরিষ্কার হয়ে যায়।
  • ৪। নাকের ভিতরে পরিষ্কার করা: তারপর ডান হাতে পানি দিয়ে নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে বাম হাতের আঙুল দিয়ে চেপে তিনবার নাক পরিষ্কার করে নিবেন।
  • ৫। মুখমণ্ডল ধোয়া: তারপর পুনরায় দুই হাতে পানি নিয়ে পুরো মুখমণ্ডল তিনবার ধুয়ে ফেলুন, যাতে মুখ সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়।
  • ৬। হাতের বাহু ধোয়া: প্রথমে বাম হাত দিয়ে ডান বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার এবং পরে ডান হাতে পানি নিয়ে বাম বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিন।
  • ৭। মাথায় মাসেহ (মুছে ফেলা): দুই হাতে পানি নিয়ে মাথার উপর মাসেহ করতে হবে। পানি দিয়ে সামনে থেকে পেছনে এবং পেছন থেকে সামনে একবার মুছে নিন।
  • ৮। পা ধোয়া: শেষে বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের নিচ, আঙুলের ফাঁক এবং পায়ের অংশ ধুয়ে দিন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম পায়ের ওপরও একইভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এভাবে আপনি অজু করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবেন, যা আপনার শুদ্ধতা অর্জনে সাহায্য করবে এবং নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পালনে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি তৈরি করবে।

এক নজরে:-

  • বিসমিল্লাহ্‌ বলে শুরু করা।
  • দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। (৩ বার)
  • কুলি করা। (৩ বার)
  • পানি দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্কার করা। (৩ বার)
  • সমস্ত মাথা মসেহ্‌ এবং কানের সংলগ্ন স্থান মসেহ্‌ করা। (১ বার)
  • হাত ও পায়ের আংগুলের মধ্যে ফাকা স্থান হাতের আংগুল দিয়ে ধোয়া। (১ বার)

নামাজের নিয়ম ও রাকাআত সংখ্যা:

আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। দিনের শুরু যে নামাজ দিয়ে হয় সেটি ফজরের নামাজ। প্রতি ওয়াক্তের নামাজের রয়েছে আলাদা আলাদা নিয়ম। আপনি যদি নিয়মগুলো না জেনে নামাজ পড়েন তাহলে আপনার নামাজ কবুল হবে না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নাম:
১. ফজর
২. যোহর
৩. আসর
৪. মাগরিব
৫. এশা

ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম:

সময়: (সুবহে সাদেকের পর থেকে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত)।

ফজরের নামাজ মোট ৪ (চার) রাকাআত:-
২ (দুই) রাকাত সুন্নাত
২ (দুই) রাকাত ফরজ

অর্থাৎ- ফজরে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত এবং পরের দুই রাকাআত ফরজ।

ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত নামাজের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাও ইয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

যোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম:

(সুবহে সাদেকের পর থেকে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত)।

যোহরের নামাজ মোট ১২ (বারো) রাকাআত:-
৪ (চার) রাকাত সুন্নাত
৪ (চার) রাকাত ফরজ
২ (দুই) রাকাত সুন্নাত
২ (দুই) রাকাত নফল (ইচ্ছা হলে পড়বেন)

অর্থাৎ- প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত।

যোহরের প্রথম চার রাকাআত সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লা তা’আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তাআল মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

যোহরের শেষ দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকায়াতাই সালাতিজ জোহরি সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম:

আসরের নামাজ মোট ৮ (আট) রাকাআত:-
৪ (চার) রাকাত সুন্নত
৪ (চার) রাকাত ফরজ

অর্থাৎ- প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ।

আসরের চার রাকাআত ফরজ নামাযের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম:

মাগরিবের নামাজ মোট ৫ (পাঁচ) রাকাআত:-
৩ (তিন) রাকাত ফরজ
২ (দুই) রাকাত সুন্নত

অর্থাৎ- প্রথমে ৩ রাকাআত ফরজ। তারপর ২ রাকাআত সুন্নাত।

মাগরিবের তিন রাকাআত ফরজ নামাযের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা ছালাছা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

এশারের নামাজ পড়ার নিয়ম:

এশার নামাজ মোট ১৫ (পনেরো) রাকাআত:-
৪ (চার) রাকাত সুন্নত
৪ (চার) রাকাত ফরয
২ (দুই) রাকাত সুন্নত
২ (দুই) রাকাত নফল
৩ (তিন) রাকাত ওয়াজিব (বিতর)

এশার নামাজ কেউ ১৫ রাকাআত আবার কেউ ১৭ রাকাআত পড়ে থাকেন। প্রথমে ৪ রাকাআত সুন্নতে যায়েদা। পরের ৪ রাকাআত ফরজ। তারপর ২ রাকাআত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যেহেতু এশারের পরেই বিতর নামাজের সময় শুরু হয় সেহেতু অধিকাংশ মুসল্লি এশার নামাজের পর ৩ রাকাত বিতর পড়ে থাকেন। এরপর ২ রাকাত নামাজ বসে আদায় করেন। কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) এশার পর বিতর পড়লে পরে দুই রাকাত বসে আদায় করতেন।

যারা ১৭ রাকাত আদায় করেন তারা বিতরের আগে ২ রাকাত নফল আদায় করেন।

এশার চার রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

এশার দুই রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকায়াতি সালাতিল এশায়ি সুন্নাতু রাসুূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

তিন রাকাত বিতেরের নামাজের নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা ছালাছা রাকায়াতি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

নামাজ শেষে মোনাজাত করার নিয়ম:

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাও ওয়া কিনা আযাবান্নার। ওয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলা খাইরি খালক্বিহি মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহি ওয়াআছহাবিহি আজমায়ীন, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।”

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel