মন্দিরে দেবতা নাই, অন্তরে খুঁজো তাকে

মন্দিরে দেবতা নাই, অন্তরে খুঁজো তাকে

মন্দিরে দেবতা নাই, অন্তরে খুঁজো তাকে” — এই উক্তিটি একটি গভীর আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতীক। এর মধ্যে প্রতিফলিত হয় যে, ঈশ্বর বা দেবতা বাহ্যিক মন্দিরে বা কোনো স্থানে অবস্থান করেন না, বরং তিনি মানুষের অন্তরে বিরাজ করেন। এই ভাবনা পুরাণ, আধ্যাত্মিকতা, এবং সঠিক আত্ম-উন্নতির পথের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

মন্দিরের বাহ্যিকতা এবং দেবতার প্রকৃত অবস্থান:
প্রাচীনকাল থেকে মন্দিরে দেবতা বা ঈশ্বরের পূজা করা হয়েছে, কিন্তু এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেবতা বা ঈশ্বরের প্রকৃত অবস্থান মন্দিরের ভেতর বা বাহ্যিক কোনো চিহ্নে সীমাবদ্ধ নয়। মন্দির বা উপাস্য স্থান আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রার এক মাধ্যম মাত্র। বাহ্যিক উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের আশা করা হলেও, প্রকৃত ঈশ্বরত্ব মানুষের অন্তরে নিহিত থাকে।

অন্তরে দেবতা:
“অন্তরে খুঁজে তাকে” কথাটি আমাদের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা যতই বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান বা পুজো-প্রার্থনা করি না কেন, যদি আমাদের অন্তরে সত্যিকারের আত্মজ্ঞান এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সেই পূজা পুরোপুরি পূর্ণ হয় না। আত্মজ্ঞান বা আধ্যাত্মিক সচেতনতা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন বুঝতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বিরাজ করছেন এবং তিনি আমাদের আত্মার গভীরে আছেন।

অন্তরের মন্দির:
প্রাচীন সময়ের পণ্ডিতেরা বলতেন, “অন্তর হলো সবার আসল মন্দির”। বাহ্যিক দেবতা বা মন্দিরের দিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজস্ব আত্মার বিশুদ্ধতা। মানুষের অন্তরে যদি শান্তি, প্রেম, দয়া, এবং খোদার প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকে, তাহলে সেটি ইহলোক ও পরলোকের মধ্যে এক অমুল্য সম্পদ।

এখনকার দিনে অনেকেই মনে করেন যে ঈশ্বর কেবল মন্দির বা মসজিদ বা গির্জায় বাস করেন, কিন্তু আসলেই ঈশ্বরের অবস্থান আমাদের অন্তরে। যিনি আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্যশীল এবং বিশ্বজগতের প্রতি প্রেম রাখেন, তিনি ঈশ্বরের নিকটতম হয়ে ওঠেন।

বিশ্বাস ও আত্মার উপলব্ধি:
এই উক্তির মাধ্যমে আমাদের শিখতে হয় যে, আমাদের বিশ্বাস এবং অনুভূতি আত্মিক সত্তার প্রতি সঁপে দিতে হবে। বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান শুধুমাত্র মনোযোগের পথ হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের প্রকৃত উপলব্ধি তখনই হবে যখন আমরা আমাদের অন্তরের নীরবতা এবং গহীনে পৌঁছাব।
যত বেশি আমরা আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের অবস্থান বুঝতে পারব, তত বেশি আমরা জীবনে সত্যিকার শান্তি এবং সুখ অর্জন করতে সক্ষম হব।

উপসংহার:
“মন্দিরে দেবতা নাই, অন্তরে খুঁজো তাকে” — এই কথাটি আমাদের শেখায় যে, ঈশ্বর বা দেবতা বাহ্যিক মন্দিরে নয়, আমাদের অন্তরেই বিরাজ করেন। আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রা, সত্যিকারের প্রেম, এবং আত্মবিশ্বাস আমাদের অভ্যন্তরীণ মন্দিরে খুঁজে বের করতে হবে। আত্মজ্ঞান এবং ঈশ্বরের উপলব্ধি আমাদের অন্তরের সত্যকে প্রকাশ করে, যেখানে আসল শান্তি ও মুক্তি লুকিয়ে থাকে।

– ফরহাদ ইবনে রেহান
১৭/০১/২০২৫

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel