কোরানিক দর্শনে কিয়ামতঃ

কোরানিক দর্শনে কিয়ামতঃ

কিয়ামত: আপন রবের চেহারা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংস হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় কিয়ামত দর্শন। আবার দেহের মধ্যে নফসের উপর থেকে খান্নাসকে বিছিন্ন করার নামও কিয়ামত।

কিয়ামত দুই প্রকার- কিয়ামতে কবিরা, ও কিয়ামতে সগিরা। কিয়ামতে সগিরা দুই প্রকার যথা- স্বাভাবিক মৃত্যু ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক মৃত্যু। ব্যক্তিকেন্দ্রিক মৃত্যু দুইপ্রকার যথা- আত্মহনন ও মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা তথা মরার আগে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা(মুতু কাবলা আন্তা মুতু)।

কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে প্রত্যেক নফস একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে। কোরানিক দর্শনে নফস কি? মানবীয় চিন্তা, চেতনা, ধ্যান ধারণা, আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ও বিকাশের সামগ্রিক অভিব্যক্তির প্রয়াসকে নফস বলা হয়। নফস কিন্তু মৃত্যুতে নাই বা ফান হয়ে যাবে না। কারণ কোনো কিছু নাই হয়ে যায় না। আমরা জানি শক্তি তথা এনার্জির ক্ষয় নাই, লয় নাই, বিনাশ নাই, শক্তির রূপান্তর ঘটে। শক্তি এক রূপ হতে অন্যরূপে রূপান্তরিত হয়। ইহা শক্তির নিত্যতার সূত্র। ইহা বিজ্ঞানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বলা হয় নাই নফস বহুবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। শুধুমাত্র একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হল সুস্থ নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে নাকি অসুস্থ নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে? অবশ্যই অসুস্থ নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার উপযুক্ত নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ, ধীর স্থির, বিকারগ্রস্থহীন নফসই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। গুনের বিচারে নফস বহুবচন।

কোরানিক দর্শন অনুসারে আমরা তিনপ্রকার নফস দেখতে পাই যথা- নফসে আম্মারা, নফসে লাউয়ামা ও নফসে মোৎমায়েন্নাহ। এই তিন প্রকার নফসের মধ্যে কোন নফসটি সুস্থ নফস? কারণ সুস্থ নফসটি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তাই কোরানিক দর্শন অনুসারে তিন প্রকার নফস হতে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার উপযুক্ত নফসটি অনুসন্ধান করে নিতে হবে। নফসে আম্মারা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে নাকি নফসে লাউয়ামা মৃত্যর স্বাদ গ্রহন করবে? নাকি নফসে মোৎমায়েন্নাহ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে?

এই তিন প্রকার নফসের মধ্যে নফসে আম্মারা মানসিক বিকারগ্রস্থ নফস। নফসে লাউয়ামা সংগ্রামশীল তথা অনুতাপশীল নফস। একমাত্র সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই সংগ্রাম করতে পারে এবং জিহাদের ময়দান থেকে শত্রুকে প্রতিহত করে বিজয় অর্জন করতে পারে। অতএব মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে নফসে লাউয়ামা। আর নফসে মোৎমায়েন্নাহ বিজয়ী নফস। পরিশুদ্ধ নফস, পবিত্র নফস, জান্নাতি নফস, মুমিন নফস, শান্ত নফস,  সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত নফস ও পরিপক্ব নফস।

কোরানিক দর্শন কতগুলো আদেশ নিষেধ এর সমাহার। কোরানিক দর্শনে আদেশ নিষেধ শুধুমাত্র আমানুদের জন্য, এবং মুমিনদের জন্য দুই তিনটি উপদেশ রয়েছে। অলীদের জন্যও নহে, নবী ও রসুলদের তো প্রশ্ন ওই উঠে না। আমানু নফসকে বলা হয় মুজাহেদ নফস তথা সংগ্রামশীল নফস। এই খান্নাস তাড়াবার সংগ্রামশীল লাউয়ামা নফসই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। নফসে মোৎমায়েন্নাহ পরিপক্ব তথা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নফস।  যে নফস আদম তথা রবের দাস তথা বান্দা হওয়ার জন্য, রূহশক্তি উদ্ভাসিত করার নিমিত্তে, আপন নফসের উপর শক্ত লাগাম ধরে সাধনা করে যান অভিরামভাবে, ঐ নফসই তার সকল কামনা বাসনা রসনা লোভ লালসা ও মোহের আসত্তি ত্যাগ, তথা খান্নাসের আকর্ষণ হতে মুক্তি পেতে আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, সেই নফসকে নফসে লাউয়ামা তথা মরার আগে মরে যাওয়া, তথা মৃত্যুর স্বাদগ্রহণকারী নফস বলা হয়।

তাই কোরানের ৭৫নং সুরা আল কিয়ামার ০২নং আয়াতে আল্লাহপাক নফসে লাউয়ামার কসম খাচ্ছেন- (ওয়ালা উকসিমু বিন নাফসিল লাউয়ামাহ।) অর্থ: “এবং না, আমি অঙ্গীকার করিতেছি নফসে লাউয়ামার সহিত।”

এই লাউয়ামা নফসের উপরই কিয়ামত হবে। হইা কোরানিক দর্শন, কোনো উল্টা পাল্টা, গাঁজাখুরি দর্শন নয়। যেহেতু আমানু নফসকে সংস্কারের মাধ্যমে মুমিন হতে হয়। সেহেতু মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে আমানু তথা গুরুভক্ত নফস, তথা সাধক নফস।”

যে নফস মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে তাকেই বলা হয় সাধক নফস। সাধক নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করলে তার মানবজনম নিম্নমুখী হবে না। পর্যাক্রমে সে মুক্তির প্রাণে অগ্রসর হয়। আল্লাহর অনুমতিক্রমে মানবজনম শূন্য করে, জন্মচক্র হতে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। মহাপুরুষগণ জম্ম নেন না। তাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বা প্রেরিত। আমানু নফস ব্যতীত মন নিম্নশ্রেণীর জীব তথা নফস। তারা মারা যায় প্রকৃতির নিয়ামানুসারে। কিন্তুমৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না। পরীক্ষা দিতে হয় আমানু নফসকে। বিচার হয় আমানু নফসের উপর। যে নফস ভালো মন্দ পার্থক্য করতে পারে, বিচার তারই হবে। মন্দ ত্যাগ করতে পারলে হবে আদম। ত্যাগ করতে না পারলে কর্মফলের মাত্রানুসারে চৌরাশির ফেরে পড়তে হবে তথা জন্মচক্রে আবর্তিত হতে হবে। আদম হওয়ার উপযুক্ত নফস হল আমানু নফস। পরীক্ষা দিতে হবে আমানু নফসকে। পরীক্ষায় পাস করলে আদম তথা মুমিন। কারণ আদমের দেহ মাটি ভক্ষণ করে না। কারণ আদমের দেহ ঠন ঠনে পোড়ামাটির ন্যায় গঠিত। পোড়ামাটি ইটকে আর সাধারণ মাটিতে রূপান্তর করা যায় না। তাই আদম তিন পোড়ায় শুদ্ধ তথা পবিত্র হয়।

রোজ কিয়ামত

  • আসবে একদিন ঝড় তুফান, সবকিছু ভাইঙ্গা করবে খান খান। চিহ্ন বলতে রবে না,জ লোচ্ছ্বাসে কিয়ামত হবে আছে কুরানে বর্ণনা।
  • চারতরিকার খুটি দিয়া, বলায়তের রশি দিয়া, ভক্তি বিশ্বাসের গজাল মারিয়া, অনুরাগের ছানি দেওনা।
  • বিবেক জ্ঞানের বেড়া লাগাইয়া, মনের জানালা বন্ধ করিয়া, রিপুছয়জন সংযমে রাখিয়া, শ্রীরূপের রং লাগাও না।
  • চাররঙ্গের বার্নিশ করিয়া,ছিদ্রগুলি সব খাটািয়া, নয় দরজায় দারোয়ান রাখিয়া, আরশ মহল্লাহ বস না।
  • যেদিন তোমায় উঠাইয়া নিবে, দুনিয়ার কেহ না টের পাইবে, হঠাৎ করে এরূপ হইবে,সময় থাকতে কেউ ভাবে না।
  • দোষ করে,ঝড়বৃষ্টি ধরল সন্ধ্যা বেলা, শাহজাহান বসে রইল একা, ভাবতে ভাবতে অঙ্গ কালা, যায় দিন ফিরে আসে না। (সংযমের সংবিধান)
  • ফানাফিল্লাহ বাঁকাবিল্লাহ গেলে পরে,ঘূর্ণি ঝড়ে টর্নেডো ধরবে তারে, ক্ষুদ্র কেয়ামত দেখবি মোরে, তখন বিশ্বাসের রাডার ধরবি।

(স্বরূপ দর্শন: সংযমের সংবিধান )

– আর এফ রাসেল আহমেদ।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel