আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না

আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১০২
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَلَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَاَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা হাক্কাতুকা-তিহী ওয়ালা-তামূতুন্না ইল্লা-ওয়া আনতুম মুছলিমূন।

অর্থঃ হে বিশ্বাসীগণ/ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।

মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না। আহ কি মারাত্মক এবং ভয়ংকর করা কথা বলা হয়েছে, তা যদি আমরা একবার বুঝতে পারতাম তাহলে আমাদের জীবনটা ধন্য হযে যেতো। আমরা মুসলিম সমাজ ভেবেই নিয়েছি, আমি মুসলমান ঘরের জন্ম নিয়েছি তাই মুসলমান হয়ে গেছি। এই ধরনের চিন্তা চেতনা শুধু অতি ভয়ানক নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ অস্বীকার করার শামিল। ইহা সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার বিপরীতমুখী চেতনা। যা আমাদের মুসলিম জাতিকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আরে ভাই আপনি ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ার ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই ডাক্তার এবং ইন্জিনিয়ার হতে পারবেন না। এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নিবেন, নিশ্চয়ই না। তাহলে আপনি কিভাবে মনে করছেন, মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করে আপনি মুসলমান হয়ে গেছেন। তাহলে কি মুসলমান হওয়া ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ার হওয়ার চেয়েও অতি সহজ বিষয়। এইরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত শুধু আমাদের ইহকালই নয় বরং পরকালের জন্যও ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ছে। এখন আসি মুসলমান কাকে বলে এবং কিভাবে হতে হয়?

মুসলমান আরবী শব্দ এবং বাংলা শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ করা। এখন প্রশ্ন জাগে আত্মসমর্পণ আবার কি জিনিস? নবুয়াতের যুগে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হেদায়েত দেওয়ার জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ করছেন। ঠিক তদানুরূপে বেলায়াতের যুগে অসংখ্য অলী আল্লাহ প্রেরণ করছে মানুষকে হেদায়েত দেওয়ার জন্য। মোটকথা আল্লাহর মনোনীত মহামানবদের নিকট নিজের আমিত্ব স্বত্ত্বা বিসর্জন দেওয়ার নামই হলো আত্মসমর্পণ। মুসলমান হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর মনোনীত অলী আল্লাহর নিকট বায়াত হতে হবে। তারপর সেই মহামানবের দেখানো পথ অনুসরণ এবং সাধনা করে মুসলমান হতে হয়। আল্লাহর মনোনীত মহামানব অলী আল্লাহগণ মানুষকে ষড়রিপু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ এবং রাসূলকে পাওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের ভিতর ষড়রিপু অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং মাৎসর্য রয়েছে।

মানুষ যখন সাধনা করে ষড়রিপু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ এবং রাসূল পাক (সাঃ) কে পেয়ে যায়, তখনই সে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে যায়। তবে আপনি আল্লাহর মনোনীত অলী আল্লাহর নিকট বায়াত না হয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সাধনা করলেও অভিষ্ট্য গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। স্কুলে ভর্তি না হয়ে সারাজীবন লেখাপড়া করলেও যেমন সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব নয় ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহর মনোনীত মহামানবদের নিকট বায়াত হওয়া ছাড়া মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়। তারমানে আপনি বায়াত হলেই মুসলমান হয়ে গেলেন না বরং মুসলমান হওয়ার স্কুলে সবেমাত্র ভর্তি হলেন। আপনাকে কঠিন সাধনা করেই মুসলমান হতে হবে। তাই মুসলমান হওয়া অনেক কঠিন ও জটিল বিষয়। মুসলমান হওয়াকে সুফিবাদের ভাষায় উঁচু স্তরের সাধনা বলা হয়।

শুনুন জ্ঞানী এবং সুধীজন! উক্ত আয়াতে কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বিধর্মী, মূর্তিপূজারী, নাস্তিক এবং অবিশ্বাসীদেরকে বলে নাই। বরং আল্লাহ তায়ালার উপর চরম বিশ্বাসীদেরকে বলা হয়েছে। আল্লাহ কিন্তু কড়াকড়িভাবে আপনাকে ও আমাকেই মুসলমান হওয়ার জন্য হুশিয়ারী বার্তা প্রদান করছেন। শুধু কি তাই! মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করতে নিষেধ করছেন। আপনি হয়তো বা ভাবছেন, তাহলে আমার চাচা, বাবা ও দাদারা মুসলমান না হয়েই মৃত্যুবরণ করছে। আপনার ভাবনাটা অমূলক নয় বরং পবিত্র কুরআন সম্মত। আমাদের মুসলিম সমাজে কিন্তু বায়াত হওয়ার বিধানটা ছিলোই।

কিন্তু কারবালার প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইনকে শহীদ করার পর সরাসরি দয়াল রাসূলের রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের পরিবর্তে দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ এজিদি ইসলাম চালু হয়ে যায়। তখন থেকেই আস্তে আস্তে করে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ে বায়াত প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। শুধুমাত্র অলী আল্লাহগণ বন জঙ্গলে এবং নীরবে নির্যাতন সহ্য করে বায়াত প্রথা টিকিয়ে রাখছে। তাই আমরা বায়াত প্রথাকে হাস্যকর ও অবহেলিত মনে করে মূলত পবিত্র কুরআন শরীফকেই নির্বাসনে দিচ্ছি। তাই আমরা সুস্পষ্টভাবে বায়াত প্রথাকে মোহাম্মদী ইসলাম এবং বায়াত প্রথাহীনকে এজিদি ইসলাম বলে থাকি।

হে মহান আল্লাহ! তুমি আমাদের সবাইকে মুসলমান না বানিয়ে মৃত্যু দিও না। তুমি তো পরম করুনা ও দয়াময়।

নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel