তৌহিদের চুড়ান্ত রুপের লীলা খেলা।

তৌহিদের চুড়ান্ত রুপের লীলা খেলা।

“তুহি হ্যায় হিন্দু,তুহি হ্যায় মুসলমান,তুহি হ্যায় বুদখানা,তুহি হ্যায় কাবা
তোমহারা পূজন তোমহারা ভজন সবার হৃদয়ে তব সিংহাসন।”

উল্লেখিত উর্দূ প্রবন্ধে অদ্বৈতবাদের চুড়ান্ত রুপটি প্রকাশিত হয়েছে। এখানে জাত-সেফাত মিলে মিশে একাকার। অর্থাৎ স্রষ্টা ও সৃষ্টি কোনো পৃথক সত্তা নয়। যেমন বলা যায় চিনি-পানি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলে কোনটি চিনি ও কোনটি পানি তা যেমন পৃথক করা যায় না। বহু রুপের মধ্যে একেরই প্রকাশ।  ওয়াহেদ রুপে তিনি এক আবার আহাদ রুপেও তিনি বহুর মধ্যে এক। সমগ্র সৃষ্টির মূল সত্তা হওয়াতে সব কিছুর সাথে তিনি মিলে-মিশে একাকার হয়ে আছেন। জগত প্রভুর যেমন কোন জাত নেই তিনি সকল সংস্কার ও সকল ধর্মের ঊর্দ্বে বিরাজ করেন তদ্রূপ মোহাম্মদ (সা:) তার আল সহকারে তথা তার নূরের এবং রুহানী বংশধারা তথা কামেল সিদ্ধগুরুগণ সর্বযুগেই সকল সংস্কার ও ধর্মের ঊর্ধ্বে বিরাজ করেন।

এখন তৌহিদের চড়ান্ত রুপটি এমন যে- আল্লাহ-ইবলিশ-আদম এই তিনের রহস্য উন্মোচিত হলে মাথা হেট হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এখানে মাথা ঘামাতে বললে লেগে যায় গন্ডোগোল। এই তিনের রহস্যর মহা সাগরে অবগাহন না করলে শেরেক রুপ পর্দা দূরীভূত হয় না। আদম না হয় শয়তানের ধোকায় পড়ে গন্দম খেয়েছিলেন, কিন্তু ইবলিশকে শয়তান বানানোর দায়িত্ব কার?আদমকে সেজদা দেওয়া নিষেধ করার প্ররোচনা কে দিয়েছিলো?সে কোন শয়তান?অনেক প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু রহস্য লোকের সীমা লঙ্ঘন করার অধিকার আমাদের দেওয়া হয়নি।

তৌহিদের চুড়ান্ত রুপটি দর্শন করে শাহপীর চিশতী বলেছেন:- হে লীলাময়, তুমিই হিন্দু, তুমিই মুসলমান, তুমিই বুদখানা, তুমিই কাবা। তাইতো সবার আরাধনা পূজা-অর্চনা, ভজন, সাধন সবই তোমার জন্য। সবার হৃদয় সিংহাসনে আসীন থেকেও প্রতিটি আনফাসের সাথে তুমি মিশে আছ।

এ কথা শুধু প্রেমিক শাহপীর চিশতীই বলেন নাই, আরও অনেক সাধক বলেছেন,

যেমন:- আল্লাহ প্রেমিক আবরু বলেছেন:

”আপ আদম বনকে হওয়া পুতলা খুদহি বাঁন ওয়ায়ায়া-
পরদেমে খুদ ছিপকে বয়ঠে সেজদা খুদ করওয়ায়া।”

অর্থ্: আপনি আদম হাওয়া সেজে নিজেই পুতলা বানিয়েছেন–
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থেকে নিজেই সেজদা গ্রহন করেছেন।

”আপ মোল্লা বনকে কাজী আপ আনাল হক বোলা-
খুদহি মনসুর দাড় চড়হাকে আপ ঝগড়া নিভু আয়া।”

অর্থ্: আপনি মোল্লা কাজী সেজে আপনি আনাল হক বলেছেন–
মনসুর সেজে শুলিতে চড়ে আপনি ঝগড়া মিটিয়েছেন।

”মন্দির মে আপহি পন্ডিত বানি হ্যায় মসজিদ মে আপহি মোল্লা-
কিসি সে আপনি পর্দা রাখখি হ্যায় কিস্তি কো রুপ দিখাইয়া।”

অর্থ্: মন্দিরে আপনি পন্ডিত সেজে মসজিদে হয়েছেন মোল্লা, কাহাকেও দিয়েছেন আপনার দরশন আবার কাহাকেও রেখেছেন আড়ালে। কারও জন্য আপনি আজিকার প্রত্যক্ষ অনুভুতি (নগদ) আবার কারও জন্য রোজ হাশরে মৌজুদ (বাকী) কার বা সাধ্য্ আছে তোমার লীলা বুঝিবার না জানিবার যদি তুমি নিজে না বুঝাও ও জানাও।

তথ্যসূত্র: শানে পাক পাঞ্জাতন: রেজা মাহবুব চিশতী। (পৃ:১৪১-১৪২)

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel