বৌদ্ধ দার্শনিকদের মতে সাত্ত্বার মূল উপাদান সমূহ-

বৌদ্ধ দার্শনিকদের মতে সাত্ত্বার মূল উপাদান সমূহ-

জীব জগত পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি বলে বৌদ্ধ দার্শনিকরা মনে করেন। এই উপাদান পাঁচটি কে পঞ্চপুঞ্জ বলা হয়। পঞ্চপুঞ্জ আবার দুই ভাগে বিভক্ত রূপ ও নাম। রূপ উপাদান হল পৃথিবী, জল, আগুন ও বায়ু, এগুলি নিয়ে গঠিত হয় জড়দেহ। নাম উপাদান হলো মানসিক উপাদান। এই মানুষিক উপাদান আবার চার প্রকার।

সংবেদন বা অনুভূতি বিষয় প্রত্যক্ষ বা প্রবণতা বা ধারণা (সংজ্ঞা) ক্রিয়া পবনতা (সংস্কার) এবং বুদ্ধি (বিজ্ঞান প্রতীত্য সম্বুতপাত) এই উপাদানগুলো প্রায় দুইশত ক্ষুদ্র উপাদানে বিভক্ত। এর প্রত্যেকটি ক্ষণভঙ্গুর। গতি বেদন, মনশ্চিএ, অভ্যাস, আবেগ এই পঞ্চপুঞ্জ জীবজগতের স্রষ্টা। সবকিছু নিয়মিত পরিবর্তনশীল এবং ক্ষণভঙ্গুর বলে বৌদ্ধ দার্শনিকরা মনে করেন।

কাজেই বস্তজগতে এমন কোন স্থায়ী পদার্থের অস্তিত্ব নাই যাকে আত্মা নামে পরিচয় দেয়া চলে। বৌদ্ধ মতে চৈতন্য একটি উৎপন্ন পদার্থ। অনিত্য জন্ম জন্মান্তরের বাঁহন চৈতন্যের কোন অস্তিত্ব নাই। নতুন জীবন পুরনো জীবন থেকে জন্ম নেয়।জন্ম নেওয়ার মুহূর্তে ওই পুরনো চেতন নতুনের মধ্যে কোন বিশেষ সচেতনতা পৌঁছে দিতে পারেনা। একটা প্রদীপ আর দশটা প্রদীপ জ্বালাতে পারে তেমনি একটি জীবন অসংখ্য জীবনের জন্ম দিতে পারে কিন্তু সেই সাথে চৈতন্য স্থানান্তরিত হয় না।

যে প্রদীপ সারা রাত্রি ধরে প্রজ্জ্বলিত থাকে আপাতত দৃষ্টিতে তাকে নিরবিচ্ছিন্ন পতিয়মান হয় যেহেতু তা তেল এবং সলিতা দ্বারা পরিপোষিত তাই উহা প্রতি মুহূর্তে নির্বাপিত হচ্ছে এবং প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। সুতরাং এই মুহূর্তে যাহা আছে এবং তাহা নাইও বটে।

তেমনি একটা বস্ত বা ব্যক্তি থেকে যখন আর একটা বস্তু বা ব্যক্তি জন্ম নিচ্ছে তখন ঐ বস্তু বা ব্যক্তি পূর্বোক্ত বস্তু বা ব্যক্তি থেকে কোনো অভিন্ন আত্মার প্রকাশ দ্বারা প্রকাশিত নয়, আবার পূর্ববর্তীদের কর্মের প্রভাব মুক্তও নয়। এই অবিচ্ছিন্ন ক্রমকে বৈদিক পন্ডিতেরা অপরিবর্তিত সত্তা বলে ভুল করতেন। প্রকৃত পক্ষে কোন পদার্থ অন্য কোন পদার্থ থেকে ভিন্ন নয়। আবার মৌলিক অভিন্নও নয়।

বৌদ্ধ দার্শনিকদের কাছে যা সঠিক তা হলো বস্ত তার ক্ষণিক সাত্তার সাথে ভিন্নাভিন্নের যোগফল মাএ। ব্যক্তি বলতে বৌদ্ধমতে কতগুলো উপাদানের (ধর্ম বা ধাতুর) একএ সমাবেশকে বুঝানো হয়। পৃথিবি, জ্বল, আগুন, ও বাতাস এই চারটি জড় উপাদান এবং মানুষিক উপাদান (বিজ্ঞান) মিলে একটা অস্থায়ী ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। এই পাচটি এবং শূন্য মিলে হলো ছয়টি ঋতু। এছাড়া ইচ্ছাকৃত নাশ বা মুক্তি (নির্বাণ) এবং অনিচ্ছাকৃত নাশ এই দুইটি সাত্তার মূল উপাদান বলে বৌদ্ধ দার্শনিকরা মনে করেন।

– ফরহাদ ইবনে রেহান
২৫/০২/২০২৩

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel