ফরিদপুর জেলার নামকরণ হয়েছিল যার নামানুসারে (বিস্তারিত)।

    বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে শেখ ফরিদ (র:) মাজার অনুকরণের আলোকচিত্র। ফতেহাবাদকে ‘ফরিদপুর’ নামকরণে যে দুইজন সুফী সাধক বাংলাদেশের অন্যান্য স্হানসহ ফরিদপুরেও এসেছেন এবং ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তি রয়েছেন, তাঁদের একজন হজরত মাওঃ শেখ ফরিদউদদীন মাসুদ গঞ্জেশকর(র) এবং অপরজন হজরত মাওলানা শেখ ফরিদ উদদীন আকতার। তারা দুজনেই অতি উচ্চ মর্যাদার কামেল লোক ছিলেন। ইসলামের বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক সাধনা দ্বারা তারা নিজ নিজ জীবনকে সুসংহত করেছিলেন। শেখ ফরিদউদদীন আকতার এর প্রকৃত নাম শেখ মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বাকার ইব্রাহিম। তার ডাক নাম ছিল ফরিদ উদ্দীন। তিনি আতরের ব্যবসাদার ছিলেন বলে লোকে আত্তার বলে জানতো।

    এ নামেই তিনি বহুল পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি একজন ভাল কবি ও লেখক ছিলেন। তাঁর রচিত ১১৪ খানা গ্রন্হের মধ্যে তাযকেরাতুল আউলিয়া,আসরার নামা,তাইসীর নামা,অসীয়ত নামা উল্লেখ্য। তবে তিনি কখনো ফরিদপুরে বা চট্টগ্রামে এসেছেন এমন সঠিক তথ্য কোথাও নেই! তবে এই মহাপুরুষকে ডাকাতরা নির্মম ভাবে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করেছিল (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। হজরত শেখ ফরিদঊদ্দীন মাসউদ গন্জেশকর (র) ফরিদপুর জেলার মানুষ যে নামের রুহানি বরকতে ধন্য, আজও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে অনেকে বিপদে আপদে যে নামের দোহাই দিয়ে শান্তির অন্বেষায় আল্লার নিকট প্রাথনা করে-তিনি হজরত শেখ ফরিদউদ্দীন মাসঊদ গন্জেশকর।

    তার নামানুসারে ফরিদপুর জেলার নামকরণ করা হয় বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্মমূল ধারণা। (অসমাপ্ত) পরবর্তী তথ্য- মধ্যযুগের প্রারম্ভে হজরত শেখ ফরিদ উদ্দীন গন্জেশকর বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে এসে ফরিদপুর চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্জলে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁর মিশনারী কাজের ধরণ ছিল বিভিন্ন স্হানে তাবু গেড়ে নিজের সাধনার কাজে অগ্রসর এবং আগন্তুকদের ইসলামে দীক্ষা দেওযা। তার এরুপ কাজের সন্ধান মেলে ফরিদপুর ডিসি অফিসের সামনে বর্তমান শাহ ফরিদ মসজিদ প্রাঙ্গণে ষাটের দশকে দরগাহ নামীয় স্থানের জনশ্রুতি থেকে। তার অনুগামীদের নিয়ে এখানকার বটতলায় উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তাঁবু গেড়ে কিছু দিন অবস্হান করেন। এই স্হানটি পাকিস্তান ডিস্টিক্ট গেজেটিয়ার (নুরুল ইসলাম খান সি এস পি) সম্পাদিত তে পীরস্হান হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এখানে তিনি অনুগামীদের আধ্যাত্মিক সাধনার দীক্ষা দিতেন এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে আগ্রহী আগন্তুকদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতেন। ড, গোলাম সাকলায়েন এর ‘বাংলাদেশের সুফী সাধক’ গ্রন্থে এমন উল্লেখ রয়েছে।

    শাহ ফরিদ দরগাহ মসজিদ নিয়ে নানান সময়ে নানান ঘটনা, কিচ্ছা -কাহিনী, শিন্নী -মানত, অলৌকিক কাহিনী অথবা সত্য ঘটনা এমন হাজারো কল্পকাহিনী রয়েছে। এখানে বিশালাকৃতির বট গাছ ছিল। সেখানে বুড়ো বুড়ো শকুন বাস করতো। বট গাছটি কেটে ফেলার সময়ে গাছের মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছিল এবং সেটা কোন ভুতুড়ে গল্প ছিলনা। আমাদের সময়ে শৈশবে দেখা গল্প ছিল। ভয়ে কাঠুরেরা কুড়ুল নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

    ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেললেও যে খৃস্টান কন্ট্রাক্টর গাছ কাটার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি বেশ কিছু দিন দুরারোগ্য রোগে ভুগে মারা যান। নরেন সাহা নামে এক ভদ্রলোক তাতক্ষনিক মন্তব্য করেছিলেন যে এমন দুঃসাধ্য কাজ করা ঠিক হয়নি। এই বটগাছটি কেটে ফেলার উনিশ দিনের মাথায় ফরিদপুর শহরে হেলিকপ্টার দূর্ঘটনা ঘটে। তদন্তকারীরা রিপোর্ট দেন শকুনের ডানার সাথে হেলিকপ্টারের পাখার সাথে লেগে যাওয়ায় এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। কে জানে এই শকুনটি ঐ দরগাহর বটগাছে থাকতো কী না? (এমন সংবাদ ঐ সময় দৈনিক পাকিস্তান থেকে প্রকাশ হয়েছিল)।

    ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ: Milan Imam
    সূত্র: শাহ্ִ জালালের বাংলাদেশ পীর আউলিয়ার বাংলাদেশ

    আরো পড়ুনঃ
    Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

    Sufibad24.com | Telegram Channel