শামস তাবরিজি রহঃ কর্তৃক মৃতকে জীবিত করার কারামত

    এ ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য হলো মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবী থেকে কোনো বস্তুর চিরতরে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক। এটাই আল্লাহর বিধান। মৃত্যুর পরে নতুন করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা অস্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আল্লাহ চাইলে সবকিছু সম্ভব। সবকিছু স্বাভাবিক। কখনও কখনও নিজের কুদরত প্রকাশের জন্য কিংবা অন্য কোনো হিকমতের কারণে আল্লাহ তাআলা এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার অনুমতি দেন। তখন মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবিত হওয়া সম্ভব হয়। তাই এখানে ‘আসলে ওগুলো মরেছিল না, তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ছিল না, ফলে মৃত মনে করা হলেও প্রকৃত অর্থে জীবিত ছিল, যার কারণে একটু নাড়াচাড়া দিতেই জেগে ওঠে’- এমন কুযুক্তিও চলবে না।

    কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাষায় এমন বেশ কিছু ঘটনা এনেছেন। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। উদাহরণত উযাইর আ. কে আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর ১০০ বছর পরে জীবিত করেছেন। আসহাকে কাহাফকে ৩০০ বছর পরে জীবিত করেছেন। আবার তিনি চাইলে কোনো মানুষকেও এ ক্ষমতা দান করতে পারেন। যেমন ইবরাহীম আ. পাখি জবাই করে পরে সেগুলোকে ডাকলে আল্লাহ জীবিত করে দিয়েছিলেন। ঈসা আ. কে মৃত মানুষকে জীবিত করার শক্তি দিয়েছিলেন। বনী ইসরাঈলের সাধারণ মানুষের হাতেও মৃতকে জীবিত করেছিলেন।

    তাই উলামায়ে কিরামের বক্তব্য হলো আল্লাহ চাইলে যে কোনো মানুষের মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করতে পারেন। এটা নবী-রাসূল, অলী-বুযুর্গের হাতেও হতে পারে। বরং আল্লাহ চাইলে কাফেরদের হাতেও পারে। আল্লাহ তাআলা ঈসা আ. কে মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আবার এই ক্ষমতা তিনি কাফের দাজ্জালকেও দিবেন! সুতরাং ঈমানদার ও খোদাভীরু ওলীদের জন্য এমন ক্ষমতা আল্লাহর ইচ্ছাতে লাভ হতে পারে।

    ইবনে কাসীর র. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গাতে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার অনেকগুলো বর্ণনা এনেছেন। এক জায়গায় বর্ণনা করেন, ‘একজন আনসার লোক মারা গেলো। তার বৃদ্ধা মা ঘটনাটি সহ্য করতে পারলো না। আল্লাহর কাছে দুআ করলো। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি জীবিত হয়ে গেলো। ইবনে কাসীর আরও একটি ঘটনা বর্ণনা করেন: ‘এক লোক ইয়েমেন থেকে আসছিল। পথে তার গাধাটি মারা গেলো। সে আল্লাহর কাছে দুআ করলে গাধাটি উঠে দাঁড়িয়ে গেলো’। বাইহাকী বলেন, ‘এটার সনদ সহীহ। শরীয়তের অনুসারী ব্যক্তির জন্য এগুলো ঘটতে পারে’।

    ‘নবুওয়্যাত’ কিতাবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. লেখেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় একই ধরনের মুজিযা আল্লাহ তাআলা একাধিক নবীকে দান করেছেন। যেমন মৃতকে জীবিত করা (এটা যেমন ঈসা. আ. কে দান করেছেন তেমন অন্য নবীদেরকেও দান করেছেন; উদাহরণত ইবরাহীম (পাখি), মূসা (গো-বৎস পূজারীগণ), উজাইর আ.। বরং নবীদের অনুসারীদেরকেও এমন শক্তি দান করেছেন। ফলে দেখা গেছে উম্মতে মুহাম্মাদীর কিছু মানুষ মৃতকে জীবিত করেছেন। ঈসা আ. এর অনুসারীদের কেউ কেউ মৃতকে জীবিত করেছেন’। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘মৃতকে জীবিত করা কেবল নবী-রাসূলদের সঙ্গে নির্ধারিত নয়। অনেক সালেহীনরাও এটা করেছেন’।

    তাহলে দেখা গেলো, মৃত্যুকে জীবিত করা একটি কারামত। আগের যুগের উম্মতের জন্যও ঘটেছিল। একইভাবে উম্মাতে মুহাম্মাদীর অলীদের জন্যও এটা আল্লাহর নির্দেশে সম্ভব। সুতরাং শামছ তাবরিযী যদি আল্লাহর অলী হয়ে থাকেন এবং তার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটে থাকে, তবে সেটা সম্ভব। অস্বীকার করার উপাই নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা জরুরি। একদিকে যেমন বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বানোয়াট, মিথ্যা, গাজাখুরি গালগপ্প- এমন কথা বলে ছোট করার সুযোগ নেই। অপরদিকে পুরো ঘটনাটিকে অহীর মতো অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে বিশ্বাস করারও সুযোগ নেই। কারণ শামছ তাবরিযী সম্পর্কে আফলাকী যেসব ঘটনা এনেছেন, অধিকাংশই অদ্ভুত, অস্বাভাবিক ও সবচেয়ে বড় কথা সনদহীন, প্রমাণবিহীন। এর বাইরে বিভিন্ন কিতাবে সুফিদের অসংখ্য এমন অদ্ভুত ঘটনা আছে।

    যেখানে মৃতকে জীবিত করা অনেকটা ডাল-ভাতের মতো। যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা মারেন। আবার চাইলে জীবিত করেন। আর ওপরেও আমরা দেখেছি উক্ত ঘটনাটিতে আকীদাগতও বিভ্রান্তি আছে। সুতরাং উচিত হবে সাধারণ মানুষের জন্য লিখিত একটি গ্রন্থে এ ধরনের ঘটনা না থাকা। কারণ টীকা উল্লেখ করলেও বিভ্রান্তির আশংকা থাকে। তার চেয়েও বড় কথা, উক্ত ঘটনাটি কিন্তু সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, ঘটনাটির আগে ও পরের প্রসঙ্গের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। শামছ তাবরিযী ও রূমীর সম্পর্কের কথা তুলে ধরলেই কাজ হয়ে যায়। অপ্রমাণিত ও অস্বাভাবিক ঘটনাটি উল্লেখ করার কোনো দরকার নেই।

    Source:  http://www.alimaanfoundation.com

    আরো পড়ুনঃ
    Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

    Sufibad24.com | Telegram Channel