আল কোরানে বর্নিত জাকাতের রূপ

আল কোরানে বর্নিত জাকাতের রূপ

আপনার কোটি টাকা থাকলেও আপনার উপর জাকাত ফরজ নয়। ইফতার না হলে কেউ রেজেক পাবে না। আর রেজেকপ্রাপ্ত না হলে জাকাত দেওয়া তো অসম্ভব ব্যাপার। জাকাত দানের শর্ত হল পবিত্র হতে হবে।

অহংকারী কখনো জাকাত দিতে পারে না, হিংসুক কখনো জাকাত দিতে পারে, লোভী কখনো জাকাত দিতে পারে না, ক্রোধি কখনো জাকাত দিতে পারে না, কামাতুর কখনো জাকাত দিতে পারে না, মোহগ্রস্ত কখনো জাকাত দিতে পারে না। জাকাত সেই দিতে পারবে, যে আগে ইফতার করেছে, যে আগে মনের মধ্যে মহাশূন্যেভাব জাগ্রত করতে পেরেছে।

জাকাতের সম্পর্ক অর্থ, বিত্ত ও ভৈবরের সাথে সম্পৃক্ত নয়। খান্নাস মুক্ত না হলে কেউ জাকাত দিতে পারবে না। সম্পদ জমাকারী হল জাহান্নামি, জাকাতের ক্ষেত্রে মালিকের নিসাব বা সাহেবে নিসাব নাই। আল কোরান জানান দিচ্ছে সকল নবি এবং রাসুলগণও জাকাত দিয়েছে? তাহলে আদম নবি কিভাবে জাকাত দিয়েছে? তখন কি অর্থ কড়ি ছিলো? তখন তো আদিম সাম্যবাদ ছিলো, তার পর আসলো পন্যবিনিময় প্রথা, তারপর আসলো কড়ি, কড়ির পরে আসলো মুদ্রা। মুদ্রার সাথে জাকাতের কোনো সম্পর্ক নাই। জাকাতের সম্পর্ক নফসের সাথে।

জাকাতের সম্পর্ক পবিত্রতার সাথে। বিত্তশালী হলেই জাকাত দেওয়া যায় না, চাইলেই কেউ জাকাত দিতে পারবে না। যদিও আমানুর উপর সালাত এবং জাকাত ফরজ করা হয়েছে। আল কোরানে সালাতের সাথে জাকাতের কথা আসছে ত্রিশবারের মতো। কিন্তু জাকাতদানে ব্যতিব্যস্ত মুমিন ও মুসল্লিগণ।

ইনসান কোটি টাকার মালিক হলেও তার উপর জাকাত ফরজ নয়। কারণ, ইনসান ধর্মহীন, লোভী, সুদখোর, ঘুষখোর, মরদুদ। মরদুদের উপর জাকাত ফরজ নয়। যারা রাসুলের নিকট বায়াত গ্রহণ করেছেন এবং জানে এবং মালের মাধ্যমে রাসুলের গোলামি করে পবিত্র হয়ে রবের নিকট থেকে রেজেকপ্রাপ্ত হয়েছে, সেই রেজেক থেকে সাধক যা ব্যয় করে তাকে জাকাত বলে।

সেই ব্যক্তিই গণী তথা ধনী, যিনি অভাবমুক্ত। যার ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা নাই তিনিই ধনী। আর যার ব্যাংক ব্যালেন্স আছে, এসব কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখে, সে আল্লাহর রোশের অগ্নিতে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে, অর্থাৎ হুতামায় রয়েছে।

নবি, রাসুল ও মুমিন, মুসল্লি ব্যতীত কেউ জাকাত দেওয়ার ক্ষমতা নাই। আল্লাহর এতিম, আল্লাহর মিসকিন ও ফকিরগণই সাদকার বিনিময়ে জাকাত দান করে থাকেন। মৃত মানুষ জাকাত দিতে পারে না, আর মুসলমান হলে তো কেহ মরেই না। মুসলমান মরে না, মুসলমান সে, যে মরার আগে মরে গেছে। তাই ঈমানদার নবি অলির দরবারে সাহায্য চায়, কারণ, তারা দাতা। নবি অলি লোকান্তরিত হলেও তাদের সমাধি অথবা রওজায় গিয়ে সাহায্য চাইলে জাকাত বা রেজেক পাওয়া যায়।

মস্তান ছাড়া কেউ সাহায্য করতে পারবে না। ঈমানদার আল কিতাবের মূল তত্ত্ব জানলে, সে কুতুবিয়ত অর্জন করে, কুতুবিয়ত অর্জন করলেই, রেজেকপ্রাপ্ত হয়, আল্লাহর গুণাবলিকে বলা হয় রেজেক। যে সাধক রেজেকপ্রাপ্ত তিনিই তো গাউস তথা সাহায্যকারী। সুতরাং গাউসিয়াতের মাকাম অর্জন করতে না পারলে জাকত কেউ দিতে পারে না।

শতকরা আড়াই শতাংশ ইহা মালের কর। মালের জন্য সাদাকা শব্দটি আল কোরানে আসছে। সেই কারণে সুরা তাওবার ষাট নং আয়াতে সাদকার আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে। জাকাতের জন্য কোনো খাত উল্লেখ নেই। আমাদের আলেম সমাজ বিকাহুয়া, তারা সাদাকাকে জাকাত নামে প্রচার করে জনতাকে বিভ্রান্ত করে ফেলছে, জাকাতকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। জাকাতের কথা আসলে অলিআল্লাহ চলে আসে, আর আমাদের দেশের মাদরাসা পাস করা আলেমরা তরা অলিদের বিরোধী, ইবলিশের অনুগামী। তাই ইচ্ছা করেই আরবি জানা মোল্লারা সাদাকাকে জাকাত নামে প্রচার করে।

ধ্যানসাধনা ব্যতীত কেউ মুমিনই হতে পারবে না। আমাদের দেশে যে সকল মেজাজি মসজিদে ইমাম, খতিব রয়েছে তারা একজনও মুমিন না, অথচ তারা মুমিন সেজে বহাল তবিয়তে বসে আছে। তাই আল্লাহপাক আল কোরানে সুরা তাওবার একশত তিন নং আয়াতে রাসুলকে বলেছেন আমানুদের সম্পদ থেকে আপনি সাদকা গ্রহণ করুন, বিনিময়ে তাদের পবিত্র করুণ এবং তাদের জন্য দোয়া করুণ।

আমরা আটান্ন নং সুরা মুজাদালার বার নং আয়াতে দেখতে পাই আল্লাহ আমানুকে শিখিয়ে দিচ্ছে রাসুলের সাথে যখন গোপনে গোপনে সাক্ষাৎ করতে যাবে তখন রাসুলকে সাদাকা দিবে। যদি না থাকে তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং নবি অলি সাদাকার বিনিময়ে জাকাত দিয়ে থাকেন।

সুতরাং জাকাত হল নফসের পরিশুদ্ধতার জন্য রাসুলের দয়া, সাদাকা হলো রহমত প্রাপ্তির জন্য মালের ত্যাগ স্বীকার করা।

নিবেদক:
আর এফ রাসেল আহমেদ ওয়ার্সী
২৭.০৩.২৫

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel