অন্তর্নিহিত পিপাসা

অন্তর্নিহিত পিপাসা

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সৃষ্টির সাথে এক গভীর অদৃশ্য যোগসূত্র বিদ্যমান, যা আমরা প্রায়ই অজ্ঞাতসারে উপেক্ষা করি। এটি হলো সেই অদৃশ্য পিপাসা, যা সব সত্ত্বাকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত রাখে। এই পিপাসার অনুভূতি কখনও কখনও অনিশ্চিত, অনুগ্রহে আচ্ছন্ন, কখনও বা অসীম শূন্যতার অনুভূতিতে পূর্ণ। তবে, যে জানে, সে জানে যে এটি এক চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা, যা জগতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

পিপাসা কেবল শরীরের নয়, এটি আত্মার। এই পিপাসার অঙ্গীকারে সত্ত্বা কেবল একে অপরকে টানে, আবার একে অপরের কাছ থেকে সরে যেতে চায়। সৃষ্টির প্রতিটি স্তরেই এই অসীম আকাঙ্ক্ষার অঙ্গীকার অনুভূত হয়। তবে মনে রাখতে হবে, যে নিজেকে একমাত্র চাহিদার মূর্ত রূপে উপলব্ধি করে, সে কখনও নিজেকে পূর্ণ করতে পারে না। চাহিদার অস্তিত্ব তখনই সম্ভব, যখন কোনো পূর্ণতা কল্পনা করা হয়।

আত্মার ক্ষুধা কোনো বস্তুগত পূর্ণতার মধ্যে নিহিত নয়, বরং এটি একটি এমন অভ্যন্তরীণ এক স্থির শান্তির প্রতি আকাঙ্ক্ষা যা সমস্ত চাহিদা ও বিভাজন থেকে মুক্ত। শরীরের ক্ষুধা কেবল মুহূর্তের জন্য থাকে, কিন্তু আত্মার ক্ষুধা চিরকালীন। এই ক্ষুধা যখন পূর্ণতা লাভ করে, তখন সেই মানুষ একটি শান্তির প্রবাহে প্রবাহিত হয়ে যায়, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত বা অস্থির হতে পারে না।

এভাবেই সৃষ্টির প্রতিটি স্তরে এই পিপাসা এবং পূর্ণতার অদৃশ্য সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। যেমন মাটি অন্ধকারে আলোর পিপাসা অনুভব করে, তেমনি প্রজ্ঞা নিজের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আগ্রহী হয়। তবে, প্রতিটি সত্ত্বাই তার পূর্ণতার পথে কখনও নিজেকে খুঁজে পায়, কখনও আবার ক্ষুধার তাড়নায় পথচ্যুত হয়।

এই সম্পর্কের গভীরে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন শুধু এক অবিরাম প্রচেষ্টা—নিজেকে বোঝার, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোর মধ্যে থাকতে থাকতে সৃষ্টির সঙ্গে একত্রীভূত হওয়ার। একবার যখন সেই সত্য উপলব্ধি হয়, তখন আর কোনো ক্ষুধা নেই, কারণ সে জানে যে পূর্ণতা কোনো বাহ্যিক বস্তু নয়, এটি এক অভ্যন্তরীণ জ্ঞান, যা চিরকালীন।

—ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel