ঈশ্বরের পরিচয়

ঈশ্বরের পরিচয়

অস্তিত্বের মাঝে যাঁকে আমরা ঈশ্বর বা আল্লাহ বলে সম্বোধন করি, তিনি একেকটি আখ্যানে পরিণত হয়েছিলেন আমাদের চিন্তার গহনে। তাঁর অস্তিত্বকে খুঁজে বের করতে, সমগ্র জগতের সকল নিয়ম-কানুন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং মানবপ্রবৃত্তির গভীর বিশ্লেষণ করতে আমরা অগণিত যুগ-যুগান্তরের সাধনা সম্পন্ন করেছি। এই সাধনা কখনোই সোজা ছিল না, কখনোই ছিল না তাৎক্ষণিক, কিংবা একদিনের প্রাপ্তি। আমরা যা চাই, তা যদি কোনদিন আমাদের সামনে হাজির হয়ে যেত, তাহলে তাঁর অস্তিত্বও হয়তো কোনদিন গভীরতা পেত না। তাই তো তাঁর পরিচয় বা ভূমিকা সেভাবে সাকার হতে পেরেছে, যতটুকু সময় ও চেষ্টার মূল্যায়ন আমাদের ভেতর তার গভীরতা বুঝতে সহায়তা করেছে।

ঈশ্বর বা আল্লাহ যে অনন্ত শক্তির আধার, তা একদিনে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। আমরা তাঁকে চিনেছি হাজারো গুণে, নামকরণ করেছি তাঁর অসীম বৈশিষ্ট্যকে, কিন্তু এই নিরাকার শক্তি যদি সবসময় আমাদের নাগালের বাইরে থাকে, তাহলে তার কাছে পৌঁছানোর সাধনা কিসের জন্য?

তার অস্তিত্ব কেবল তখনই বাস্তবতা পায় যখন তাকে আমরা উপলব্ধি করি, অনুভব করি, তাকে আমাদের জীবনধারার মধ্যে একীভূত করতে পারি। আমাদের অনুভবের মধ্য দিয়ে তিনি জাগ্রত হন, যখন আমরা তাঁর গুণাবলীর মধ্যে আত্মীক হয়ে উঠি। তিনি তখন হয়ে ওঠেন বাস্তবতা, তাঁর প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই তখন হয়ে ওঠে আমাদের নিজস্ব প্রেরণা।

যে সাধনা মনের গভীরে অগণিত প্রশ্নের জন্ম দেয়, সেই সাধনাই শেষপর্যন্ত ঈশ্বর বা আল্লাহকে আমাদের সামনে তুলে আনে। এই সাধনার ধারা একসময় জ্ঞান, প্রেম, শান্তি, ও বিরাটত্বের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে এবং তাকে একে একে আমরা পরিচয় দিয়ে থাকি। তাঁকে চেনার কোনো একক পথ নেই, কোনো একটি মাত্র পথ নেই; তাঁর চিহ্ন সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, এবং সেই পথের মধ্যে আমরা তাকে খুঁজে পাই।

তবে, তাঁকে চিনতে হলে, আমাদের চেতনা হতে হবে সংবেদনশীল, এবং শুধু মাত্র ধ্যান, প্রার্থনা, কিংবা তপস্যা নয়, আমাদের জীবনযাপনেও তাঁকে প্রতিফলিত করতে হবে। যখন আমরা নিজেকে অনুভব করি, যে আমরা ঈশ্বর বা আল্লাহ’র অংশ, তখনই তাঁকে উপলব্ধি করা সহজ হয়। তাঁর সত্ত্বা শুধু আমাদের চিন্তা, কর্ম, ও অনুভূতির মাঝে বিরাজমান।

–ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel