মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির ৭টি বিশেষ গুণাবলীঃ
মাওলানা জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমি: ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বালখের খোয়ারজমীয় সম্রাজ্যে জন্মগ্রহন করেন। তিনি জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি এবং মৌলভী রুমি নামে পরিচিত। তিনি ১৩শ শতাব্দির একজন কবি, সূফি, আধ্যাত্মিক, দার্শনিক, অতীন্দ্রিবাদী এবং ধর্মতাত্ত্বিক। তার লেখা জগত বিখ্যাত কিতাব ‘মসনবী’ কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গন্য করা হয়। ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তুরস্কের কোনিয়ায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কোনিয়ার রুম সালতানাতে তিনার সমাধি স্থান।
১।।
বিশ্ব বিখ্যাত মসনবি শরিফ রচনাঃ– মাওলানা রুমি শামস তাবরিজের দেওয়া তার সিনায় মারেফতের ফায়েজকে চির-স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে রচনা করেন মসনবি শরিফ। যা সুবিশাল ৪০ হাজার লাইনের একটা মহাজ্ঞানের সমাহার। এই কিতাবকে বিশ্বের সকল সূফি, দরবেশরা “মানুষের রচিত ২য় কুরআন বলে আখ্যায়িত করেছেন”।
২।।
বিশ্ব বিখ্যাত মাওলানা রুমিঃ– মাওলানা রুমি তার মুর্শিদ শামস তাবরিজের সাথে সাক্ষাত করার পূর্বে ছিলেন একজন ধর্মভীরু একজন আলেম। তিনি সারাদিন এতই কিতাব পড়াশুনা করতেন যে সে যেখানেই যেতেন সেখানেই ৭ উঠ ভর্তি হাদিস, তাফসির, ফিকাহ ইত্যাদি ধর্মীয় কিতাব সাথে নিয়ে যেতেন। যাতে তার অধ্যাপনায় কোন প্রকার বিঘ্ন না ঘটে। উক্ত কথা থেকে বুঝা যায় তিনি কত উঁচু পর্যায়ের আলেম ছিলেন। আর আজকের কাঠ মোল্লারা কিছু হাদিসের কিতাব পড়ে এমন ভাব দেখান যে তার চেয়ে বড় আলেম বুঝি এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই।
৩।।
মাওলানা রুমির স্তরঃ– মাওলানা রুমি তার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব মসনবির প্রশংসায় বলেছেন যে- “কুরআনের সমস্ত মগজ আমি রুমি চেটে খেয়ে ফেলেছি, শুধু তার হাড় গুলি রেখে দিয়েছি শরিয়তের অল্প বুদ্ধির আলেম রূপী কুকুরদের জন্য।” তাহার এই উক্তিতে বুঝতে আর বাকি থাকেনা যে তিনি কোন পর্যায়ের আলেম।
৪।।
বিভিন্ন মনীষীদের ভূয়সী প্রশংসাঃ– রুমির সাহিত্যকর্ম অধ্যয়নের পর এতকাল দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ইংরেজ সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মকে রীতিমতো পানসে বলে মনে হচ্ছে। তারা এখন রীতিমতো নিক্তি দিয়ে ওজন করছেন কার সাহিত্যকর্মের গভীরতা কতটা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রিসার্স স্কলার এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত সামির আসাফ ‘The Poet of the Poets’- শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন- “গভীরতার মানদণ্ডে রুমির তুলনায় শেক্সপিয়ারের মান হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ।” পশ্চিমা সাহিত্যিকদের মান প্রসেঙ্গ তিনি আরো লিখেছেন, ‘পাশ্চাত্যের গ্যাটে, চসার ও ইমারসন পর্যন্ত রুমির প্রভাব প্রতিপত্তি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, রুমির সমকক্ষ যেমন গাজ্জালি, গালিব, জামি, সাদি, জিবরান, এমনকি কাজমি, দেহলভি বা জাউকের (Zauk) সাহিত্যকর্মের তুলনায় পশ্চিমা সাহিত্য বলতে গেলে হাস্যকর পর্যায়ের অগভীর।
৫।।
রুমি সম্পর্কে বিশিষ্ট অলিদের আউলিদের মন্তব্যঃ– ছোট রুমি যখন বাবা বাহাউদ্দিনের সাথে দামেস্কে ভ্রমনে যাচ্ছিলেন, তখন বিখ্যাত আউলিয়া ইবনুল আরাবি (রহঃ) বাবার পিছনে ছোট রুমিকে হাঁটতে দেখে তার ভিতরে অপার জ্ঞানের সমুদ্র অনুমান করে বলেছিলেন “আল্লাহর কি অপার মহিমা দেখো! জ্ঞানের সমুদ্র, জ্ঞানের নদীর পিছে পিছে হাঁটছে।” শুধু তাই নয়, বিশ্ব বরেণ্য আউলিয়া ফরিদউদ্দিন আত্তাব মাওলানা রুমিকে দেখে বলেছিল- “এই ছেলে বড় হয়ে আল্লাহ্র এস্কের সাগরের এমন সব রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে যে সারা দুনিয়া তা দেখে হতবাক হয়ে যাবে।”
৬।।
রুমির মৃত্যুতে সকল ধর্মের মানুষের জানাজায় অংশ গ্রহনঃ- মাওলানা রুমি যেদিন দুনিয়া ছেড়ে চলে যান, সেদিন তুরস্কের ইহুদি, নাসারা, খৃষ্টান সহ সকল ধর্মের মানুষ রুমির মৃত দেহের সামনে তাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা শুরু করে, শুধু তাই নয় একসাথে কাতার বন্ধী হয়ে নামাজের জানাজা আদায় করেন। কত বড় মাপের মানুষ হলে অন্য ধর্মের মানুষও তাকে শ্রদ্ধা জানায়, এটা রীতিমত ভাবনার বিষয়।
৭।।
সকল ধর্মের মানুষের মসনবি কিতাব পাঠঃ- হিন্দু (বৈষ্ণব মতালম্মবি), মুসলিম, ইহুদি, নাসারা, খৃষ্টান সকল ধর্মের মানুষ মাওলানা রুমির কিতাব নিজস্ব আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য পাঠ করে থাকেন। বিশ্বের সকল ভাষায় আজ মসনবি অনূদিত হয়েছে। এ যেন মাওলানা রুমির জন্য সারা বিশ্ব জয়ের এক বিজয় কাহিনী।
লিখেছেন: হাসনাহেনা