সিজদার হাকিকত (কোরানিক দর্শন)
“আল্লাহকেই সিজদা করে যাহা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীবন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফেরেশতাগনও, উহারা অহংকার করে না।” (সূরা নাহল-৪৯, অনুবাদ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন )
মন্তব্যঃ
সবকিছুই আল্লাহকে সিজদা করে, তারা অহংকার করে না। অতএব যিনি বা যারা অহংকার মুক্ত তাদেরকেই কোরানিক দর্শন সিজদাকারী বলে অভিহিত করেছে। আর সিজাদাকারীগণ আল্লাহর তাওহীদে অবস্থান করেন। আমরা জানি, আল্লাহপাক এই সৃষ্টিজগতের মধ্যে জ্বীন এবং মানুষকে সীমিত স্বাধীনতা দান করেছেন। এই জ্বীন এবং মানুষের নফসের মধ্যেই অহংকার অবস্থান করে। আল্লাহকে একমাত্র অহংকারীই সিজদা করে না।
যেমন: সবাই আল্লাহকে (আদম) সিজদা করল একমাত্র অহংকারী ব্যতীত। এই অহংকারীকে কোরানিক দর্শনে ইবলীশ বলা হয়। যারা সালাতি তাদেরকেই মুসল্লি বলা হয়। আর মুসল্লিই সিজদার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসল্লিই একমাত্র অহংকার মুক্ত। এই মুসল্লি আল্লাহর দ্বীনে অবস্থান করেন। সিজদাকারীর মধ্যে অহংকার নাই, আর অহংকারীর মধ্যে সিজদা নাই।
তাই মহানবী বলেছেন- “যার অন্তর তথা কলবে এক সরিষাপরিমাণ অহংকার তথা ইগো থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার যার অন্তরে জাররা পরিমাণ ঈমান রয়েছে সে অন্তর জাহান্নামে যাবে না।”
সমাজে হাজার হাজার ওয়াক্তি সিজদাকারী পাওয়া কিন্তু অহংকার মুক্ত মানুষ কমই পাওয়া যায়। এই অহংকারের স্বরূপ আবার বিচিত্র রকমে রয়েছে যেমনঃ আদমকে সিজদা না দেওয়ার অহংকার,(ইনসান আর আদমের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে), আমলের অহংকার, ধনের অহংকার, বিদ্যার অহংকার, জ্ঞানের অহংকার, ডিগ্রির অহংকার, রূপের অহংকার, মর্যাদার অহংকার, পারিবারিক অহংকার, রাজনৈতিক অহংকার, সামপ্রদায়িক অহংকার, জাতিগত অহংকার, স্থূল অহংকার, সূক্ষ্ণ অহংকার, ব্যক্তিগত অহংকার, আমাকে সকলে ভালো বলুক, আমার নাম নিয়ে সকলে হাত তালি দিক তা প্রত্যাশা করা, ধনী গরিব পার্থক্য করে চলা ইত্যাদি এসব লক্ষ্মণ গুলোর মধ্যে থেকে যার মধ্যে একটি লক্ষণ বিদ্যমান থাকবে তিনি সিজদাকারী নয় বলে কোরান ঘোষনা করেছেন।
যদিও তিনি আনুষ্ঠানিক সিজদাকারী। আল্লাহর কাছে এই আনুষ্ঠানিক সিজদাকারীর বিন্দুমাত্র মূল্যও নাই। কারণ আল্লাহপাক তাকান বান্দার কলবের দিকে, আনুষ্ঠানিক সিজদার দিকে নয়। সুতরাং যার মন ও প্রাণ আল্লাহর ইচ্ছার কাছে উৎসর্গিত তিনিই কোরানিক দর্শনে সিজদাকারী।
যার অন্তরে বা কলবে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলা বা উপাস্য মজুদ নাই তিনিই সিজদাকারী। এই সিজদাকারীরাই দাড়ানো কিংবা বসা কিংবা ঘুমন্ত কিংবা কর্ম অবস্থা কিংবা চলতি অবস্থায় সিজদায়রত। এই সিজদা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
যেমন গাছপালা, জন্তু-জানোয়ার, আকাশ -জমিন ও ফেরেশ্তাগণ আল্লাহকে সিজদা করে, যদিও আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক সিজদা দেখতে পাই না, তারপরও কোরানতাদের সিজদাকারী বলে অভিহিত করেছেন। এবং তারা আল্লাহ দ্বীনে অবস্থান করেন।কিন্তু সকল মানুষের অন্তর খান্নাস মুক্ত নয়। কিছু মানুষ স্বরচিত দ্বীনে অবস্থান করে। স্বরচিত দ্বীন পরিহার করে আল্লাহর দ্বীনে অবস্থান করার নামই হল শেরেক মুক্ত দ্বীন তথা তাওহীদ।
সুতরাং ধর্মের একমাত্র উপদেশ হল আপন নফস থেকে খান্নাস মুক্ত হওয়া। এই খান্নাস নামক শয়তান জ্বীন এবং ইনসানের নফসে যতক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে অহংকার অবস্থান করবে। সুতরাং অহং তথা হাস্তি, ইগো, আমিত্ব মুক্ত অবস্থাই সিজদা।
এই সিজদা ওয়াক্তি সিজদা নয়, এই সিজদা প্রকৃত সিজদা। প্রকৃত সিজদায় পৌছানোর জন্য আর্দশলীপি হিসাবে আনুষ্ঠানিক সিজদার প্রায়োগিক আয়োজন। সুতরাং অহংকারই আপন রবের সাথে মিলনের একমাত্র পর্দা তথা বাধা। এই অহংকারকেই মহানবীর জীবন্ত সুন্নত ধ্যানসালাতের মাধ্যমে তাড়াতে হবে।
বি:দ্র: যিনি আল্লাহর গুণে গুণান্বিত, আল্লাহর রংঙ্গে রঞ্জিত, আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান, আল্লাহর প্রতিনিধি, যার মধ্যে আল্লাহর নুর উদ্ভাসিত, রবের আদেশ রূহ প্রকাশিত তিনিই আদম। আদম মুক্তপুরূষ, আদম সত্যদ্রষ্টা, আদম লাশারিক, আদম সেকেন্ড টু নান, আদম নবী, আদম রসূল, আদম মুমিন, আদম অলি, আদম আরিফ, আদম গাউস, আদম কুতুব, আদম আরিফ, আদম আবদাল, আদম মুনি, আদম ঋষী, আদম অবতার ইত্যাদি।
– আর এফ রাসেল আহমেদ