হোমপেজ ইলমে মারেফত লতিফায় কাল্বের পরিচয়

লতিফায় কাল্বের পরিচয়

949

লতিফায় কাল্বের পরিচয়

কাল্ব হইল আলমে আমর অর্থাৎ নুরের জগিতের লতিফা। আলমে আমর আল্লাহতায়ার আরশের উপর অবস্থিত।

আলমে আমর বা নুরের জগতে ইহার মুল বিধায়,ইহা একটি সূক্ষ জগতের লতিফা। মুর্শিদে কামেলের তাওয়াজ্জুতে এই লতিফায়ে কালব জিন্দা হইয়া মুরীদের “জেকেরে কালবী” হাসিল হয়, আল্লাহতায়ালার নুরের প্রকাশ পায়।

মুর্শিদের দয়ায় “জেকেরে কালবী” হাসিল হইলে মুরিদের দেল অতি সহজে আল্লাহতায়ালার দিকেরুজু হয়।নতুন ছালেক আল্লাহতায়ালার অনুসন্ধানের পথে সাধনায় উৎসাহি ও অনুপ্রাণিত হয়।

এই লতিফার স্থান বাম স্তনের দুই আঙ্গুল পরিমান নিচে,ঈষৎ পাঁজবার দিকে নিরুপিত আছে। পদ্ম-কোরক উল্টাইয়া ধরিলে যে রুপ দেখা যায়,লতিফায়ে কালবের আকার প্রায় সেই রুপ।

ইহার একটি আসল যে রুপ আরশের উপর আছে, তদরুপ আসলের আসল তাজাল্লীয়াতে আফয়ালে সন্নিবেশিত রহিয়াছে। তাজাল্লিয়াতে আফয়াল হইল আল্লাহতায়ালার সেই শক্তি যাহার মধ্যে সৃষ্টি জগতের সকল কর্ম- কান্ড নিরূপিত রহিয়াছে।

এই “তাজাল্লীয়াতে আফয়ালের নুর বা জ্যোতির শক্তির দ্বারা এই পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র নিজ নিজ কেন্দ্রের উপর ও কক্ষপথে পরিভ্রমণ করিতেছে,দিন ও রাত্রি হইতেছে, কক্ষপথের পরিক্রমার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হইতেছে, একেক ঋতু পরিবর্তনের ফলে ন্তুন নতুন ফুল-ফল, তরু-লতা, ফসলাদি সৃষ্টি হতেছে। প্রানী জগতেও নতুন জম্ম হইতেছে।

খোদাতত্ব সাধনার পথের-পথিক যখন এই মাকামে আসিবে,সৃষ্টি জগতের ক্রিয়াকর্ম যাহাই তাহার দৃষ্টি গোচর হইবে, তাহাই সে আল্লাহরতায়ালার ক্রিয়াগুন সমুহের প্রতিবিম্ব বলিয়া জানিবে।

খোদাতায়ালা ভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু, নক্ষএ, সূর্য, আকাশ, প্রভৃতির কর্ম বস্তুতই যে আল্লাহ তায়ালার ক্রিয়াগুন ব্যতীত সম্ভব নই, তাহা ছালেক সুস্পষ্টভাবে অনুভব করিবে। এই লতিফার নুর বা জ্যেতি সরিশা ফুলের মত হলুদ বর্ণের।

খোদাতায়ালা আমাদের যে সকল দশটি উপাদান দ্বারা তৈরি করিয়াছেন তাহাদের প্রতিটিকে লতিফা বলে।পূর্ববর্তী নসিহতে বলা হইয়াছে।

লতিফা সমুহ দুই ভাগে বিভক্ত “আলমে আমর” ও আলমে “খালক”। আলমে আমর নুরের জগত বা সুক্ষ জগত, এবং আলমে খলক জড় জগত,বা স্থল জগত।

কালব,রুহ,সের,খফি ও আখফা, এই পাঁচটি আলমে আমর, বা সুক্ষ জগতের লতিফা। আব, আতস, খাক, বাদ, ও আগুন, পানি, মাটি, বাতাস ও নাফস এই পাঁচটি স্থল জগতের লতিফা।

অসিম ক্ষমতাবান আল্লাহতায়ালা “কুন” বা হউ শব্দের আমর দ্বারা আলমে আমরের সকল লতিফা সম্বলিত “রুহ” সৃষ্টি করিয়াছিলেন। সেই আমর হইতে সৃষ্টি হেতু “কালব, রুহ, সের, খফি, ও আখফাকে আলমে আমরের বা নূরের জগতের লতিফা বলা হয়।

এই সকল লতিফা এমন হেকমতে তৈরি যে,এহারা আকার সংলগ্ন অবস্থায় আকারের রুপ ধারন করে আবার নিরাকার অবস্থায় ও থাকিতে পারে। আলমে আমরের বা সুক্ষ জগতের লতিফা “রুহ’ দ্বারা স্থল জগতের লতিফা নাফস কে পবিত্র করায়া আল্লাহ তায়ালার পথে লইয়া যাওয়ায় মানব জীবনে খোদাপ্রাপ্তির সাধনার প্রথম পদক্ষেপ।

রুহ-নাফস কে পবিত্র করিতে আসিয়া নিজেই অপবিত্র হইয়া যায়। তাই রুহের পবিত্রতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সতর্ককারির প্রয়োজন।

অন্যান্য তরিকায় মানব দেহের অপবিত্রতা বা দোষের মূল কারন নাফস কে পবিত্র করিয়া রুহকে পবিত্র করাইবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু নাফস কে পবিত্র করা যেমন দুঃসাধ্য তেমনি সময় সাপেক্ষ।

খোদাতত্ত্ব সাধনায় লতিফায় কালবের গুরুত্বঃ

মুজাদ্দেদ আলফেসানী(রঃ) সাহেব আলমে আমরের অপর লতিফা কালবের দ্বারা প্রথমে রহুকে নাফসের প্রভাব মুক্ত করিবার রীতি প্রবর্তন করেন।

এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে আলমে আমরের কালব রুহ, সের, খফি, আখফা-এই পাঁচটি লতিফা, দ্বিতীয় পর্যায়ে আলমে খালকের লতিফা সমূহ অর্থাৎ আব, আতস, খাক, বাদ-কে পবিত্র করার পদ্ধতি গ্রহন করা হয়। সর্বশেষে লতফায়ে নফসকে পবিত্র করা হয়।

মহা কালবের ক্ষুদ্রতম অংশ লতিফায়ে কালব।আল্লাহপাক ফরমান, আস্মান, জমীনের কোথাও আমার গুঞ্জায়েশ হয় না, এক মাত্র মুমিনের কালব ব্যতীত।

মুমিন ব্যক্তির কালবের মধ্যেই আরশ, কুরসি, লওহ, কলম ও সৃষ্টি জগতের সকল কিছুরই অবস্থান। মুমিন ব্যক্তির কালব যে কত প্রশস্ত, তাহা আল্লাহপাকই জানেন।

লতিফায়ে কালব যখন জাত আহদিয়াতের নুর পরিপূর্ণ হয় তখন মহা কালবের সন্ধান পাওয়া যায়।

তখনি আল্লাহপাক কোরআন মাজিদে ফরমানঃ

“অফি আন ফুসিকুম আফালা তুবছিরুন”

অর্থাৎঃ আমার নিদর্শন তোমাদের ভিতরেই আছে, তোমরা দেখনা কেন? (সুরা ; জারিয়াতঃ২১ নং আয়াত) তখন ছালেক মহা কালবের ভিতর দিয়া আরশ, কুরসি, লওহ, কলম সকল কিছুওরই সন্ধান পায়।

তাই মহাকালবের ভিতরে অর্থাৎ যে কালবের ভিতরে আল্লাহপাকের যোগসুত্র বা সান্নিধ্য পাওয়া যায় সে মহা কালবের পরিধি সাততালা আকাশ হইতে, সাততলা জমিনের নীচে “তাহাতাস সারা” পর্যন্ত।

এই মহা কালবে ছায়ের শেষ করিতে পারিলে আল্লাহপাকের সান্নিধ্য পাওয়া যায়।

তাই রাসুলেকরিম (সাঃ) ফরমানঃ লাসালাতা ইল্লা বিহুজুরি কালব

অর্থাৎ জুহুরি কালব ছাড়া নামাজি হয় না।

তাই খেয়াল কালবে কালব আল্লাহপাকের দিকে, আল্লাহ হাযের নাজির, তাই খেয়ালকে এক কালিন কালবে ডুবাইয়া, আল্লাহকে হাজির নাজির ওয়াহেদ জানিয়া হুজুরি কালবে সিজদাহ করাই আসসালাতু মিরাজুল মোমিনিন।

তাই লতিফায় কালবে খেয়াল এককালিন ডুবাইতে না পারিলে নামাজে হুজুরি হাসিল হইবে না। আর তাহা না হইলে নামাজে বিভিন্ন খারাপ কথা মনে আসিবে।

বাল্য জীবনে কত বন্ধুর স্মৃতি, কত মমলা মকাদ্দমার কথা মনে আসিয়া পৌছিবে।মন সেই দিকে ঘুরিয়া যায়বে, মুখে “সুবাহান রাব্বিয়াল আলা” (অর্থাৎ আমার প্রতিপালকে পবিত্রতা ঘোষণা করছি) বলার কি দাম? মৌখিক ভালবাসার দাম কেউ দিয়া থাকেননা।

তাহাকে লিফ সিমপ্যাথি (Lip sympathy) বলা হয়। সে জন্য আল্লাহপাক বলেনঃ “তোমরা নাফসের সহিত জেহাদ কর”। “নাফসে আম্মারার”সকল কিছুই আল্লাহতায়ালার বিরুদ্বে।

“হুজুরী কালব” বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকাঃ

হুজুরি কালবে মারেফত হাসেল না করা পর্যন্ত কেহই মুমিন হইতে আরিবে না। হুজুরি কালব হাসিল করিবার একমাত্র উপায় মুর্শিদে কামেলের পাক তাওয়াজ্জু।

সেই জন্য আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ

“ইয়া আয়য়ুহাল্লাজিনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়াবতাগু ইলাইহিল অছিলা”

অথ্যাৎঃ হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও তাঁহাকে পাইবার জন্য অসিলা অন্মেষণ কর- তাহাতে সম্ভবতঃ তোমরা সফল হইতে পারিবে।(মায়েদাঃ৩৫)।

সেই অসিলাই জামানার কামেল ওলী সকল। জামানার মুজাদ্দেদ ও শ্রেষ্ট কামেলে মুকাম্মেল, আরিফে বিল্লাহ হযরত খাজাবাবা শাহ সুফী এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেব, যিনির তাওয়াজ্জু-এ –এত্তেহাদির দ্বারা লক্ষ লক্ষ মুর্দা দেল জিন্দা হইয়া আল্লাহ ভুলা দেলে আলাহর জিকিরে পরিপূর্ণ হইতেছে।

লতিফায়ে কালব জাত আহদিয়াতের নুরে পরিপূর্ণ হইতেছে,সে সত্য জিন্দা পীরের কদম মুবারক জড়াইয়া ধরিয়া, আদব, বুদ্ধি, মহব্বত, ও সাহসের সঙ্গে তদীয় পাক দেলে দেল মিশাও।

তবেই তোমাদের মুর্দা দেল জিন্দা হইয়া তথায় আল্লাহ আল্লাহ জেকেরের পায়দা হইবে এবং আল্লাহতাআয়ার তাজাল্লী দ্বারা দেল রশন হইবে।

যেমন ইলেকট্টিক কারেন্ট মূল স্রোতের সঙ্গে কানেশন লাগাইয়া যেখানে বাল্ব ফিট করনা কেন,সুইচ টিপ দিলেই বাল্ব জলিয়া উঠিবে।

সেইরূপ পীরের পাক দেলের সহিত মুরিদের দেল মিশাইলে মুর্শিদে কামেলের পাক তাওয়াজ্জুহতে মুরিদের মাথার চান্দি হইতে পায়ের তলা পর্যন্ত কোটি কোটি লতিফা আল্লাহ্‌র জেকেরে পূর্ণ হইয়া মাতোয়ারা হইবে।

দেল আল্লাহ্‌র দিকে ঘুরিয়া যাইবে, যাহাকে “সুলতানুল আজকার” বলা হয়। এই অপূর্ব নেয়ামত পীরে কামেলের পাক তাওয়াজ্জু ছাড়া সম্ভব নয়।

তাই হযরত শেখ সাদী(রঃ) বলেনঃ

“জাগ্রত পরান যার মরে না সে জন,
দৈহিক মরন তার নহেরে মরণ।
শত শত মুর্দা দেল মাটির উপরে,
তার চাইতে অধিক ভাল যদিও কবরে।

অর্থাৎ”তুমি একটি লতিফা জিন্দা করিয়া কবরে শুইয়া থাক,সমস্ত পৃথিবীর মুর্দা দেলওয়ালা লোকের চাইতে কবরেই তমার অধিক শান্তি হইবে।

তাই মহাকবি হাফেজ বলিয়াছেনঃ “ওগো দুনিয়ার মানুষ! তোমরা যদি আমার পীরকে বাধ্য করিয়া দিতে পার,তাহা হইলে আমি তোমাদেরকে সমরখন্দ বোখারার সিংহাসন বিলাইয়া দিব।

তিনি আপন পিরকে এত ভালবাসিতেন যে, পৃথিবির সর্ব শ্রেষ্ঠ সিংহাসন সমরখন্দ বোখারার সিংহাসনও তাঁহার পীরের প্রতি ভালবাসার কাছে রুচ্ছ মনে হইয়াছে।

তাই আশেক সকল বলিয়াছেনঃ “অতি ভাগ্যের জোরে মুর্শিদের বোল”। কামেল পীরের সান্নিধ্য লাভ করা অতি ভাগ্যের জোরেই সম্ভব হয়। পীরে কামেলের তাওয়াজ্জু ছাড়া কেহই আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য অন্য কোন উপায়ে অর্জন করিতে পারেন নাই।

তাই পারস্যের মহাকবি বলেনঃ “হাফেজ! তুমি যত বড়ই জ্ঞানী-গুনী, বুদ্ধিমান, সাইন্টিস্ট, বিজ্ঞানি হও না কেন, তমার পীরের কাছে তুমি কিছুই নও।

যদি দুর্বিপাকের তুফান হইতে বাঁচিতে চাও, তবে পীরের সংগকে “নুহের তরী” মনে করিয়া শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে যাহা তমার সকল ভিত্তিকে ভাঙ্গিয়া মেসমার করিয়া ফেলিবে।

তাই সমস্ত মুরিদগণকে জানানো জাইতেছে যে, যদি আখেরী জামানার বালা হইতে বাঁচিতে চাও, দুশমনের হাত হইতে যদি বাঁচিতে চাও, কঠিন ব্যাধি হইতে যদি বাঁচিতে চাও, আল্লাহতায়ালার গজব হইতে যদি বাঁচিতে চাও, তবে জামানার শ্রেষ্ঠ আরেফ খাজাবাবা হযরত এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের পাক দেলের দিকে দেলকে মুতাওয়াজ্জুহ করিয়া সদা সর্বদা খেয়াল করিতে থাক, আনোয়ারে জেকেরে এলাহিয়ার ফয়েজ আল্লাহ তায়ালার কুওয়াত, লজ্জত, মহব্বতের সঙ্গে ভরিয়া, মুর্দা-দেল চির জিন্দা হইয়া, এসমে জাত আল্লাহ্‌– আল্লাহ—আল্লাহ—জেকেরে লতিফায় কালবে জারি হতেছে।

ইহাই বর্তমান জামানার গজব হইতে বাঁচার উত্তম উপায়। হর নিঃশ্বাসে খেয়াল কালবে ডুবাইয়া রাখ। দমে দমে আল্লাহকে স্মরণ কর।

তবেই আল্লাহতায়ালার রহমত তোমাদের উপর বর্ষিবে। সকল বিপদ-আপদ,বালা-মুছিবত ও তকদীরের বুরা-ঈ হইতে বাঁচিতে পারিবে।