‘জান্নাতে মৃত্যু নাই’ —এই কথাটির গভীর আধ্যাত্মিকতা।
ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি—‘জান্নাতে মৃত্যু নাই।’ এই গুপ্ত কথাটির আধ্যাত্মিকতা নিয়ে কিছু আলোচনা—
যদি জন্ম আর মৃত্যুর চক্রের মধ্যে থাকি তাহলে বুঝতে হবে আপনি-আমি এখন জাহান্নামেই আছি, যেহুতু এখনও আত্মার মুক্তিলাভ করেনি। জীবের মৃত্যু না হলে কেহই জান্নাতে যেতে পারবেনা। এজন্য মরার আগে মরতে হবে, অর্থ্যাৎ প্রকৃত মৃত্যুলাভ করতে হবে।
(জীবের মৃত্যু বলতে এখানে খাসলতকে বোঝানো হয়েছে, আর জান্নাত বলতে মায়া ও রিপুর বন্ধন মুক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে)।
দেহের সহিত আত্মা আলাদা হওয়া মানে মৃত্যু নয়। মরে যদি বারবার ফিরে আসি (অর্থ্যাৎ জন্ম মৃত্যুর চক্রে পড়ে থাকি) তবে এভাবেই আমাদেরকে জন্ম আর মৃত্যুর চক্রে পড়ে ঘুরে-ফিরে আবার আসতে হবে। একবারে মরে যাওয়া বা আত্মার মুক্তিলাভ করা মানেই হচ্ছে প্রকৃত মৃত্যু। আর প্রকৃত মৃত্যু না হলে কাহারোই মুক্তিলাভ হবেনা।
আরেকটু সহজ করে বলতে গেলে আত্মার মুক্তিলাভ বলতে জড় জগত ছেড়ে ঐশ্বরিক জগতের এক মহান সত্তার সাথে বিলিন হওয়াকে বোঝায়। মহান সত্তা মুক্ত, তার সাথে বিলিন হতে হলে অবশ্যই আমাকেও মুক্ত হতে হবে অর্থাৎ তাহার সিফাত বা গুন আমাকেও অর্জন করতে হবে।
সুতরাং পরমাত্মাকে জাগাতে হলে জীব আত্মার মৃত্যু ঘটাতে হবে। (আবারও বলি, এখানে মৃত্যু বলতে খাসলতের মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে), অর্থ্যাৎ জীবআত্মার নেগেটিভ খাসলতকে পজিটিভে কনভার্ট করতে হবে। প্রকৃত অর্থে ইহাকেই জীব ও পরমের মিলন বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় ইহাকেই মুসলমান বা আত্মসমর্পণকারী বলে।
মনে রাখা জরুরী, জীবাত্মাকে কনভার্ট করে নিজের বশে না আনা অব্দি পরমের সাথে মিলন ঘটানো সম্ভব না। (এখানে নিজ বলতে কেবল আমার ভিতরের পরমাত্মাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে)
সুতরাং, পরমের সাথে জীবের মিলন ঘটাতে হলে জীবের খাসলতকে আগে মৃত্যু ঘটাতে হবে। জীবের খাসলতকে মৃত্যু ঘটাতে পারলে কেবল তখনই পরমের সঙ্গে জীবের মিলন ঘটবে (অর্থাৎ, দুইটি আত্মার খাসলত একত্রিত হয়ে একটি মহান সত্তায় পরিনত হলো)।
আরেকটু খোলাশা করে বলতে হচ্ছে— জীবাত্মার স্বভাব হচ্ছে ষড়রিপুর দাসত্ব করা, আর পরমাত্মার স্বভাব হচ্ছে একটি পবিত্র সত্তা (বা আত্মার স্বরুপের সাথে মিলে যাওয়া)।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি বলেছেনঃ— ”তুমি যদি খোদার মুখ দেখতে চাও তাহলে আমার চেহারার দিকে তাকাও।”
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির পীর, খাজা ওসমান হারুনী বলেছেনঃ— “যখন তুমি সম্পূর্ণ ফানা হয়ে যেতে পারবে তখন ইচ্ছা হয় বলো তুমি আল্লাহ অথবা তিনি আল্লাহ একই কথা।”
কোরানে নির্দেশ আছে আমানত রক্ষা করার কথা। আর এই আমানতই হচ্ছে পরমসত্বার শিফাত বা গুন, যাহা আমাদের কলবে আমানত হিসেবে দেওয়া হয়েছিলো। এই আমানত রক্ষা না করে তাহার নিকট কেউই যেতে পারেনা, অর্থাৎ বারবার জন্ম ও মৃত্যু চক্রে তাকে ঘুরতে হয়।
শেষকথাঃ আত্মা কখনও অপবিত্র হয়না, অপবিত্র হয় কেবল খাসলত। আত্মারও মৃত্যুও ঘটেনা, মৃত্যু ঘটে কেবল খাসলতেরই।
লেখা: Nishat Wahid