বিশ্বজাকের মঞ্জিল — আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য নিদর্শন।
আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য নিদর্শন হচ্ছে—বিশ্বজাকের মঞ্জিল (আটরশি পাক দরবার শরিফ)। জীবনে একবার হলেও এই দরবারে এসে ঘুরে যাবেন। দূর থেকে যারা আসবেন চেষ্টা করবেন সোমবার দিনশেষ রাত্র দরবারে কাটাবেন। তাছাড়াও প্রতিদিনই বিশ্বজাকের মঞ্জিলে রাত-দিন অবিরাম ধারায় চলতে থাকে তরিকতের কর্ম, আমল ও খেদমত। প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে শুরু হয়ে—পরেরদিন রাত ১০টা পর্যন্ত একাধারে চলতে থাকে তরিকতের আমল, ধ্যান, মোরাকাবা, ওজিফা-কালাম, কিছুক্ষন পরপর মিলাদ-কিয়াম, জিকির ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি চলে অন্যান্য তাসাউফের আমল। এখানে থাকা, খাওয়া, ঘুম ও নিরপত্তার জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোনো ঘোষিত তারিখ হইতে অনুষ্ঠিত হয় ৪দিন ব্যাপি মহাপবিত্র বিশ্ব উরস শরীফ। বাংলাদেশসহ বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি লোক একত্রে সমবেত হয় এই উরসে।
রয়েছে ৫২টি ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে রয়েছে আলাদা আলাদা কর্মী। এখানে আসলে সবাই প্রতিযোগিতা করে গোলামী ও খেদমত করে থাকে। কে কার আগে কাজ সম্পন্ন করবে তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। আর এইদপ্তরে কেউ খেদমতে অলসতা ও ফাঁকিবাজি করেনা, কেননা আত্মিক শান্তি যাহাতে মিলে তার ভাগ কেউই দিতে চাইবে না।
দরবারের কোনো প্রোগ্রাম এবং দরবার কতৃক যেকোনো হুকুম পাওয়া মাত্রই ভক্তগন কাফেলা করে দলে দলে ছুটে আসে দরবারে। প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও বিভাগে রয়েছে দায়িত্বরত কর্মীপ্রধান ও সভাপতি। যাদের নেত্রীত্বে বা ডাকে ভক্তগন একত্রিত হয়ে একযোগে ছুটে আসে দরবারে। একেকটি ডিপার্টমেন্টে সিডিউল অনুসারে সারা বছরব্যাপী চলে নিরলস খেদমত ও গোলামী।
বিশ্বজাকের মঞ্জিল (আটরশি পাক দরবার শরীফ), এটি একটি পরিপূর্ণ আদব ও কঠর নিয়মের দরবার। এখানে সবাই খালি পায়ে চলাফেরা করে৷ এমনকি সবাইকে মাটিতে বসেই খাবার খেতে হয়। দরবারের এড়িয়ার মধ্যে কেউ কফ বা থুথুও ফেলে না।
মাজার শরিফে প্রবেশকালে সবাই ওযুকরে মিসকিন হালতে বিনয় ও ভক্তি নিয়ে নতশিরে অতি আদবের সহিত নামাজের কায়দায় বসে বা দাড়িয়ে জেয়ারত করে থাকে। এছাড়াও মাজার শরিফের এড়িয়া ও মাজার শরিফ থেকে প্রস্থানকালে সকলকে আদবের সহিত মাজার শরিফকে সামনে মুখী করে পিছন দিকে উল্টোভাবে হেটে ফিরে আসতে হয়।

এই দরবারে কোটি কোটি মানুষের সমাগম হয় অথচ কোনো চেঁচামেচি, হাউকাউ, গ্যাঞ্জাম ও হাতাহাতির মতো কোন ঘটনা ঘটেনা, এমনকি এখানে উচ্চস্বরে কেউ একটা কথাও বলেনা।
এছাড়াও এই দরবারে ২০টাকার একটি টিকেট নিয়ে ২-৩ বেলা মাংস, সবজী ও ডাল দিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়া যায়। কোনো অসহায় ব্যক্তির কাছে টাকা বা টিকেট না থাকলে তাকেও খাবার দেওয়া হয়।
হিন্দুধর্মের ভক্ত ও অনুসারীদের জন্য রয়েছে বিশাল “হিন্দু ক্যাম্প”। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে থাকার সু-ব্যবস্থা, আলাদা ইবাদতখানা ও আলাদা খাবারের ব্যবস্থা।

দরবারের খাবারের মাঠে গিয়ে খাবারের জন্য সবাই শৃংখলভাবে অতি আদবের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিয়ে খায়। নেই ধাক্কাধাক্কি, নেই পাল্লাপাল্লি, নেই কোনো অনিয়ম। খাবার শেষ করে সকলে নিজ দায়িত্বে খাবারের বাসন ধুয়ে নির্দিষ্ট স্থানে আদবের সাথে জমা দিয়ে যায়।
রয়েছে বিশাল বড় আলিয়া মাদ্রাসা ও হোস্টেল। বহু অনাথ ও এতিম শিশুদের এখানে বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আরো আছে বিশাল কয়েকটি খেলার মাঠ। জরুরি হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য আছে দুইটি বিশাল হেলিপোর্ট।

রয়েছে তিনশত (৩০০) সজ্জা বিশিষ্ট “বিশ্বজাকের মঞ্জিল হসপিটাল”, এখানে বিনা খরচে অসহায়ের চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও মানবিকভাবে সকলবর্ণের মানুষকে স্বল্প খরচে উন্মুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এবং দরবারে কোনো প্রোগ্রাম হলে সেবামূলকভাবে দরবার কতৃক সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রোগীকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট ও কোর্সসহ হোমিও ঔষধ প্রদান করা হয়।

আরো অনেক বিশেষত্ব ও স্থাপনা রয়েছে যা মুখে বলা বা লেখা সম্ভব নয়। তাই জীবনে একবার হলেও বিশ্বজাকের মঞ্জিলে এসে ঘুরে যাবেন।
লোকেশন: বিশ্বজাকের মঞ্জিল (আটরশি পাক দরবার শরিফ), থানা: সদরপুর, জেলা: ফরিদপুর।
এই দরবারের পীর ও জাকের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হলেন— (শাহসূফী বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী রহঃ)। তিনি আটরশির পীর হিসেবে বিশেষ পরিচিত।
বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত হইতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে কিভাবে আসবেন জানতে এখানে প্রশ্ন করুন।
প্রতিবেদন: Nishat Wahid