অন্তরের শক্তি

অন্তরের শক্তি

​আমরা যা কিছু করি, তার সবকিছুর উৎস হলো চিন্তা। মানুষের জীবন আসলে তার ভেতরের চিন্তাজগতের একটি স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। আমাদের নিয়তি কোনো বাইরের শক্তির দ্বারা নির্ধারিত নয়, বরং তা আমরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত তৈরি করে চলেছি আমাদের মনের গভীরে। বাইরের জগতে যা কিছু দৃশ্যমান, তা কেবল সেই চিন্তারই একটি দেরিতে আসা রূপ। আমরা কোনো ব্যক্তির চরিত্র বিচার করি তার কাজ দেখে, কিন্তু সেই কাজের মূল প্রেরণা আসে তার চিন্তা থেকে।

​চিন্তার এই ক্ষমতা একটি দ্বিধারী তলোয়ারের মতো। এক দিকে যেমন এটি আমাদের সর্বোচ্চ সৃষ্টি, আনন্দ এবং মুক্তির কারণ; অন্য দিকে তেমনই এটি ভয়, উদ্বেগ, ঈর্ষা এবং আত্ম-ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের শৃঙ্খল তৈরি করে। আমাদের মনের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে যে অদৃশ্য সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়—তা সে খুব ভোরে বিছানা ছাড়ার জন্য হোক বা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য—এই সবকিছুর নির্দেশক হলো আমাদেরই চিন্তা। আমরা কখন অশান্তির কবলে পড়ব, আর কখন শান্তি লাভ করব, তা নির্ভর করে আমরা কোন চিন্তাকে আমাদের মনের আসনে বসতে দিচ্ছি তার ওপর।

​প্রতিটি সৃষ্টির মূলে চিন্তার কাঠামো

এই পৃথিবীতে যত স্থাপনা, আবিষ্কার বা শিল্পকর্ম রয়েছে, তার কোনোটিই চিন্তা ছাড়া প্রথমে বাস্তব রূপ পায়নি। প্রতিটি বস্তু বাস্তবে আসার আগে তা তার স্রষ্টার মনে একটি নিখুঁত কাঠামো হিসেবে জন্ম নিয়েছে। যখন একজন স্থপতি একটি আকাশচুম্বী ভবন তৈরি করার কথা ভাবেন, তখন সেই ভবনের উচ্চতা, নকশা ও সামগ্রিক রূপ প্রথমে তার চিন্তাজগতে সম্পূর্ণতা লাভ করে। এই মানসিক নীলনকশা যত স্পষ্ট হয়, বাস্তব নির্মাণ ততই দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পাদিত হয়। যে কোনো লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে—প্রথমে লক্ষ্যকে মনের মধ্যে এমনভাবে “দেখতে” হবে যেন তা ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়েছে।

​ইচ্ছাকৃত চিন্তা ও তার নিয়ন্ত্রণ​

ইচ্ছানুযায়ী চিন্তা করার ক্ষমতা মানুষের এক বিশেষ যোগ্যতা। দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ মানুষই তাদের চিন্তার স্রোতকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিচালিত করতে পারে না; তারা কেবল বাইরের উদ্দীপকের দাস। হতাশা, ব্যর্থতা বা অভাবের দৃশ্য সহজে মানুষের মনে ঢুকে তার অভ্যন্তরীণ জগতকে দখল করে ফেলে। এই নেতিবাচকতাকে প্রতিহত করার একমাত্র উপায় হলো ইতিবাচক ও লক্ষ্যকেন্দ্রিক চিন্তা দিয়ে সেই স্থানটি পূরণ করা। বারবার এবং সচেতনভাবে পছন্দের চিন্তাকে মনে গেঁথে দিতে পারলে, তা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং অবচেতন মনকে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে বাধ্য করে।

​লক্ষ্যের প্রতি অবিচল আস্থা

​এই মহাশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন লক্ষ্য ছাড়া অন্য সকল অপ্রয়োজনীয় চিন্তা প্রত্যাহার করা। কোনো সন্দেহ, ভয় বা দ্বিধা যেন মনের মধ্যে দানা বাঁধতে না পারে—এই বিষয়ে কঠোর থাকতে হবে। এমনকি যে পরিবেশ বা সঙ্গ আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে, তা সযত্নে এড়িয়ে চলতে হবে। যখন আমরা আমাদের সমগ্র শক্তিকে একটি মাত্র লক্ষ্যে নিবদ্ধ করতে পারি, তখন আমাদের চিন্তা কেবল শক্তি নয়, বরং তা বস্তুতে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা লাভ করে। মানুষ যা বিশ্বাস করে, যা দৃঢ়ভাবে চিন্তা করে—তা হতে বা পেতে সে বাধ্য।

– ফাহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ