আমি ধর্মের বিরুদ্ধে নই বরং স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা ধর্মকে ব্যবহার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে।

আমি ধর্মের বিরুদ্ধে নই বরং স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা ধর্মকে ব্যবহার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে।

আমি ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলছিনা বরং আমি তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলছি যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে রোলার হিসেবে ব্যাবহার করে চলছেন। এতে আপনারা যদি আমাকে সমালোচক বলেন তবে আমি সমালোচক’ই এবং আমি তাদের সমালোচনা করবো’ই। ধর্ম মানে ধারণ করে রাখা তথা যাকে ধরে রাখা হয় তার নাম ধর্ম, ধর্মকে ধরে রাখলে তা অসীম কালের জন্য চলমান থাকবে, আর ধরে না রাখলে ধর্ম মুহূর্তে’ই অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই৷ ধর্ম হলো মতের প্রতিনিধি, আপনি ধর্মকে যে মতে গ্রহণ করবেন সে সেই মতের’ই প্রতিনিধিত্ব করবে।

যেমন ধর্ম নিয়ে ব্যাবসায়ীরা ধর্ম ব্যাবসা করেন, জুলুমবাজেরা ধর্মকে সামনে রেখে জুলুম করেন, আবার ভাববাদীরা ধর্মকে ব্যাবহার করে ভাবের আদান-প্রদান করেন, গালিবাজরা ধর্ম’কে সামনে রেখে গালাগালি করে থাকেন, আবার এদিকে বস্তুবাদীরা ধর্মকে ব্যাবহার করে বস্তু খণ্ডন করে থাকেন।

দেখা যায় ধর্মকে সবা’ই ব্যাবহার করেন কিন্তু কারো সাথে’ই কারো মিল নেই, ধর্ম এক তবে তা ব্যাবহারের উপর নির্ধারণ হয় আপনার ধর্ম কেমন। পরিশুদ্ধ মন থেকে ধর্মের উদয় হয়েছে এটা কারো ইচ্ছাতে উদয় হয়নি, এবং কেহ চাইলেও জোর করে ধর্মের উদয় করতে পারবেন না। যতক্ষণে না ব্যাক্তি ভাবের জগতে প্রবেশ করবেন ততক্ষণে সে ধর্মের স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন৷ চালাক মানুষেরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সব সময় ধর্মকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেন, আর তাঁরা ধর্মকে এজন্য’ই সামনে দাঁড় করিয়ে দেন যেন আমাদের মতন বোকা মানুষেরা তাদের চালাকিতে দ্বিমত পোষণ করতে না পারি।

বহুকাল থেকে’ই চালাক মানুষেরা আমাদের প্রতিনিধি সেজে বসে আসছেন এবং আমাদের উপর প্রভুত্ব করছেন, তাঁরা আমাদের সামনে সাদা মানুষ সেজেছেন এবং ধর্মকে সাথে নিয়ে আমাদের উপর সু-কৌশলে রোলার চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগ যুগ ধরে ওদের এ কর্মের জন্য কখনো’ই ধর্ম দায়ী নয়, কারণ ধর্ম কেবল মতের প্রতিনিধি, তাই আমাদের’কে অবশ্য’ই ধর্মের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে ঐ সমস্ত চালাক মানুষদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং বুঝতে হবে ধর্ম ক্ষতিকারক নয় বরং চালাক মানুষেরা’ই ধর্মের ক্ষতিকারক।

চালাক মানুষেরা সেই সৃষ্টি লগ্ন থেকে’ই নিজেদেরকে সাদা মানুষ সাজিয়েছেন আর আমাদেরকে কালো মানুষ বানিয়ে আমাদের উপর জুলুম করে গেছেন ধর্ম রীতি বলে৷ পৃথিবীতে ধর্মকে ব্যাক্তি স্বার্থে ব্যাবহার করা শুরু হয়েছে মূলত দাসত্বের সমাজ চালু হওয়ার পর থেকে’ই। মানুষ যখন দুই ভাগে বিভক্তি হয়ে গেলো ঠিক তখন’ই শুরু হলো ধর্ম দোহাইয়ে বর্বরতা। মানুষ দুই ভাগে বিভক্তি হয়ে এক ভাগ হয়ে গেলো দাস সমাজ, আর এক ভাগ হয়ে গেলো মালিক সমাজ৷ স্বাভাবিক ভাবে’ই দাস সমাজ থেকে হাজার গুণ উচ্চতর করে নেয়া হয়েছিল মালিক সমাজকে।

তখন সমগ্র পৃথিবীকে’ই নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলেন মালিক সমাজ তথা মনিব সমাজ। আর সে সুযোগ মালিক সমাজ ধর্মকে সামনে নিয়ে দাস সমাজের উপর রোলার চালানোর পন্থা চালু করেন এবং তাঁরা বলেন দাসেরা মনিবের বিপক্ষে গিয়ে চলা মহা পাপ, যা এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান। মনিব সমাজ ধর্মের আশকারা নিয়ে দিন দিন হয়ে ওঠেন মস্তবড় খাদক, ধর্মকে ব্যাবহার করে মনিবেরা দাসের সম্পদ কব্জা করেন এবং দাসের স্ত্রী-মেয়েদেরকেও তাদের আয়ত্ত করে রাখেন।

এখনো দাসের উপর প্রভুত্ব চলে তবে তার ডিজিটাল ভার্শন হয়েছে বলে সহজে কেহ বুঝে উঠতে পারেনা। দাস সমাজের লোকেরা মালিক সমাজের কথাকে ঈশ্বরের আদেশের মতন করে পালন করেন, আর মালিক সমাজ দাস সমাজের ভাগ্য বিধাতা সেজে দাস সমাজের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মালিক সমাজ হয়ে গেলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং তাদের আদেশ হয়ে গেলো ঈশ্বরের আদেশ। এজন্য’ই দেখবেন ঈশ্বরের সকল পরিক্ষা দাসের উপর, আর মনিব সমাজের জন্য কোনো পরিক্ষা ঈশ্বরের কাছে নেই বললে’ই চলে৷ দাস-মালিক সমাজ এখনো বিদ্যমান তবে এটা এখন আধুনিক হয়েছে, এই দাস মালিক প্রথা চূর্ণ করে দিয়ে ন্যায্যতার প্রথা চালু করতে হবে, যদি কিনা দাসেরা নিজেদের মুক্তি চায়।

সমাজে এখনো দেখা যায় যেকোনো অনুষ্টানে ধর্মগুরু বা নেতাদের খাবার আলাদা করে দেয়া হয়, ধর্ম গুরুদের প্লেটে হরেকরকম খাবার থাকলেও সাধারণ মানুষের বেলায় এক মুঠো ভাত জোটেনা এই বেহায়াপনা বন্ধ করতে হবে। এই দাস মনিবের প্রথা চূর্ণ করে দিতে হবে৷ অধীনস্থর উপর প্রভুত্ব করাকে উচিৎ জবাব দিয়ে দাস সমাজকে মুক্ত হতে হবে।

সবাই সবার ধর্মকে স্বাধীন ভাবে মুক্ত হয়ে পালন করতে চাইলে দাসত্বের স্বভাব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে, এবং মুক্ত করতে হবে নিজেদেরকে। ধার্মিকতার নামে যারা জুলুমবাজি ধাপ্পাবাজি করে তাদের সিদ্ধান্ত’ই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মনে করলে প্রকৃত ধার্মিক হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel