হোমপেজ আধ্যাত্মিক প্রশ্ন ও উত্তর আধ্যাত্মিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

আধ্যাত্মিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

571

আধ্যাত্মিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

৩৩.
শিষ্যঃ সাধনার এই স্তরগুলোর নাম কি প্রভু?

গুরুঃ ১.ফানাফিশ শায়েখ।, ২. ফানাফির রাসূল।, ৩. ফানা ফিল্লাহ্।, ৪.বাকা বিল্লাহ্।
আর সনাতন শাস্ত্রে এইটা ১.স্থূল, ২.প্রাবর্ত্ত, ৩.সাধক, ৪.সিদ্ধ (সিদ্ধি) বলা হয়ে থাকে।

৩৪.
শিষ্যঃ প্রভু! কৃপা করে এই স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে আমার মনের দ্বন্দ্ব নিরাশ করুন।

গুরুঃ তাহলে শুনো হে পার্থ!

ফানা ফিশ শাইখঃ ‘ফানা ফিশ শাইখ’ এর অর্থ হল পীরের মাঝে ফানা বা বিলন হওয়া। অর্থাৎ পীরের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। পীরের ইচ্ছায় ফানা, পীরের হুকুমে ফানা, পীরের জন্য ফানা, পীরের মাঝে ফানা হওয়াকেই ফানা ফিশ শাইখ বলে। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছাকে কুরবানী দেওয়া পীরের জন্য। এটাই সাধনার প্রথম স্তর।

ফানা ফির রাসূলঃ ইহার অর্থা রাসূলের মাঝে ফানা হওয়া। যখন ফানা ফিশ শাইখ এর স্তর পারি দিবে, তখন আপন পীরের ছুরতে রাসূলের নূরানী মূর্তি দেখতে পাবে। যে চেহারা এতো সুন্দর ও নূরময় হবে যে, মনে হবে লক্ষ কোটি নক্ষত্রের আলো তার পীরের মাঝ হতে বিচ্ছুরিত করতেছে সমস্ত দুনিয়াকে আলোকিত করে দিয়ে। ঐ নূরের আলোতে তখন ভক্তের দেহের সমস্ত মোকাম ও মঞ্জিল রাসূলের নূরে নূরাম্বীত হয়ে যাবে। এই স্তরে আসার পরই সাধক ওলীর দরজায় পৌঁছে যাবে। তখন সে ভাবে বিভুর হয়ে মুখ দিয়ে যদি কিছু বলে, তবে তা হয়ে যাবে, কিন্তু সর্ববস্থায় হবে না। তবে তখন থেকেই তাকে ওলী হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফানা ফিল্লাহ্ঃ ইহার অর্থ আল্লাহর মাঝে বিলিন বা ফানা হওয়া, আল্লাহতে মিশে যাওয়া। ফানা ফির রাসূল এর স্তর পার হওয়ার পরই সাধক এই স্তরে উপনিত হন। তখন তিনি কামেল ওলী হয়ে যান। তবে পূর্ন কামেলে মোকাম্মেল হন না। তাই তাদের আবারও জন্ম নিতে হয় পূর্ণতা লাভের জন্য। আর এসমস্ত ওলীগনই পরবর্তী জন্মে জন্মগত ভাবে মাদারজাত ওলী হয়ে জন্মগ্রহন করেন। তারা যখন কিছু বলে, তখন তা হয়ে যায়।

বাকা বিল্লাহ্ঃ ইহার অর্থ আল্লাহতে স্থায়ী ভাবে মিশে যাওয়া। এই স্তরেই সাধকের জন্ম-মৃত্যু বাড়ণ হয় এবং সে নির্বাণ লাভ করে। এই স্তরের ওলীদেরই কামেলে মোকাম্মেল বলা হয়। অর্থাৎ তারা স্থায়ী ভাবেই আল্লাহর সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। তখন তারা মুখে যখন যে অবস্থায় যা বলে, তাই হয়ে যায়। তখন তাদের মুখ আল্লাহর মুখ হয়ে যায়। তারা আল্লাহময় হয়ে যায়। এসমস্ত ওলীগনকেই গাউস কুতুব বলা হয়। ইনারা জন্মগত ভাবেই মাদার জাত ওলী হয়ে থাকেন। এই স্তরে গিয়েই মনসুর হেল্লাজ (রাঃ) বলেছিলেন “আনা আল হক্ব (আমিই সত্য বা আমিই খোদা)”।

৩৫.
শিষ্যঃ এক জনমেই কি বাকায় পৌছানো সম্ভব?

গুরুঃ এক জনমে সম্ভব নাও হতে পারে, লেগে যেতে পারে হাজার জনম।

৩৬.
শিষ্যঃ জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে আমার ধারনা খুবই কম, কৃপা করে যদি আমার মনের অন্ধকার দূর করতেন প্রভু।

গুরুঃ জন্মান্তরবাদ অর্থ হল এক জন্ম থেকে অন্য জনম। মৃত্যু বরনের পর আবার জন্ম গ্রহন করা, আবার জন্মের পর মৃত্যু বরন করা, এভাবে বারবার মৃত্যুর পর জন্ম এবং জন্মের পর মৃত্যু বরন করার উপর যে বিশ্বাস ও মতবাদ বা দর্শন রয়েছে, তাকেই জন্মান্তরবাদ বলে।

৩৭.
শিষ্যঃ জীব বার বার আসা যাওয়া কেন করে দয়াল?

গুরুঃ জীবের এই আসা যাওয়ার কারন হল তার বাসনা ও কর্ম। বাসনা পূরন ও কর্মের ফল ভোগ করার জন্যেই জীব বার বার বিভিন্ন যোনীতে আসা যাওয়া করে। কর্ম ভালও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। ভাল কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়, আবার খারাপ কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়।

৩৮.
শিষ্যঃ মৃত্যু কি তাহলে?

গুরুঃ মৃত্যু হল জরাজীর্ণ দেহ হতে অন্য একটি দেহে আত্মার স্থানান্তর।

৩৯.
শিষ্যঃ কবর কি?

গুরুঃ জঠর ব্যদনা খুব ভয়াবহ, যেটাকে গোড় আযাব বা কবরের আযাব বলা হয়। এই গোড় আযাব থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, যাদের জন্মগ্রহন করতে হয়েছে। যেটা হল মাতৃগর্ভের নয় মাস দশ দিন। মাতৃ গর্ভটাই কবর। কেউ কেউ দেহকেই কবর বলেছেন, সেটা তাদের মত, আমাদের মতে মাতৃগর্ভই কবর। (আমি আমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অন্যদের মতকে অবজ্ঞা করতে চাচ্ছি না)।

৪০.
শিষ্যঃ তাহলে হাশর কি?

চলবে….

» পরবর্তী পর্ব শুলো দেখুন

লেখাঃ DM Rahat