মহর্ষি মনমোহন দত্ত প্রণীত অমিয় ছন্দ-বাণী সমাহার।

মহর্ষি মনমোহন দত্ত প্রণীত অমিয় ছন্দ-বাণী সমাহার।

মনমোহন দত্ত ছিলেন একজন মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল, সমাজ সংস্কারক এবং গীতিকার, সুরকার এবং অনেক আধ্যাত্মিক গানের গায়ক। মনমোহন দত্তের লেখা গানগুলি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের বড় ভাই আফতাব উদ্দিন সুর করেছিলেন।

“পায় ধরে কই গুরু ভজ যাইও না মন কুপথে, সোজা রাস্তায় চলরে ভাই ভবের বোঝা লয়ে মাথে।”

“বিবেক বুদ্ধি হারাইয়ে হাত বাড়ায়ে ডাকিস কারে, লাগ পাবি না অনেক দূরে। যার জন্য তোর ডাকাডাকি, তার সনে তোর মাখামাখি, খুলে দেখ তোর জ্ঞানের আঁখি বাকির ঘরে ওশল পড়ে।”

“খুলে দাও শান্তির দুয়ার। কাছে বসে থাক তুমি সর্বদা আমার। করাঘাতে হাতে বেদনা প্রচুর, ডেকে ডেকে বুকে বেজে গেছে সুর, নিশি ভোর ভোর, হ্যারে চিত্তচোর, বড়ই কঠোর অন্তর তোমার।”

“অদ্বৈত অদ্বৈত বিশিষ্ট অদ্বৈত, তোমারে কে জানে, করে মতদ্বৈত। যা আছে জগতে বৈধ কি অবৈধ, কর্তাকর্ম তুমি তোমারি বিধানে। অখণ্ড অসীম, পরম অব্যয়, খণ্ডজ্ঞানে লণ্ডভণ্ড সমুদয়, একেরি কাণ্ড বিশ্ব ব্রহ্ম অণ্ড, প্রকাণ্ডেতে খণ্ড ভাবে ক্ষুদ্র জ্ঞানে।”

“বারে বারে চাই যে আমি, মনটি আমার দিতে তোরে। হায় কি করি, দিতে নারি, পড়েছি এক বিষম ফেরে।”

“আমি তোমার পোষাপাখি ওহে দয়াময়। তুমি আমার মন মহাজন, সদয় নিদয়। আমি তোমার পোষাপাখি, যা শিখাও তাই শিখি। যা করাও তা করি আমি, আমি আমি কেহ নয়। সংসার পিঞ্জরে তুমি,— রেখেছ, রয়েছি আমি; সুখ ভোগে আশ মিটে না, ছুটিতে চাহে হৃদয়। আমারে লইয়া তুমি, খেলা কর দিবা যামী; হাসাইলে হাসি আমি, কান্দাইলে কান্দিতে হয়। চালাইলে চলি আমি, বলাইলে বলি আমি; তুমি আমি আমি তুমি, দেহ আত্মপরিচয়।”

“কও দেখি মন আমার কাছে, তুমি হিন্দু না মুসলমান, আল্লা না হরি তোর ঠাকুর বটেরে, তুই কে তোর মনিব কেরে কররে ইনসান। তুমি আমি আদি যত কায়া আছে, কে বিরাজে বল এ সব কায়ার মাঝে। প্রাণে প্রাণে টানে টানে জাত বিচার নাই দেখি প্রমাণ।

“তুমি না জানাইলে তোমারে কে চিনে আর কে জানে, ষড়-দরশনে না পায় দরশন, অন্ত না পায় বেদ-পুরাণে। অবধি হইতে পর্যন্ত পর্যন্ত, তব মহিমার নাহি আছে অন্ত, অনাদি অনন্ত, সর্ব পরিব্যাপ্ত, জুড়িয়ে রয়েছ ক্ষিতি বিমানে। বহুরূপী ভাবে স্বভাব তোমার, ভাবিয়ে কে পাবে অকূলে কিনার। তুমি হবে যার, হৃদয়ে তাহার, জানাইয়ে দাও আপনি আপনে। কৃপাহি কেবল, সত্য এ ভুবনে।”

“দেখে আমি তাজ্জব হয়েছি। তোমার কর্ম কেবল আর কিছু নয়, আঁকা আঁকি মুছামুছি। শিশুর মতো কলম লয়ে, নানা রঙের কালি দিয়ে, এ ব্রহ্মাণ্ড কাগজ পেয়ে লেখতেছো সব ভোজের বাজী।”

“যেদিন আমার ভব লীলার হবে অবসান, তার কিছু পূর্বে, মায়ামুক্ত করে দিও ভগবান। এ ভিক্ষা তোমার কাছে, এ দাস কাতরে যাচে, টানাটানি করে যেন, ছিঁড়ে নাহি যায় প্রাণ। যেদিন আমার ভবলীলার হবে অবসান।”

“কে যেন আমারে, অতি সাধ করে, হাত দুখানা ধরে কাছে টেনে নিতে চায়। মন মাঝে যেন কার ডাক শুনা যায়।… অবহেলা করি দৌঁড়াইয়া যাই, চৌদিকে নেহারি, কিছু নাহি পাই, ফিরে এসে কাছে, দেখি হৃদিমাঝে দাঁড়াইয়া আছে আমার অপেক্ষায়।”

“অমূল্য ধন গুরুর চরণ, কাঙালে লইয়া খেলায়, কইবো কি তার প্রেমের কথা, কইতে না জুয়ায়। রাজা-বাদশা পায়না তারে, সামান্য ধনের বিকারে, কাঙাল সে ধন তুচ্ছ করে- সদানন্দে দিন কাটায়।”

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel