হোমপেজ আত্ম সচেতনতা আমি কি ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে মতামত দিতে পারি?

আমি কি ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে মতামত দিতে পারি?

আমি কি ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে মতামত দিতে পারি?

আমি কি ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে মতামত দিতে পারি? আমি কি ধর্মের বিষয়বস্তুগুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারি?আমিত স্কুল কলেজে পড়ালেখা করি। আমি ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না। অভিজ্ঞরা এই ব্যাপারে যেই মতামত দেয় আমি সেটারই অনুসরণ করার চেষ্টা করি।”

আমাদের সমাজের গুরু ভাগ ধার্মিকদের ধারণা এইরকম। ওনারা ভেবে থাকেন ধর্ম সম্পর্কে মতামত দেওয়ার তাদের কোনো অধিকার নেই বা তারা এই বিষয়ে কোনো ধারণা রাখে না। তারপর তারা ব্যাক্তিগত ভাবে যাকে অভিজ্ঞ মনে করে এবং শতভাগ বিশ্বাস করার মানসিকতা অনুভব করে তাদের বা তাদেরকে অনুসরণ শুরু করে। একসময় এই অনুকরণকেই তারা প্রকৃত ধর্ম বলে মেনে নেয়। যদিওবা এই ব্যাপারে তাদের নিজস্ব কোনো ধারণা নেই। কিন্তু তারা এর বাইরে কোনো কিছু কল্পনা করতে পারে না। এটাকে বলে জ্ঞানের আবদ্ধতা। একজন মূর্খ ব্যাক্তি হতে একজন আবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী ব্যাক্তি বেশি ভয়ংকর। আপনি তার গন্ডির বাইরে কোনো কিছুই তার সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন না। এতে সে উত্তেজিত হয়ে যাবে।

এইভাবে তৈরি হচ্ছে অসহনশীল উগ্রবাদী একটি সমাজ ব্যাবস্থা। আমরা যদি একটু সচেতন না হই তবে এই আবদ্ধ অন্ধকারাচ্ছন্নতায় আলোহীন হয়ে যাবে আমাদের সমাজ। তাই আমাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত এবং এই একঘেয়েমি চিন্তা থেকে বের হয়ে সার্বজনীন মুক্ত চিন্তাশীল হওয়া উচিত। তবেই একটা পন্থা পাওয়া যেতে পারে। এটা থেকে বের হওয়ার একটাই রাস্তা সবার আগে আপনি যা শুনছেন ও মানছেন তা কতটুকু সঠিক এইটুকু বুঝার যোগ্যতা আর্জন করুন। এবং নতুন কিছু শুনলে তা সঠিক না বেঠিক তা নির্বাচন করার ক্ষমতা আর্জন করুন। আর এটাও মথায় রাখতে হবে যে আপনার বা আমার শুনা ও জানা বা সঠিক বা বেঠিক মানাতে কিছুই আশে যায় না। সঠিক সঠিকই থাকে এবং বেঠিক বেঠিকই থাকে। তাই প্রকৃতপক্ষে সত্য উপলব্ধি করতে আলাদা একটা মাকামের প্রয়োজন। আপনাকে সহনশীল ও পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। আমার জানা ও মানা পৃথিবীর একমাত্র সঠিক পন্থা এমনটা ভাবা একটা আবদ্ধতা। আর জ্ঞানের এই আবদ্ধতাকে অতিক্রম না করতে পারলে সার্বজনীন জ্ঞান বা সর্বব্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।আর যারা নতুন ভাবে আধ্যাত্মিকতায় প্রবেশ করতে চাচ্ছেন তাদের অবশ্যই এই আবদ্ধতার গন্ডি থেকে বাইরে থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে আধ্যাত্মিকতার রাস্তায় আপনি কারোর কোনো ব্যাক্তিগত উপলব্ধি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে কিছুই উপলব্ধি করতে পারবেন না। চিন্তা,ভাবনা, দর্শন, উপলব্ধি ও বোধ এইগুলো একান্তই ব্যাক্তি কেন্দ্রীক।এই বিষয়গুলো একজনেরটা আরেকজনের কাছে বোধগম্য নয়।ধরুন “আপনার গালা কাটা গেছে ” এই বিষয় নিয়ে আমি সারাদিন ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেও কিছুই উপলব্ধি করতে পারব না। হয়ত এই বিষয়ে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করতে পারব কিন্তু গালা কাটার সময় আপনার যেই উপলব্ধি হয়েছে সেটা আমি উপলব্ধি কোনো ভাবেই করতে পারব না।

আমার এই ব্যাপারে উপলব্ধি করতে হলে আমার গলাও কাটতে হবে। তেমনই ভাবে আধ্যাত্মিকতায়ও বোধ একান্তই আপনার নিজের। তবে এই রাস্তায় হাঁটার জন্য আপনার দরকার এই রাস্তা অতিক্রম করেছেন এবং এটা অতিক্রম করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন এমন একজন পথপ্রদর্শকের। যাকে আমরা গুরু বলে থাকি। গুরু বা পথপ্রদর্শক আপনার উপর তার উপলব্ধি কোনো ভাবেই চাপিয়ে দিবেন না।তিনি আপনার কাছে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করবেন এবং প্রক্রিয়া ব্যাক্ত করে আপনাকে প্রেশিত করবেন যাতে আপনি আপনার রাস্তায় অগ্রসর হতে পারেন। আপনাকেই আপনার রাস্তায় অগ্রসর হতে হবে এবং এরজন্য যা যা করনীয় সবকিছুই গুরু আপনাকে ব্যাক্ত করবেন। আমাদের সমাজে ধর্মীয় বিষয়গুলো এমন ভাবে প্রচারিত হয়েছে যে এটা সুধু বাইরের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে পারে। কিন্তু ঈমান বা বিশ্বাস তথা মুমিন হওয়া সম্পূর্ণ ভিতরের বিষয়। দাড়ি টুপি রাখা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা হজ্জ, যাকাত পুজা, আর্চনা ইত্যাদি ইত্যাদি ধর্মের যত আনুষ্ঠানিকতা আছে সব ঠিক ঠাক পালন করাকেই ধর্মচর্চা বলে না। এগুলোর দরকার নাই বা করতে হবে না এমনটাও নয়। কিন্তু হাকিকত তথা ভিতর ভাব বুঝতে হবে। নইলে এগুলো সুধুই আনুষ্ঠানিকতা বলে গন্য হবে।

সব আনুষ্ঠানিকতা ঠিকঠাক পালন করলাম আর এতেই আমার মুক্তি বিষয়টা এতটা দুধভাত না। আল্লাহর প্রত্তেকটা হুকুমের একটা উদ্দেশ্য আছে তথা হাকিকত আছে। তথা পৃথিবীর প্রত্তেকটা বিষয়ের দুইটা দিক রয়েছে। একটা প্রকাশ্য আরেকটা অভ্যন্তরিন। ইলম বা জ্ঞানেরও দুইটা দিক, ইলমে জাহের ও ইলমে বাতেন।ইলমে বাতেন বলতে গায়েবের খবর জানাকে বুঝায় না। আপনি আপনার নিজের অভ্যন্তরিন বিষয় সম্পর্কে কতটুকু জানেন, এর স্থায়িত্ব ও প্রয়োগ এগুলো ইলমে বাতেনের বিষয়বস্তু।আমাদের এই স্থুল দেহ বিভিন্ন জৈবিক চাহিদার মধ্যে আবদ্ধ। কিন্তু কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এটাকে অতিক্রম করতে পারি।

এই প্রক্রিয়াগুলোর ভিতরদিয়ে গিয়ে নিজের আবদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত সর্বব্যাপ্ত অখণ্ড আবস্থায় পৌঁছানোই হল একজন আধ্যাত্মিক ব্যাক্তির লক্ষ্য। অনন্তজ্ঞানের এই রাস্তাকেই আধ্যাত্মিক রাস্তা বলে। এখানে রয়েছে চিরমুক্তি ও অনন্ত আনন্দ। এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এখানে সুধু আপনাকে আশ্বস্ত করে শান্তনা দেওয়া হয় না। বরং আপনি চাইলেই এখানে বাস্তব উপলব্ধির চরম শিখরে অবস্থান করতে পারেন। সুতরাং যারা আগ্রহী তারা অগ্রসর হয়ে দেখতেই পারেন। সকলের সৎ যাত্রা সফল হওক।

Author: Emran Hassan Emon